image

আজ, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

১৪ ডিসেম্বর দোহাজারী হানাদারমুক্ত দিবস

মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ সংবাদদাতা    |    ২০:৫৪, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮

image

ছবি-প্রতীকি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক উপ-শহর হিসেবে পরিচিত দোহাজারী হানাদার মুক্ত দিবস ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা দোহাজারী ছেড়ে পালিয়ে যায়। একটানা ২ দিন ২ রাত বিরামহীন যুদ্ধ চলার পর পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা যৌথবাহিনীর চতুর্মূখী আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টার দিকে সদলবলে দোহাজারী ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিকামী জনতা জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে রাজপথ। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৫৪ নং গ্রুপের ডেপুটি কমান্ডার ও বর্তমান চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরু স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দোহাজারীকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন।  সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর ইতিহাসের পাতায় দোহাজারী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চন্দনাইশ উপজেলা কমান্ড'র বর্তমান কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৫৪ নং গ্রুপের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরু'র সাথে আলাপকালে তিনি জানান,  "মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তথা বৃহত্তর পটিয়ার পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি ছিল দোহাজারীতে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয় দখল করে পাক হানাদার বাহিনী শুরু করে তাদের কর্মযজ্ঞ। শঙ্খ সেতুকে ঘিরে গড়ে তোলে চেকপোস্ট। প্রতিদিন মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে যাত্রীদের ওপর চালাতো অমানুষিক নির্যাতন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অজুহাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হতো শঙ্খনদীতে। পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও মুজাহিদের ঘাঁটি ছিল দোহাজারী জামিজুরী আহমদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদেশীয় সহযোগীদের সাথে নিয়ে মুক্তিকামী জনতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় তারা বিভিন্ন দেশপ্রেমিক জনগণকে ধরে নিয়ে এসে তাদের ক্যাম্পে অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করত।

দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের আটকের জন্য বিভিন্নভাবে কলাকৌশল অবলম্বন করত তারা।  অবশেষে ৯ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর একটি দল শঙ্খনদীর দক্ষিণপাড়ে সাতকানিয়ার কাটগড় ও কালিয়াইশ অংশে গোপনে সংগঠিত হতে শুরু করে।  এদিকে ১০ ডিসেম্বর দুপুরে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার সিদ্দিক আহমদ, ডা. বি এম ফয়েজুর রহমান (এমএলএ), প্রাক্তন ছাত্রনেতা প্রয়াত আবুল কাসেম সন্ধীপ ও গ্রুপ কমান্ডার আবদুল গফুরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মুক্তি বাহিনীর সৈনিক সাতকানিয়া থানার কালিয়াইশ ইউনিয়নের রসুলাবাদ মাদ্রাসায় এসে সমবেত হয়।  মুক্তিবাহিনী যাতে অগ্রসর হতে না পারে সে জন্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর লোকজন শঙ্খনদীর উত্তর পার্শ্বে তখনকার যে বেইলী ব্রীজ ছিল (লোহার) সেটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। যাতে মুক্তিবাহিনী পার হতে না পারে। ইতিমধ্যে ভারত হতে আসা ৩টি মুক্তিবাহিনী গ্রুপ ১৫২-চকরিয়ার মাহবুব গ্রুপ, ১৫৩-সাতকানিয়ার জলিল বকসু গ্রুপ, ১৫৪-দোহাজারী আবু তাহের খাঁন খসরু গ্রুপ ৮ ডিসেম্বর জঙ্গল হাশিমপুরের একটি খামার বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। পরিকল্পনা ছিল দোহাজারীতে অবস্থিত পাক হানাদার বাহিনীকে পরাভুত করে অপারেশন পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যে এদেশীয় গুপ্তচর দ্বারা এদের অবস্থানের খবর পাওয়ায় পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকার মুজাহিদ যৌথভাবে ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর সন্ধ্যার দিকে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে শহীদ সুভাষ কান্তি মজুমদার ও শহীদ বিমল কান্তি দাশ শহীদ হন। এ সময় পাকিস্তানী বাহিনীরও কিছু লোক হতাহত হয়।  ১২ ডিসেম্বর শঙ্খনদীর দক্ষিণ পাড়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে উত্তর পাড়ে অবস্থিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় পাকিস্তানী ৫/৬ জন হানাদার বাহিনী নিহত হয়। শেষ পর্যায়ে ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ রাত্রে পাকিস্তানী বাহিনী দোহাজারী অবস্থান পরিত্যাগ করে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাওয়ার পথে পটিয়ার ইন্দ্রপুলও একইভাবে দোহাজারী বেইলী ব্রীজের মত ডিনামাইট দ্বারা উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।  পাকবাহিনী শঙ্খ নদীর টানা ব্রিজ ভেঙে দিয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যাওয়ার পথে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুনরায় দোহাজারী ফিরে আসতে বাধ্য হয় এবং দুপুর থেকে শুরু হয় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ।

এই সম্মুখ যুদ্ধে পাক হানাদারবাহিনীর ৯ থেকে ১০ সদস্য নিহত হলেও মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি।
একটানা ২ দিন ২ রাত বিরামহীন যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনীর সদস্যরা যৌথবাহিনীর চর্তুমুখী আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টার দিকে সদলবলে দোহাজারী ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৭, মে ১৪, ২০২২

বাঁশখালী ইউপি নির্বাচনে নৌকায় শেষ হাসি যাঁদের


Los Angeles

০০:৩০, মে ১৪, ২০২২

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ঘেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া


Los Angeles

১৬:২৬, অক্টোবর ১৬, ২০২১

বীর নিবাস পাচ্ছেন বাঁশখালীর ১০ মুক্তিযোদ্ধা


Los Angeles

২০:৩৩, অক্টোবর ১৩, ২০২১

তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপাকে বাঁশখালীর এক দরিদ্র পরিবার


Los Angeles

১১:২৪, অক্টোবর ১০, ২০২১

সীতাকুন্ড ইউপি নির্বাচন : নৌকা দাবি ৪৩জনের


Los Angeles

২০:১৯, অক্টোবর ৮, ২০২১

আবিষ্কারের বিস্ময় বালক বাঁশখালীর আশির, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা


Los Angeles

২১:৩৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

করোনাকালে বাল্যবিয়ে : পড়ালেখায় ইতি টেনে অনেক কিশোরী এখন পুরোদস্তুর সংসারী


image
image