image

আজ, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বছর পূর্তি হলেও দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি দোহাজারী পৌরসভা

মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ    |    ১৫:০২, আগস্ট ১৯, ২০১৮

image

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক উপ-শহর খ্যাত দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তরের জন্য ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৭সালের ১১মে দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করে সরকারী গেজেট বা পরিপত্র জারি করার ১বছর পার হলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না দোহাজারী পৌরবাসী। ইউনিয়ন থেকে পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার এক বছর পার হলেও অদ্যাবধি কোন উন্নয়ন কাজ শুরু হয়নি। সম্পন্ন হয়নি ওয়ার্ড বিভাজন, নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। জানা গেছে, পৌরসভা আইন অনুযায়ী 'গ' শ্রেণীর পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়াও সচিব, একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৭৪টি পদ এবং সে মোতাবেক জনবল নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু দোহাজারী পৌরসভায় বিগত ১বছরে সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও লাইসেন্স পরিদর্শকের পদ ছাড়া ৭১টি পদে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ইউনিয়ন থাকা অবস্থায় যে কর পরিশোধ করতে হতো এখন তার দ্বিগুন কর পরিশোধ করতে হচ্ছে পৌরবাসীদের। পৌরসভা গঠনের পর থেকে নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করে এলেও কাংখিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এখনও সামান্য বৃষ্টিতে পৌরসভায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় পথঘাট। এছাড়া সড়কবাতি, ডাস্টবিন স্থাপন, হাট-বাজারসহ কোন সড়কের উন্নয়ন কাজ এখনো শুরু হয়নি।

পৌরবাসীর অভিযোগ, পৌরসভা গঠনের পর থেকে অদ্যাবধি তারা সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। পৌর সার্টিফিকেট, জাতীয়তা সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র সহ বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দোহাজারী পৌরসভার কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, পৌরসদরে ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অাবার কয়েকটি স্থানে ময়লা ফেলার স্তূপ থাকলেও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকায় সেগুলো থেকে নিয়মিত ময়লা সরানো হচ্ছে না। ফলে ঐ সমস্ত স্থানগুলো দিয়ে জনসাধারণ নাকে রুমাল ঠেকিয়ে রাস্তা যাতায়াত করেন। রাস্তাগুলো দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন বিদ্যালয়ের  কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। ডাস্টবিন স্থাপণ করার পাশাপাশি খোলা যায়গা থেকে ময়লার স্তূপগুলো সরানো প্রয়োজন হলেও এদিকে নজর দিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। ওই সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াতকারী অনেককেই এ ধরনের মন্তব্য করতে শোনা যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে বিভিন্ন রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। রাস্তাঘাটের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, পৌরশহর থেকে বেরুবার রাস্তাগুলো দিয়ে রোগী যাতায়াতে অনেকটা দূর্ভোগে পড়তে হয়। পৌরসভা সদরে অবস্থিত দোহাজারী হাসপাতালের একমাত্র নলকূপটি দীর্ঘদিন অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির কষ্টে রোগীরা। পৌর কার্যালয়ের পাশে গণশৌচাগারটি দীর্ঘদীন বন্ধ পড়ে রয়েছে। সাবেক ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাঈনুদ্দীন হাসান, হাজারী টাওয়ারের ব্যবসায়ী জুনায়েদ সালেহ, সাবেক ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মেহেরুল হাসান বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'দোহাজারী ব্লাড ব্যাংক'র উদ্যোগে বিগত ৪মে দোহাজারী পৌরসদরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করলেও পৌরবাসীর বোধদয় হয়নি। অদ্যাবধি যেখানে-সেখানে  ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, ফলে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাজেট হয়েছে শুনেছি, দরপত্র আহবান করা হয়েছে শুনেছি তবে কবে নাগাদ উন্নয়নকাজ শুরু হবে আল্লাহ্ ভালো জানেন। সাবেক দোহাজারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউ.পি সদস্য ও পৌরসভার বর্তমান সহায়ক সদস্য এস.এম জামাল উদ্দীন বলেন, "বিগত বছরের ভয়াবহ বন্যায় আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ প্রতিনিয়ত সংস্কার করার দাবি জানালেও আমার অপারগতার কারন তাদেরকে বোঝাতে পারিনা। অবিলম্বে উন্নয়নকাজ শুরু করা প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি। এব্যাপারে দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম বদরুদ্দোজা'র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমি যোগদান করেছি নতুন, আমি এসে এভাবেই পেয়েছি। যেহেতু নতুন পৌরসভা, সেহেতু উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হতে একটু সময়তো লাগবেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ ও ডাস্টবিন স্থাপণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভায় লোকবলের সংকট রয়েছে, যানবাহন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতিও নেই। এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বলে শীঘ্রই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। পৌরসভার বেশিরভাগ কাজই পৌরসভার নিজস্ব অর্থ দিয়ে করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন অর্থ বছরে খুব শীঘ্রই অনেকগুলো ছোট ছোট কাজ শুরু করবো। টেন্ডারের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ড্রেন ও ছোট ছোট কয়েকটি রাস্তার কাজ এমাসেই শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গতঃ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক উপ-শহর হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক প্রাচীনতম জনপদ দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করনের সিদ্ধান্ত  ২০১৭সালের ৯জানুয়ারী (সোমবার) জাতীয় প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি (নিকার)'র সভায় অনুমোদন পেয়েছে। দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করে সরকারী গেজেট বা পরিপত্র জারি হয় গত বছরের ১১মে (বৃহস্পতিবার)। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় এর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পরিপত্র জারির মাধ্যমে পৌরসভা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সরকার। প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৮ নং আইন) এর ধারা ৪ এর উপ-ধারা (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করেছে। দোহাজারী পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত এলাকা সমূহ হলোঃ- দোহাজারী ইউনিয়নের চাগাচর, দোহাজারী, রায়জোয়ারা, হাতিয়াখোলা, জামিজুরী ও দিয়াকুল মৌজা এবং সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের হাছনদন্ডী মৌজা।  নব গঠিত পৌরসভা দোহাজারী’র পৌর কার্যক্রমের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে চন্দনাইশ উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লুৎফুর রহমানকে পৌর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৪২ ধারার (১) উপ-ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নবগঠিত দোহাজারী পৌরসভার সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য গত বছর ১৪ জুন (বুধবার) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সাক্ষরিত এ সম্পর্কিত দাপ্তরিক পত্রে [স্মারক নং-৪৬.০০.০০০০.০৬৪.৩১.১১৭.১৫.১৭৭৬/১(৪)] এ নির্দেশ দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রশাসক দোহাজারী পৌরসভার সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল। এদিকে পৌর প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গতবছর ৮ জুন হাইকোর্টে বিচারপতি সৈয়দ মুহাম্মদ দস্তগির হোসাইন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান এর দ্বৈত বেঞ্চে একটি রিট করেন সাতবাড়িয়া ইউ.পি চেয়ারম্যান আহমদুর রহমান ডিলার। তারই প্রেক্ষিতে গত বছর ৪ জুলাই (মঙ্গলবার) পৌর প্রশাসক নিয়োগে ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দেন মহামান্য হাইকোর্ট। পৌর প্রশাসক নিয়োগের স্থগিতাদেশের সংবাদটি প্রকাশ হওয়ায় দোহাজারী পৌরসভা রক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠনের ব্যনারে অনতিবিলম্বে পৌর প্রশাসক নিয়োগে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত বছর ১৪ জুলাই (শুক্রবার) পৌর সদরে মানবন্ধন করার ঘোষণা দেয়। মানববন্ধন কর্মসূচির আগের দিন সংগঠনটির আহবায়ক চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রিট আবেদনকারী সাতবাড়িয়া ইউ.পি চেয়ারম্যান আহমদুর রহমান ডিলারের সাথে সমঝোতা বৈঠক করেন। ফলপ্রসু বৈঠক শেষে দোহাজারীবাসীর অনুরোধের প্রক্ষিতে ও চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী এম.পি'র নির্দেশে রিট আবেদন প্রত্যাহার করবেন মর্মে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন সাতবাড়িয়া ইউ.পি চেয়ারম্যান আহমদুর রহমান ডিলার। পরবর্তীতে গত বছর ১০ আগষ্ট হাইকোর্টে বিচারপতি সৈয়দ মুহাম্মদ দস্তগীর হোসাইন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান এর দ্বৈত বেঞ্চ রিট আবেদনটি খারিজ করে দিলে দোহাজারী পৌরসভার পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চন্দনাইশ উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লুৎফুর রহমান। তাঁর বিদায়ের পর পৌর প্রশাসক হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গত ২১এপ্রিল চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানকৃত আ.ন.ম বদরুদ্দোজা।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৭, মে ১৪, ২০২২

বাঁশখালী ইউপি নির্বাচনে নৌকায় শেষ হাসি যাঁদের


Los Angeles

০০:৩০, মে ১৪, ২০২২

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ঘেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া


Los Angeles

১৬:২৬, অক্টোবর ১৬, ২০২১

বীর নিবাস পাচ্ছেন বাঁশখালীর ১০ মুক্তিযোদ্ধা


Los Angeles

২০:৩৩, অক্টোবর ১৩, ২০২১

তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপাকে বাঁশখালীর এক দরিদ্র পরিবার


Los Angeles

১১:২৪, অক্টোবর ১০, ২০২১

সীতাকুন্ড ইউপি নির্বাচন : নৌকা দাবি ৪৩জনের


Los Angeles

২০:১৯, অক্টোবর ৮, ২০২১

আবিষ্কারের বিস্ময় বালক বাঁশখালীর আশির, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা


Los Angeles

২১:৩৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

করোনাকালে বাল্যবিয়ে : পড়ালেখায় ইতি টেনে অনেক কিশোরী এখন পুরোদস্তুর সংসারী


image
image