image

ফটিকছড়ির যুগোত্তীর্ণ অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন রফিকুল আনোয়ার এমপি : ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

image

ফটিকছড়ির গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা মরহুম আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার এমপি’র ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী ২৫ অক্টোবর। দেখতে দেখতে অর্ধ যুগ হয়ে গেল রফিকুল আনোয়ার ফটিকছড়িবাসীকে ছেড়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন অনন্তহীন জগতে। রফিকুল আনোয়ার আমাদের মাঝে নেই তা কিছুতেই এখনো বিশ্বাস হয় না। সমগ্র উপজেলা জুড়ে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত কর্মকান্ডগুলো এখনো ফটিকছড়িবাসীকে কাদাঁয়। এটা কি মৃত্যু, না অন্য জীবন? মৃত্যুকে ছুঁয়ে যেন নতুন এক বিশাল ব্যাপ্তিতে জীবন লাভ করেছেন, আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার।

রফিকুল আনোয়ারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল একটি স্থানীয় ক্রিকেট খেলার ফাইনাল খেলায় ২০১০ সালে। তখন তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তারিখ মনে না থাকলেও দিনটি ছিল শুক্রবার। পাশ দিয়ে যাবার সময় সেখানে উপস্থিত আমার খুব কাছের এক বড় ভাই প্রথম আমাকে রফিকুল আনোয়ারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। দীর্ঘ সময় আমি ফটিকছড়িবাসীর এই প্রিয় নেতাকে অনেক কাছে থেকে দেখেছি। আমরা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা নানুপুর লায়লা-কবির কলেজ শাখার প্রথম ম্যাগাজিন "নবচেতনায়"তার বাণী নিতে গিয়ে বুঝেছি তিনি কত উদার একজন মানুষ। দূর্ভাগ্যের বিষয় আমরা তার বাণীটি দিতে পারিনি বরং তাকে স্মরণে এই ম্যাগাজিনটা  উৎসর্গ করতে হল কেননা তিনি গত হয়েছেন। অসুস্থ থাকাবস্থায় তিনি এই স্বাক্ষাতে অনেক কিছুই বলেছেন। তিনি অধির আগ্রহ নিয়ে বলেছেন "ভাইপুত আ্যঁই আইস্সুম ! অনুষ্ঠানর তারিখ ফোনে কয়লি অইবু! কষ্ট গরি আর বাসাত আইয়্যুন পইত্তুনু! ভালা থাকিস, আঁরলাই দোয়া গরিছ।"  এই কথাগুলোই ওনার সাথে শেষ কথা। তিনি রাজনৈতিক উত্তান পতনে অনেক হতাশ হয়েছেন। দুঃখবোধ করেছেন! অবশেষে তিনি চলেগেলেন না ফেরার দেশে।

আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার ফচিকছড়ির এক অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। মানব কল্যাণকামী দর্শনই ছিল তাঁর সবকর্মের মুখ্য চালিকাশক্তি। গরীব অসহায় মানুষের প্রতি কল্যাণবোধ তাঁর জীবনকে পরিচালিত করেছে আমরণ। কোন কিছুর প্রত্যাশায় নয়, কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য নয়, মানব সেবায় ছিল তাঁর ধর্ম। বলতে গেলে মানবসেবা করতে করতেই তিনি এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল স্বভাবজাত । পরোপকারী, সৎ মানুষ ও রাজনীতিবিদ হিসেবে শুধু ফটিকছড়িতে নয়, সমগ্র উত্তর চট্টগ্রামে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও পরিচিত। তাঁর কর্মকান্ড গুলো দেখে সবাই বিশ্বাস করতেন সে সমাজ সেবার জন্যই যেন তাঁর জন্ম। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে তিনি আজীবন লড়ে গেছেন। তিনি সমাজকে আলোর পথে নিয়ে আসতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অসংখ্য স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা। যুগে যুগে অবহেলিত ফটিকছড়ির শিক্ষা খাতের প্রতি তিনি সব সময় আলাদা নজর রাখতেন বলেই অবহেলিত ফটিকছড়ির দড়্গিণাঞ্চলে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ‘নানুপুর লায়লা-কবির ডিগ্রী কলেজ’। এছাড়াও মসজিদ, মন্দির থেকে শুরু করে ফটিকছড়ির এমন কোন জিনিস/ প্রতিষ্ঠান নাই, যার সাথে রফিকুল আনোয়ার নাই। 

তিনি ছিলেন অনন্য এক প্রেরণার মানুষ। তিনি যাকে যা দেওয়ার দিয়ে গেছেন হৃদয় নিংড়ে। অসহায় মানুষের পাশে দাড়াঁনোই ছিল তাঁর কর্মকান্ডের অন্যতম একটি দিক। বিশেষ করে অসহায় গরীব মানুষের মেয়ের বিয়েতে অবদান রাখতেন তিনি। এই বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব সহকারে নিতেন। গরীব-দুঃখী মানুষের সাহায্যার্তে তিনি অকাতারে দান করে গেছেন। তিনি কখনো ধনী-গরীব ভেদাভেদ করতেন না। সবার প্রতি ছিলেন সমান সহানুভূতিশীল। উচ্চ বিত্তের মানুষ-জনের চেয়ে তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি ছিলেন সদয় ও সহানুভূতিশীল। কোন রাগ-বিরাগ, কোন অহমিকা ছিল না। রাস্তার ফকিরের সাথেও তিনি সহজে মিশে যেতেন। এমন কোন দিন ছিল না তিনি ফটিকছড়িতে কোন না কোন ঘরোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন না।  খাবার টেবিলে বসেই তিনি প্রথমে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ীর ড্রাইভার খেতে বসেছে কি’না জিজ্ঞাসা করতেন। এভাবেই তিনি সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। মরহুম আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার ছিলেন অত্যানত্ম ধৈর্য্যশীল মানুষ। রাজনীতির অঙ্গনে উত্থান-পতন, জয়-পরাজয়ের সুখ-দুঃখে ছিলেন খুবই ধৈর্য্যশীল। কখনো হতাশ হতেন না কোন ব্যাপারে। অত্যন্ত দৃঢ়চেতা এই নেতা একবার কোন কিছু করবেন বলে ঠিক করলে বা জেদ ধরলে সেটা শেষ না করা পর্যন্ত তিনি থামতেন না। মরহুম আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ারের বড় আর একটি গুনের মধ্যে যা লক্ষণীয় ছিল তা হলো- অন্য মতার্দশের রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের কাছেও তিনি ছিলেন খুবই গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তি। 

ভিন্ন দলের প্রতি কখনো ব্যক্তি আক্রমন বা বিদ্বেষমূলক কথা-বার্তা ও কঠোর হতেন না। সবার প্রতি সমান আচরণ করতেন বলেই তিনি ফটিকছড়িবাসীর গণমানুষের অবিসংবাদিত জননেতায় পরিনত হয়েছিলেন। 

ফটিকছড়ির সর্বস্তরের মানুষের প্রিয় এমপি সাহেব হিসেবে খুব বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। এমপি না  থাকা অবস্থায়ও ফটিকছড়ির মানুষ রফিকুল আনোয়ারকে "এমপি সাহেব" বলে সম্বোধন করতেন। রাজনীতির জন্য রাজনীতি করেননি এবং সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে ও ফটিকছড়ির উন্নয়নে ধারা অব্যাহত রাখতেই তিনি রাজনীতি করতেন। 

তিনি অকালে চলে যাওয়াতে ফটিকছড়ির যে শূন্যতা তৈরী হল তা এখনো পূরণ হয়নি। তার বিকল্প কাউকে এখনো হতে দেখিনি, আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার এমন একজন ব্যাক্তি যিনি গরীব ফকির মিসকিন সবার অনুষ্টানে হাজির থাকতেন। যার মাঝে ছিলনা কোন ভেদাভেদ।  তিনি এসব মহৎ গুণাবলি জন্য বেঁচে থাকবেন ফটিকছড়ির প্রতিটি মানুষের মনের সিংহাসনে।

উল্লেখ্য তিনি ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর  এ্যপেলো হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।