image

আজ, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

কর্ণফুলীতে পুলিশ-মালিক সমিতি পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিতে মিলে মিশে একাকার

কর্ণফুলী সংবাদদাতা    |    ২৩:২১, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৯

image

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশ ও বাহিরের প্রথম ও শেষ পয়েন্ট কর্ণফুলী উপজেলা। এ উপজেলাতে পরিবহন সেক্টরে পুলিশ-মালিক সমিতির মিলে মিশে চাঁদাবাজি এখন ওপেন সিক্রেট। তাদের পকেট ভারী হলেও গাড়ী মালিক, চালক-হেলপার, যাত্রীদের ত্রাহি অবস্থা। কিছুতেই থামছেনা তাদের বেপরোয়া টোকেন বাণিজ্য। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো গাড়ী চলাচল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পারমিট পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন অবৈধ সাংকেতিক ও ছাপানো সংকেতে চলছে।

মহাসড়কে থ্রি হুইলারের যেকোন যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যত এর দেখা মেলা ভার এ এলাকায়। এখানে প্রকাশ্যেই চলছে সকল ধরনের থ্রি হুইলার পরিবহণ।

জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশ ও কথিত মালিক সমিতির টোকেনেই চলছে এসব সিএনজি ও তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহন। সচেতন মহলের দাবি, কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে এসব যান হতে চাঁদাবাজি। যেন টোকেনই ভরসা আবার টোকেনেই ব্যবসা।

অপরদিকে, হাইকোর্টের নিদের্শ অমান্য করে আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই ট্রাফিক পুলিশের টিআই ও সার্জেন্টসহ কিছু নাম স্বর্বস্ব মালিক সমিতির যোগসাজসে টোকেনে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। এ যেন কাঁচা টাকার রমরমা বাণিজ্যে। যে টাকার একটি বড় অংশ স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পকেটেও যাচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে।  

তথ্যমতে, কর্ণফুলী উপজেলার প্রধান সড়ক গুলোতে অবৈধ কিছু সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারী চালিত টমটম এবং তিন চাকার রিক্সা চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মানুষ ও শিশুদের নাম।

আরাকান মহাসড়কের মইজ্জ্যারটেক ও শিকলবাহা ক্রসিং গুলোতে মেট্রোপুলিশ ও হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান করলেও স্থানীয়রা বলছে তা নামমাত্র আইওয়াশ। ধরা ছোয়ার বাহিরে এসব যানবাহন বরং সমিতি ও তাদের নির্দিষ্ট টোকনের মাধ্যমে চলছে অবাধে সিএনজি অটোরিকশা সহ নিষিদ্ধ যান।

সুুত্রে মতে, গত বছরের ডিসেম্বরে সিএনজি হতে মাসে ১০০টাকা আদায় করলেও নতুন বছরে বাড়ছে চাঁদার পরিমাণ। মইজ্জ্যারটেকে ইউসুফ নামে এক ব্যক্তি এখন মাসে ১২০ থেকে ২০০টাকা করে প্রতি সিএনজি হতে আদায় করছে এমনটি অভিযোগ স্বয়ং সিএনজি ড্রাইভারদের। অন্যদিকে নিষিদ্ধ টমটম ও তিন চাকার ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা হতে কিছুদিন কুদ্দুস নামে আরেক ব্যক্তি মাসিক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন এবং সমিতি গুলোর পক্ষ থেকে বিশেষ স্টিকার লাগিয়ে কয়েক হাজার সিএনজি হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হজম করারও অভিযোগ ওঠেছে। 

অপরদিকে শফি, হারুন ও জব্বার নামে তিন সিএনজি চালক বলেন, ‘পুলিশকে দেয়ার কথা বলে শ্রমিক সংগঠন গুলো তুলছে এই টাকা। ম‚লত ঘাটে ঘাটে অর্থ লেনদেনের কারণেই সরকারি নির্দেশনার পরও কর্ণফুলীর উপজেলার মহাসড়কে বন্ধ করা যাচ্ছেনা নিষিদ্ধ চাঁদাবাজি ও তিন চাকার যান। তবে, টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মহাসড়কে কোন ভাবেই চলতে দেয়া হবেনা তিন চাকার যান।’ তবে মাঠের তথ্যের সাথে কথায় আর কাজে আসমান জমিন ফারাক তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, এই সড়কে চলা প্রায় সবগুলো সিএনজি অটো রিক্সার সামনের গøাসে জল রংয়ের কতগুলো বিশেষ স্টিকার লাগানো। অনেকের মতে যা পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে এই স্টিকারগুলো কেনা হয়েছে শ্রমিক সংগঠনের কাছ থেকে। 

শ্রমিক সংগঠন ও সমিতি গুলো মাসে মাসে একেক রংয়ের এসব স্টিকার কোথায় পায় জানতে চাইলে ড্রাইভারেরা বলেন, ট্রাফিক পুলিশেই মূলত এসব স্টিকার সমিতিকে দেন। এই টোকেন থাকা মানে মহাসড়কে চলার বৈধতা। আর কোন বৈধ কাগজপত্র লাগেনা তাদের।

ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির লাইসেন্স চেক করেন কিনা জানতে চাইলে সিএনজি ড্রাইভার শফি বলেন, ‘গাড়ি চালাচ্ছি গত ৪বছর হবে। কখনো কাগজ দেখতে চায়নি। তবে প্রতি মাসে মাসে টোকেন ঠিকেই চেক করেন।’

উপজেলার মইজ্জ্যারটেকের সালাম ড্রাইভার বলেন, ‘হাইওয়ে রোডে চলার জন্য টোকেন আছে। এই টোকেন আমরা টাকা দিয়ে প্রতিমাসে নিই। টোকেনের টাকা দেয়া হয় আমাদের সমিতির লোকের কাছে। এরা ট্রাফিক পুলিশ হতে টোকেন এনে তাদের গাড়িতে লাগিয়ে দেয় বলে জানান।’

সচেতন মহলের দাবি, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কোন কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর টোকেন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আর অভিযোগ ওঠেছে, এ বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট হর্তাকর্তাগণ।

নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও এসব বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ সব বিষয়ে কিছু বলতে অপরাগতা পোষন করেন । কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনকেও এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি।

বছরের পর বছর ধরে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল করলেও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) ও পুলিশ প্রশাসন যেন দেখেও দেখছে না। সে সুযোগে রমরমা টোকেন বাণিজ্যে মেতে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। ফলে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা বছরে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআরটিএ কিংবা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া এসব টোকেন বিতরণ করছে উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন সিএনজি-অটোরিকশা মালিক সংগঠন ও শ্রমিক সমিতির নেতাকর্মীরা। এ থেকে মোটা অঙ্কের মাসিক মাসোহারা পায় বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এমনটি অভিযোগ সচেতন মহলেরও। 

এসব অবৈধ সিএনজি চলাচলে প্রশাসনের ঝামেলা এড়াতে মালিক ও চালকরা প্রশাসনের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে স্থানীয় কিছু নেতাদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিয়ে রাস্তায় চলাচলের বৈধতা কিংবা রুট পারমিট নেন। সেজন্য মাসে সিএনজি প্রতি টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়।

অনুসন্ধানে আরো ওঠে আসে, এসব যানবাহনের টোকেন বাণিজ্যের নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম অটো রিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং চট্ট-১৪৪১, কর্ণফুলী থানা অটো রিকশা অটো টেম্পো ও চার ষ্টোক শ্রমিক কল্যাণ বহ‚মুখী সমবায় মালিক সমিতি লিঃ রেজি নং-৮৮৮২, কা না ফুলতলা ডলুব্রীজ অটো রিকশা ও সিএনজি মালিক বহুম‚খী সমবায় সমিতি লিঃ রেজি নং-১০৬১৭, গ্রাম অটো রিকশা অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং-চট্ট ১৪৪১, ডলুব্রীজ অটো রিকশা সিএনজি মালিক সমবায় সমিতি রেজি নং ৮০১৫ (১৯৯) ও অ ল ভিত্তিক কিছু নেতা। তবে নেপথ্যে থেকে কারা এসব সমিতির নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ সাধারণ ড্রাইভারেরা। 

কর্ণফুলীতে মাসিক ‘টোকেন’-এ চলছে কয়েক হাজার সিএনজি। টোকেনের মাধ্যমে এসব অবৈধ অটোরিকশা ও চালককে বৈধতা দিচ্ছেন কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্য ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। বিভিন্ন সড়কে চলছে অবৈধ অটোরিকশা।

এছাড়াও যারা কর্ণফুলী ব্যতিত অন্য উপজেলা হতে মইজ্জ্যারটেক মোড়ে যাত্রী নিয়ে আসে। তাদের প্রতিটি সিএনজি হতে ‘চট্টগ্রাম অটো রিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন’ নামক সমিতি রশিদ কেটে চাঁদা আদায় করে প্রতি সিএনজি ৪০টাকা। আর কাটা রশিদে লিখা থাকে ২০ টাকা।

সিএনজি ড্রাইভারদের দেওয়া তথ্যমতে, কর্ণফুলীতে ‘চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর অধীনে ৭শ মতো বেশি সিএনজি ও কর্ণফুলী থানা অটো রিকশা অটো টেম্পো ও চার ষ্টোক শ্রমিক কল্যাণ বহ‚মুখী সমবায় মালিক সমিতি লিঃ এর রয়েছে ১২শ’র মতো সদস্য। 

তাহলে আনুমানিক হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ২০হাজার টাকা, মাসে ৬ লাখের উপরে এবং বছরে ৭২ লাখ টাকা শুধু সিএনজি ও অটো রিক্সা থেকেই আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা যাচ্ছে কার পকেটে? এ চাঁদাবাজি রুখবে কে? সেটাই সাধারণ জনগণের প্রশ্ন!

দেখা যায়, পুরাতন ব্রিজঘাটে সিএনজি এসে দাড়ানোর আগেই রশিদ কেটে ল্যাইনম্যান জকির নামে এক লোক। তার দেওয়া ১৫টাকার রশিদে লেখা ল্যাইনমান ৫, এক্সিডেন্ট ফান্ড ৩, মৃত্যু ফান্ড ৭ মোট ১৫টাকা। নিচে সভাপতি সম্পাদক এর ছাপা স্বাক্ষর। চোখে পড়ার মতো একটি লাইন ও নজর কাড়ে “ধন্যবাদের সহিত গৃহীত হইল”এ যেন রমরমা চাঁদাবাজির চমক দৃশ্য। অপরদিকে মইজ্জ্যারটেক মোড়ে মোঃ ইউসুফ নামে ব্যক্তির কাটা রশিদে দেখা যায়, ল্যাইনমান ৫, এক্সিডেন্ট ফান্ড ৩ ,মৃত্যু ফান্ড ৩, কল্যাণ ফান্ড ৪ মোট ১৫টাকা। 

এছাড়াও আনোয়ারা উপজেলার চাতুরী চৌমুহনী মোড়ে টোকেন এ চাঁদা তুলেন আবু ছালেক ও রাশেদ নামে দুই ব্যক্তি। এরা যে টোকেন দেয় তাতে দেখা যায়, মাসের নাম ও সিরিয়াল লিখা প্রিন্ট করা কাগজ। পাশে কলমে লেখা একেক টোকেনে একেক মুঠোফোন নাম্বার ও ভাই ভাই শব্দ লেখা।

জানতে চাইলে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘চট্টগ্রাম অটো রিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর সভাপতি মোঃ হানিফ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নিয়মে রয়েছে রশিদ দিয়ে টাকা তোলার তাই ল্যানম্যানের খরচ ও সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব চালকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের জন্য ফান্ডে কিছু মাসিক চাঁদা নেওয়া হয়।’

কর্ণফুলী থানা অটো রিকশা অটো টেম্পো ও চার ষ্টোক শ্রমিক কল্যাণ বহ‚মুখী সমবায় মালিক সমিতি লিঃ এর সভাপতি মোঃ আবু বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের সাথে আমাদের একটা কথা হয়েছে। কিছু টাকা তুলে বিপদে ড্রাইভারদের সাহায্য করি।’ 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক  ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ( ট্রাফিক ইনচার্জ) টিআই মোঃ মোস্তফা মামুন সবৈর্ব অস্বীকার করে বলেন, ‘নতুন উপজেলা গরিব অসহায় কিছু লোক তিন চাকার গাড়ি চালাচ্ছে গ্রামের সড়কে। স্থানীয় নেতারা সুপারিশ করেছে বলে আমরা তাদের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারিনি। তবে টোকেন দিয়ে ট্রাফিক পুলিশ কোন বানিজ্য করেনা।’

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, ‘টোকেন বানিজ্য বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ও যাত্রী হতে জেনেছি। তা বন্ধে দ্রুত র্কাযকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৭, মে ১৪, ২০২২

বাঁশখালী ইউপি নির্বাচনে নৌকায় শেষ হাসি যাঁদের


Los Angeles

০০:৩০, মে ১৪, ২০২২

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ঘেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া


Los Angeles

১৬:২৬, অক্টোবর ১৬, ২০২১

বীর নিবাস পাচ্ছেন বাঁশখালীর ১০ মুক্তিযোদ্ধা


Los Angeles

২০:৩৩, অক্টোবর ১৩, ২০২১

তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপাকে বাঁশখালীর এক দরিদ্র পরিবার


Los Angeles

১১:২৪, অক্টোবর ১০, ২০২১

সীতাকুন্ড ইউপি নির্বাচন : নৌকা দাবি ৪৩জনের


Los Angeles

২০:১৯, অক্টোবর ৮, ২০২১

আবিষ্কারের বিস্ময় বালক বাঁশখালীর আশির, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা


Los Angeles

২১:৩৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

করোনাকালে বাল্যবিয়ে : পড়ালেখায় ইতি টেনে অনেক কিশোরী এখন পুরোদস্তুর সংসারী


image
image