শিরোনাম
শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার সংবাদদাতা | ২৩:৩৪, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১৯
কক্সবাজারের টেকনাফ শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ হামিদ হোসেন (৩৮) ওরফে ডা: হামিদ নামের এক রোহিঙ্গা নেতার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোর ৪টার দিকে শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-পরিদর্শক সুজিত চন্দ্র দে। তিনি জানান, নিহতের বুকে ও শরীরে ৮টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহত হামিদ শালবন ক্যাম্প-২৬ এর ব্লক এ-২তে বসবাসকারী মৃত মো. হোসেনের ছেলে ও ক্যাম্পের একজন নেতা।
২২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ভোরে আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আরসা নেতা নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনসার কমান্ডার হত্যা ও অস্ত্র লুট মামলার আসামী নুরুল আলম নিহত হওয়ার জের ধরে সন্ধ্যার পর হতে শালবন ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে তান্ডব চালায় তার সহযোগীরা। আইনশৃংখলা বাহিনীকে সহযোগীতার অভিযোগে সন্দিগ্ধ রোহিঙ্গাদের খুঁজতে থাকে তারা। এসময় প্রথমে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা হামিদকে অপহরণ করে পাহাড়ের কাছে নিয়ে গুলি করে ফেলে রাখে তারা। এসময় ভয়ে অন্য রোহিঙ্গারা কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা গুলিবিদ্ধ হামিদকে উদ্ধারে এগিয়ে যায়নি। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। পরে রাতে যৌথ আইন শৃংখলা বাহিনী অভিযান শুরু করলে হামিদেও মৃতদেহ খুঁজে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। শনিবার ভোরে টেকনাফ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
ক্যাম্পে অবস্থানরত সাধারন রোহিঙ্গারা জানান, স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে আল একিন নামে পরিচিত। একজন উপসচিব মর্যাদার ক্যাম্প ইনচার্জ এর নেতৃত্বে আইনশৃংখলা বাহিনী উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো পরিচালনা করলেও মুলত এই আল একিন সদস্যরাই সমান্তরালভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রন করে আসছিল।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি কিংবা সাধারন রোহিঙ্গারা তাদের নির্দেশ অমান্য করলে তাদের হত্যা নির্যাতনের শিকার হতে হয়। শুক্রবার আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুরুল আলম ছিল রোহিঙ্গাদের কাছে পরিচিত স্বশস্ত্র আল একিন নেতা আর স্বশস্ত্র রোহিঙ্গাদের নিজেদের দাবী তাদের সংগঠনের নাম আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি)। তবে মূলত নুরুল আলম ওরফে নুর আলম ওরফে কমান্ডার জোবাইরের উত্থান হয়েছিল সাধারন রোহিঙ্গা ডাকাত হিসাবে। পরে আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র লুট ও কমান্ডার হত্যার পর তার স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে যোগসূত্রের তথ্য জানা যায়। পরে র্যাব তাকে আটক করলে তার স্বীকারুক্তি অনুযায়ী আনসার ক্যাম্পের লুন্ঠিত সবগুলো অস্ত্র ঘুমধুম পাহাড়ী এলাকা হতে উদ্ধার করা হয়। সেই সময় তাকে কারাগারে প্রেরন করা হলেও বেশীদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়নি। জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ক্যাম্প ভিত্তিক স্বশস্ত্র কর্মকান্ড শুরু করে। আনসার কমান্ডার হত্যা ও অস্ত্র লুটের মামলায় তার দ্রুত জামিন প্রাপ্তি নিয়েও এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অতি অল্প সময়ে জামিন প্রাপ্তির ফলে পরবর্তীতে সন্ত্রাসী নুরুল আলম ক্যাম্প ভিত্তিক বিশাল বাহিনী গড়ে তুলে। জানা যায় তার বাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় বিদেশী রাইফেল-পিস্তল থেকে শুরু করে মারাত্মক সব আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
টেকনাফ রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক কায়সার পারভেজ জানান, এই স্বশস্ত্র রোহিঙ্গাদের এখনই নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে একসময় তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিবে। এখনই কঠোর হাতে তাদের দমন করতে না পারলে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ ফিলিস্তিনের পরিনতি ভোগ করবে বলে আশংকা করছেন তিনি।
ইয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
Developed By Muktodhara Technology Limited