image

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ইটভাটায় বিনষ্ট হচ্ছে বন, কাটা হচ্ছে পাহাড় ও চাষি জমির মাটি

image

মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে গড়ে উঠেছে অর্ধডজনাধিক ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে পুড়ানো হচ্ছে বনের জ¦ালানী কাঠ। কাটা হচ্ছে পাহাড় ও চাষি জমির মাটি। এ ছাড়া ব্যবহার হচ্ছে টিনের চিমনি। এখানে উড়ছে কলো ধোঁয়া ও অস্বাভাবিক ধুলাবালিু। আর কাগজ-পত্র বলে কিছুই নেই তাদের কাছে। শুধু আছে প্রভাব আর দাপট। ফলে দিন দিন দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কমছে চাষি জমি আর উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এসব অবগত হওয়ার পর প্রশাসন কোন ধরনের প্রদক্ষেপ গ্রহন করছে না। রহস্যময় বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিরব ভূমিকায় সাধারন মানুষ ক্ষুব্দ।

সীমান্ত এলাকা ঘুমধুমের জনবহুল এলাকার মাঝে ডজনাধিক ইটভাটার একটি গড়ে তোলা হয় ২৬৭ নম্বর ঘুমধুম মৌজার আজুখাইয়া গ্রামে। পাশেই রোহিঙ্গা কুতুপালং শিবির। একটি প্রভাবশালীচক্র ইটভাটাটি গড়ে তুলেন। 

স্থানীয়রা জানান, এ ইটভাটায় প্রকাশ্যে রাত-দিন পুড়ানো হচ্ছে জ্বালানী কাঠ। রোহিঙ্গাদের কমদামে কাজ করান মালিকরা। চারপাশে ধুলো আর কালো ধোঁয়ায় একাকার গ্রাম গুলো। টিনের চিমনী ব্যবহার করেই আইন ভঙ্গ শুরু করে চক্রটি। আর পাহাড় ও চাষের জমি কেটে সাবাড় করা মাটির স্তুপ রয়েছে বেশ। কাঠের স্তুপ তো আছেই।

জানা যায়, ইট ভাটার মালিকের একজন আবুল কালাম মেম্বার। তার ইটভাটা দেখভাল করেন রশিদ আহমদ নামের এক ব্যক্তি। ইটভাটার কোন ধরনের কাগজ পত্র নেই। ইটভাটার জন্যে রাখা বড়বড় কাঠের স্তুপের পাশাপাশি আবুল কালাম মেম্বার গড়ে তুলেন একটি করাত কল। যেখানে রয়েছে আশপাশের বনের শতশত ফুট কাঠ। একই স্থানে এভাবে দু’অবৈধ পরিবেশ ধ্বংশযজ্ঞের ঘটনা ঘটলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগ সহ সকলে রহস্যময় নিরবতায় আছেন। সচেতনরা বলছেন- সবাই ম্যানেজ। এ জন্যে জনর্স্বাথ তুচ্ছ হয়ে দাড়িয়েছে তাদের কাছে। প্রশাসনের লোকজন আসে আর যায়। মাঝে মধ্যে আই ওয়াশ করে। একই কায়দায় একই গ্রামে রয়েছে আরেকটি ইটভাটা।

এভাবে এই ইউনিয়ন ও এলাকায় গড়ে উঠে আরো বেশ কয়েকটি ইটভাটা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২৬৮ রেজু মৌজার আলী আহমদ কোম্পানী নামীয় আবু ছৈয়দের ইটভাটা। এই ইটভাটা ঘেষেই মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের জোন রয়েছে। এ ইটভাটা পরিচালনা আবু ছৈয়দের সহায়তায় রয়েছে আলী আহমদ কোম্পানীর এক ছেলে। ২৬৮ নম্বর রেজু মৌজার হিল্লুল বড়–য়া পলাশের নামীয় ইটভাটা কিনে নেয় শহিদুল হুদা। তিনি ২৬৮ একই মৌজার আসিফ মোহাম্মদ সাইফুদ্দীনের ইটভাটাটিও কিনে নেন চুক্তিতে। একই কায়দায় একই মৌজায় আরো বেশ ক’টি ইটভাটা রছেছে। যে গুলো গিলে খাচ্ছে পাশের বন-বনানী, খুড়ে খাচ্ছে চাষি জমি, নষ্ট করছে পরিবেশ-রাস্তাঘাট। আর এসব ইটভাাটার মালিকরা প্রশ্রয় দিচ্ছে রোহিঙ্গাদেরকে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবারীদের সাথে সখ্যতার অভিযোগও রয়েছে। তাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য তারা কাগজ-পত্র ছাড়াই এ ইট ভাটা করে যাচ্ছেন। কেউ আসলে তাদের ম্যানেজ করা হয়।

জানা যায়, সরকারের অনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠা এসব ইটভাটা দিনের পর দিন এতো ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছে প্রকাশ্যে, কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। তবে প্রশাসনের লোকজন এখানে আসে লোক দেখানো বকা-শকা, ভাংচুর, একটু আধটু ক্ষতিসাধন করে ফিরে যায় নিজ গন্তব্যে। আর প্রচার করার ব্যবস্থা করেন, যাতে বলা হয় ২/৩টি ইটভাটা গুটিয়ে দেয়া হয়েছে, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইত্যাদি। এ সময় কড়া হুকুম জারী করেন, ইটভাটা যেন বন্ধ রাখেন। এভাবে অভিযান চালানোর পর নিজ অফিসে ফিরে যাওয়ার পরপরই সবকিছু পূণ:বহাল হয়ে পড়ে এ সব ইটভাটার র্কমকান্ড। তখন লোকজন হাসে। প্রশাসনের সেই হুকুমের কী হলো! ঘুমধুমের ইটভাটার মালিকদের হাত কত লম্বা বলে ?

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, ভাই আমরা বাদ। ওরা প্রভাবশালী। তাদের হাত অনেক লম্বা। তাদের সর্ম্পকে তিনি কিছুই বলবেন না। পারলে সহযোগীতা নেন, করবো। সব অবৈধ। আইন না মানার কর্মকান্ড।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি জানান, ঘুমধুম সহ উপজেলা কোন ইটভাটারই বৈধ কাগজপত্র নেই। 
এবিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, তিনি শুনেছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘমুধুম সহ সবখানে এ অনিয়ম হচ্ছে। তিনি খোঁজ খবর নিয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন বান্দরবান অফিসকে, দ্রæত যেন ব্যবস্থা নেন। তিনি আরো জানান, পরিবেশ নষ্ট হোক কেউ চায় না।