image

আজ, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে জীবনের গান

ডেস্ক    |    ১৭:১১, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮

image

শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আনোয়ার পাশা মৃত্যুর আগে শেষ করে যেতে পেরেছিলেন ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ নামের উপন্যাসটি। এটাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লেখা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। বইটি পড়ার সময় মনে হয়েছিল, মৃত্যুর মিছিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এই উপন্যাসটা লেখার সময় লেখক কি জানতেন, সেই মিছিলে তিনিও যোগ দিতে চলেছেন?

আনোয়ার পাশা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে। বইটি ১৯৭৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তাজুল ইসলামের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বর্ণমিছিল’ থেকে। এর পাণ্ডুলিপি শহীদ পাশার পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও আনোয়ার পাশার বন্ধু ড. কাজী আবদুল মান্নান। বর্তমানে স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে প্রকাশিত বইটির মূল্য ২৫০ টাকা।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম সুদীপ্ত শাহীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সে। আনোয়ার পাশা মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময়টাতে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলোই সুদীপ্ত শাহীন চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। পাশা বইয়ের নামে প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের চরিত্র, ‘রোটি খেয়ে গায়ের তাকত বাড়াও, রাইফেল ধ’রে প্রতিপক্ষকে খতম কর, তারপর আওরাত নিয়ে ফুর্তি কর।’

২৫ মার্চের গণহত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের হত্যার নির্মম কাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষের শিক্ষকদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা, মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের নানাভাবে সহযোগিতাকারী মানুষদের ত্যাগের গল্প, শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাহাকার, চারপাশের মানুষের মননে-আচরণে সাম্প্রদায়িকতা-অসাম্প্রদায়িকতার দ্বন্দ্ব—সবই উঠে এসেছে এ উপন্যাসে।

উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীন তার স্ত্রী মীনাক্ষি ও এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে। তার কাছে মৃত্যুর চেয়ে বেশি ভয়ানক এই মৃত্যু আতঙ্কে বেঁচে থাকা। মৃত্যু যেখানে স্বাভাবিক, তখন বেঁচে থাকাটাই একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার, এটাই তখন সংবাদ। তবু এরই মাঝে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে সুদীপ্ত, স্বপ্ন দেখে পাকিস্তানিদের হটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের পতাকা উড়বে। তাই লিখেছেন, ‘টুঁটি টিপে ধরলে মানুষ কতক্ষণ বাঁচে! বাধা দিতেই তো হবে। হয় মুক্তি, না হয় মৃত্যু।’

উপন্যাসে কিছু ঘটনা এ লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত রয়েছে যেগুলো পাঠকের মনে দাগ কাটবেই। পাঠকদের জন্য সেগুলো হুবহু তুলে ধরছি।

২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানিদের হাতে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব সম্পর্কে বলছেন : ‘কলিযুগের দেবতা দেখতে চাও? ড. দেবকে দেখ। একজন প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কত উপার্জন ছিল তার? যা ছিল তার এক দশমাংশও বোধ হয় নিজের জন্য তার খরচ হতো না। বাকিটা? বাকি টাকা ব্যয় হতো দান-ধ্যানে এবং পালিত পুত্রদের পেছনে। বহু দরিদ্র সন্তানকে তিনি পালন করেছেন–তারা কেবল যে হিন্দুই এমন নয়, হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদটা কি আর এ যুগে মানার বিষয়? ... ড. দেব বিশেষ কোনো ধর্মের লোক ছিলেন না। বোধ হয়, সব ধর্মের-ই লোক ছিলেন তিনি। মনেপ্রাণে যিনি দার্শনিক, তিনি বিশেষ একটা ধর্ম বিশ্বাসের দ্বারা আবদ্ধ হবেন – এটা হয় কখনো?’

আনোয়ার পাশার মানবতাবাদী উদার গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় উপন্যাসে ছড়িয়ে থাকা বহু উক্তিতে। উপন্যাসের এক জায়গায় আনোয়ার পাশা বলছেন : ‘মানুষে কুকুরে পার্থক্য নেই। আছে, কিন্তু তা আছে মানুষের দৃষ্টিতে। জানোয়ারের কাছে নেই। মানুষের চামড়া গায়ে সবাই কি মানুষ?’

অন্যত্র তিনি বলছেন : ‘প্রেমে ও রণে কিছুই অন্যায় নয়। একটা বিরাট জালিয়াতি আছে কথাটার ভিতর। প্রেমে যদি কিছু অন্যায় না হয়, তবে যুদ্ধে সবি অন্যায়। যুদ্ধটাই অন্যায়। যুদ্ধ ও প্রেম বিপরীতার্থক। তাদের সামান্য লক্ষণ সন্ধান মূর্খের কর্ম।’

উপন্যাসের শেষের কয়েক লাইনে লেখক আশার কথাও বলে গেছেন, ‘পুরোনো জীবনটা সেই পঁচিশের রাতেই লয় পেয়েছে। আহা, তাই সত্য হোক। নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে? বেশী দূর হতে পারে না। মাত্র এ রাতটুকু তো! মা ভৈঃ। কেটে যাবে।’

হ্যাঁ, সেই কালো রাত কেটে যায়, কিন্তু সেই নতুন প্রভাতে নতুন পরিচয়ে নতুন জীবনটা আর উপভোগ করতে পারেননি অধ্যাপক আনোয়ার পাশার মতো জাতির অসংখ্য মেধাবী সন্তানেরা। নতুন প্রভাতের ঠিক দুদিন আগে ভয়ংকর এক কালো রাত নেমে আসে, শহীদ হতে হয় পাশাসহ আরো অনেক বুদ্ধিজীবীকে।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৮, ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২১

অনেক বিজয়ও পরাজয়ের গ্লানি বহন করে


Los Angeles

০০:৪২, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১

ভালোবাসা  প্রতিক্ষণ; কেন ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপন !!!


Los Angeles

১৭:১৮, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০

‘কোথাও কেউ নেই‘ নাটকের বদি আর দুনিয়াতেই নেই 


Los Angeles

১৮:০১, ডিসেম্বর ১২, ২০২০

বাঙালীর বিজয়


Los Angeles

১৩:১৮, নভেম্বর ১, ২০২০

মরু দুলালের আগমনী


Los Angeles

১৬:৫৫, অক্টোবর ১৯, ২০২০

ঘুরে আসুন সাজেক, খেয়াল রাখবেন কিছু বিষয়ে


image
image