image

আজ, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং

আবদুল গফুর হালী : ১৯২৯-২০১৬

কবি আইউব সৈয়দ    |    ১৩:৪০, আগস্ট ১৯, ২০১৮

image

চট্রগ্রামের সংগীতধারা আঞ্চলিক ও মাইজভান্ডারী গানের শিল্পী আবদুল গফুর হালী ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুস সোবহান, মা গুলতাজ খাতুন। লেখাপড়া করেছেন রাশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়। প্রথাগত শিক্ষা শেষ না করে স্ব-শিক্ষিত আবদুল গফুর হালী পঞ্চাশের দশক থেকে সংগীতজীবন শুরু করেন। ছোটবেলায় আধ্যাত্মিক ও মরমী গান এই শিল্পীর মনে দারুন প্রভাব ফেলে। হালী শুধু মাটির গান করেননি, ভাবের রসে মত্ত করেছেন ভক্তদের। গণসংগীত শিল্পীদের মতই কন্ঠসৈনিক হিসেবে তাকে পাওয়া যেতো স্বাধীকার আন্দোলনে। আঞ্চলিক, মাইজভান্ডারী ও ভাবের গানসহ সব মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার গান লিখেছেন তিনি। ৮৭ বছর বয়সেও গান লিখে ও গেয়ে সংসার চালান আজও। মরমী সাধক শিল্পী আবদুল গফুর হালীর জীবন ও গান নিয়ে জার্মান হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.হানস হারডারের ডার ফেরুখটে গফুর সিপ্রখট নামে গবেষণা গ্রন্থটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে। এই গ্রন্থে ৭৬ টি গান অন্তর্ভূক্ত হয়। ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে তার গান নিয়েও গবেষণা হয়েছে। তাছাড়া চট্রগ্রাম থেকেও দুটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থ দু’টি হলো- নাসির উদ্দিন হায়দার স¤পাদিত সুরের বন্ধু এবং মোহাম্মদ আলী হোসেন সম্পাদিত শিকড়। এই গ্রন্থে ২০০ গানের স্বরলিপি রয়েছে। অন্যদিকে আবদুল গফুর হালীর জীবন ও কর্ম নিয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে শৈবাল চৌধুরী পরিচালিত মেটো পথের গান নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আর কত কাল খেলবি খেলা/মরণ কি তোর হবে না/আইল কত গেল কত/ কোথায় তাদের ঠিকানা - এই গানটি শুনে পীর শফিউল বশর মাইজভান্ডারী আবদুল গফুরকে হালী উপাধি দেন। আবদুল গফুর হালী’র গানে ঠাট নির্বাচনে বিলাবল, ইমন ও ভৈরবীর প্রাধান্য যেমন আছে তেমনি চট্রগ্রামের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল ভেদে কোথাও গমকের, মীড়ের সমন্বয়ও ঘটিয়েছেন। অলংকার প্রয়োগ এবং অনুপ্রাস সৃষ্টি করে লোকজীবনের শেকড়ে প্রবেশ করে নির্যাস বের করে এনেছে অনায়াসে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেতারে তার লেখা গান প্রচার শুরু হলেও গীতিকার,সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। তার উল্লেখযোগ্য গান ঃ ও শ্যাম রেঙ্গুন ন যাইওরে, সোনা বন্ধু তুই আমারে, রসিক তেল কাজলা, মনেরও বাগানে ফুটিল ফুলরে, তুঁই মুখ ক্যা গইল্যা কালা, বাইন দুয়ারদি ন আইস্যু তুঁই, দেখে যা মাইজভান্ডারে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক কর্মকর্তার অনুরোধে আঞ্চলিক নাটক লেখা শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রচারিত আঞ্চলিক নাটক হল গুলবাহার, নীলমনি, সতী মায়মুনা, কুশল্যা পাহাড়, আশেক বন্ধু আজব সুন্দরী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আব্দুল গফুর হালী একাধারে কন্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং মরমী সাধক। তবে শিল্পীর বাবা এসব পছন্দ করতেন না বলে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ছেলেকে সংসারী করতে রাবেয়া খাতুনের সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু হলো উল্টো। তাঁর সংগীতগুরু মুন্সি বজলুর রহমানের কাছে তালিম নিতে শুরু করলেন। আঞ্চলিক গানের প্রাণপুরুষ দুই পুত্র, দুই মেয়ের জনক আবদুল গফুর হালী দৈনন্দিক জীবনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সহজ ও সাবলীল ভাষায় এবং সুরের হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনায় চট্রগ্রামের লোকসংস্কৃতির  বটবৃক্ষ হয়ে আছেন।

সম্পাদনায় : কবি আইউব সৈয়দ, উপদেষ্টা সম্পাদক, সিটিজি সংবাদ.কম।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৩:৩৬, জুন ৩, ২০২১

ঐতিহ্য আর ইতিহাসের অনন্য স্থাপনা বোয়ালখালীর বুড়া মসজিদ


Los Angeles

২২:০২, জানুয়ারী ১৫, ২০২০

ইতিহাস ঐতিহ্যের ছুরুত বিবির মসজিদ ও আলাওলের বংশধরদের সমাধি


Los Angeles

১৪:১৪, আগস্ট ১৯, ২০১৮

সৃজনে সুন্দরে মমত্বে চট্টগ্রাম


Los Angeles

১৪:১১, আগস্ট ১৯, ২০১৮

সৃজনে সুন্দরে চট্টগ্রাম


Los Angeles

১৩:৫৪, আগস্ট ১৯, ২০১৮

শেফালী ঘোষ : ১৯৪১-২০০৬


Los Angeles

১৩:৫২, আগস্ট ১৯, ২০১৮

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব : ১৯২৭-২০০০


Los Angeles

১৩:৫০, আগস্ট ১৯, ২০১৮

অচিন্ত্যকুমার চক্রবর্তী : ১৯২৬-১৯৯৪


Los Angeles

১৩:৪৬, আগস্ট ১৯, ২০১৮

মলয় ঘোষ দস্তিদার : ১৯২০-১৯৮২


Los Angeles

১৩:৪৩, আগস্ট ১৯, ২০১৮

এম.এন.আখতার : ১৯৩১-২০১২


image
image