শিরোনাম
ঢাকা ব্যুরো | ২৩:৩৩, মার্চ ৩, ২০১৯
ঢালাও ভাবে অভিযান চালালেও অনেক প্রভাবশালী বা প্রতিমন্ত্রীর ফ্যাক্টরীর রাসায়নিক ও দার্হ্য পদার্থ সরাতে সিটি কর্পোরেশন তাদের কারখানা বা গোডাউনে কোন অভিযান চালাচ্ছে না, অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ী মহল থেকে। গত তিন দিনে শুধু বংশাল, চকবাজার আর লালবাগ থানা এলাকায়ই অভিযানে সাতচল্লিশটি গোডাউন-কারখানার গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।উনত্রিশটি দার্হ্য ও রাসায়নিক কেমিক্যাল আাবাসিক এলাকা বা বাসা-বাড়িতে মওজুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দুই হাজার দশ সালের তিন জুন নীমতলির ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে একশত পচিশ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হলেও দশ বছরে ও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে গোডাউন না সরলেও এখন মাত্র দশ দিন না যেতেই ঢাকা দঃ সিটি কর্পোরেশন অন্ততপক্ষে পনেরোটি সংস্হার সম্বনয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার হতে শুরু হওয়া এই অভিযান বাস্তবায়নে পৃথক পৃথক পাচটি টিম গঠন করেছে। এই পাচটি টিমের সমন্বয়করা হলেন টিম একের জুনায়েত আমিন, দুই এর ডাঃমুস্তাফিজুর রহমান, টিম তিন এর সাইফুল ইসলাম, টিম চার এর আসাদুজ্জামান এবং টিম পাচ এর উদয়ন দেওয়ান।এই টিমগুলোর সমন্বয়ে একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন অভিযুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গোডাউনগুলোতে নিষিদ্ধ আইটেম পাওয়া গেলেই গ্যাস, বিদুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মালামাল সরিয়ে নিতে সময় দেয়া হচ্ছে। শহীদ নগরের বিভিন্ন গলি এবং বৌ বাজারের আটটি কারখানার ইউটিলিটি সুবিধা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুবর্ণা শিরিন এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
এদিকে শনিবার চকবাজার থানা এলাকার ১৬/২ জয়নাগ রোডের একটি গোডউনে টাস্কফোর্সের একটি টিম অভিযান চালাতে গেলে ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। বিষয়টি মেয়র অবহিত হলে নিজে উপস্থিত থেকে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হারুন-অর-রশিদ, এইচ এম রিদওয়ান এবং এফবিসিআই এর প্রতিনিধিত্বকারী পরিচালক আবু মোতালেব টাস্কফোর্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাক- বিতন্ডায় লিপ্ত হন। মেয়র সাঈদ খোকন আবু মোতালেবকে উদ্দেশ্য করে বিষয়টি একজন বিএনপি নেতার বাধাদানের অভিযোগ করেন।
নগর বিএনপির নেতা এবং এফবিসিআই এর পরিচালক আবু মোতালেব মেয়রের এই অভিযোগে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে হয়রানি না করার জন্য আমরা নগর ভবনের বৈঠকেও বলেছি। এছাড়া এটাকে রাজনৈতিক রং দেয়া দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা সব সময় সরকার এবং মেয়রকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোয়ে সহযোগিতা কথা বলে এসেছি।পাশা-পাশি ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি না করা হয় সে কথাও বলেছি। সারা জীবনের গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা গোডাউনগুলোতো রাতা-রাতি অন্যত্র নেয়া সম্ভব নয়। আমাদের এই ন্যায্য কথা যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে মেয়র দেখেন তবে দুঃখ জনক।
এদিকে বিকেলে মিটফোর্ড কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা সভা করেছে হয়রানির বিরুদ্ধে। তাদের সাফ কথা সময় দিতে হবে।
এদিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, গোবিন্দ দাস লেন এবং পোস্তা এলাকায় বহু রাসায়নিক কেমিক্যাল এবং দার্হ্য পদার্থের গোডাউন রয়েছে। কিন্তু টাস্কফোর্সের টিম শুধু লালবাগ আর চকবাজারের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে। পোস্তায় একজন প্রতিমন্ত্রীর রাসায়নিক এবং দার্হ্য পদার্থের সমন্বয়ে রাবার ফ্যাক্টরি থাকলেও সেদিকে অভিযান চালানো হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কারো কারো মতে একটি মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের নিষিদ্ধ রাসায়নিক কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর নামে ব্যবসায়ীদের ক্ষেপিয়ে তুলছেন সরকারের বিরুদ্ধে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যেখানে টায়ারের ফ্যাক্টরী, রং কারখানা, সলিউসন, ফোম, স্যান্ডেলের সোলের কারখানা মালিকরা অবাধে তাদের কারাখানা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এই দুই চারটি কেমিক্যাল টার্গেট করে শুধু লালবাগ আর চকবাজারের কয়েকটি গলির গোডাউনে অভিযান কেন? এ প্রশ্ন অনেকেরই।
এছাড়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে তদন্ত কমিটিগুলো এখনো চুরিহাট্রার আগুনের কারণ নির্নয় করতে পারেনি, সেখানে তখন সিটি কর্পোরেশন শুধু ব্যবসায়ীদের কেমিক্যাল গোডাউন টার্গেট করে মুল বিষয়টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর চেষ্টা করছেন।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মনে করেন বড় বড় রাঘববোয়ালদের বাঁচাতে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে তাদের রাজপথে নামিয়ে অভিযান ব্যর্থ হলে যেন ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করার কৌশল। তাদের জন্যই কেমিক্যাল গোডাউন সরানো যাচ্ছে না।ব্যবসায়ীরা মনে করেন অবশ্যই ক্ষতিকর কেমিক্যালের গোডাউন নিরাপদ স্হানে সরিয়ে নেয়ার পক্ষে সবাই। তবে ঢালাও অভিযানে সবাইকে ক্ষুদ্ধ করে যেন নিষিদ্ধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে না যান সেটাই সকলের প্রত্যাশা।
Developed By Muktodhara Technology Limited