image

আজ, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

চিনি ও খেজুরে দুশ্চিন্তা

ডেস্ক    |    ১২:৫০, এপ্রিল ১৭, ২০১৯

image

দেশে চলতি বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের আমদানি বেড়েছে। ফলে আগামী রমজান মাসে বাড়তি চাহিদা তৈরি হলেও মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। তবে রমজানে প্রয়োজনীয় দুই ভোগ্যপণ্য চিনি এবং খেজুরের আমদানি তুলনামূলক কম হয়েছে। তাই এ দুই পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কৃত্রিমভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা কারসাজি করে রোজায় কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

তার মধ্যে যদি দুটি প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কম থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। আমদানি কমের কারণ দেখিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য দুটির দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিষয়টি সরকারকে জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (বিটিসি) ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও দেশের বাজারদরের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা যায়, দেশের চাহিদার তুলনায় অধিকাংশ পণ্যের আমদানি স্বাভাবিক।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানি বেশি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চিনি ও খেজুরের আমদানি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে। গত রোজার সামনে রেখে চিনি ও খেজুর আমদানি হয় ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ১৮১ টন। এবার এসেছে ১২ লাখ ৬ হাজার ৭৬১ টন। অর্থাৎ গত রোজার তুলনায় এবার ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪২০ টন কম আমদানি হয়েছে। তবে অন্য চার ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা ও মসুর ডাল চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত চিনি আমদানিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৩২ টন। এ সময় ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৬ টন চিনির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময় চিনির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮৬ ও ১৭ লাখ ১৮ হাজার ২৩৬ টন। সে হিসাবে চিনির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৪ ও ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টন। একইভাবে খেজুরের এলসি খোলা হয়েছে ২৩ হাজার ৪১২ টন। এ সময় ১৩ হাজার ৪৪৫ টন খেজুরের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময় খেজুরের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ২৯ হাজার ৪৫২ ও ২৪ হাজার ৯৪৫ টন। সে হিসাবে খেজুরের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে ৬ হাজার ৪০ ও ১১ হাজার ৫০০ টন।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রোজার মাসেই এ চাহিদা ৩ লাখ টন। একইভাবে দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রোজার মাসে চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার টন। এখন পর্যন্ত দেশে উভয় পণ্য আমদানিতে যে পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

আগামী ৬ মে পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। মাসটি ঘিরে ইতোমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে রমজানে অত্যাবশ্যকীয় ৬টি পণ্যের আমদানিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এবার চিনি ও খেজুরের আমদানি কম হয়েছে। তবে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা, মসুর ডালের আমদানি পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্যের পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ থাকলেও প্রতি রমজানে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়।

এবার তো দুই পণ্যের আমদানিও কম। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের কারসাজির মাধ্যমে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। যদি ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ায় তবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সাধারণত রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে কেউ যেন কৃত্রিমভাবে পণ্যের সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যদিও ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ট্যারিফ কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানে চাহিদা প্রায় ৩ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্যতেলের এলসি খোলা হয়েছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩৬ টন। এ সময় ১৫ লাখ ৮ হাজার ৫৪০ টন ভোজ্যতেলের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ভোজ্যতেলের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ ও ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৩ টন।

সে হিসাবে গত রোজার তুলনায় ভোজ্যতেলের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি উভয় বেড়েছে। একইভাবে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানে চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৫ টন। এ সময় ৮ লাখ ২৩ হাজার ৩৬৮ টন পেঁয়াজের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময় পেঁয়াজের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯২ ও ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫৭ টন। সে হিসাবে পেঁয়াজের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথেষ্ট সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশে ছোলার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানে চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ছোলার এলসি খোলা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪২৪ টন।

এ সময় ১ লাখ ২২ হাজার ৮০৯ টন ছোলার এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময় ছোলার এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ ও ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টন। সে হিসাবে ছোলার এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথেষ্ট সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশে মসুর ডালের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানে চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত মসুর ডালের এলসি খোলা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৯০৫ টন। এ সময় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৮ টন মসুর ডালের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময় মসুর ডালের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি যথাক্রমে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬৯ ও ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৪ টন। সে হিসাবে মসুর ডালের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি উভয় বেড়েছে।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারো বাজারের চেয়ে বেশ কিছুটা কমমূল্যে রমজানে পাঁচটি পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। এরই মধ্যে মজুত করা হয়েছে তেল, চিনি, মসুরডালসহ পাঁচটি পণ্য। সব মিলিয়ে রোজায় প্রায় চার হাজার টন পণ্য বিক্রি করবে এ প্রতিষ্ঠান। তবে এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে সাড়ে আট হাজার মেট্রিক টন পণ্য। রোজার চাহিদা মিটিয়ে বাকি পণ্য বিক্রি হবে সারাবছর। রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগ থেকে শুরু হবে পণ্য বিক্রি।

নিজস্ব ডিলার এবং ট্রাকে সারাদেশে চলবে বিক্রি কার্যক্রম। বাজার মূল্যের চেয়ে পণ্য ভেদে কেজিপ্রতি দামের পার্থক্য থাকবে ৫-১০ টাকা। তিন হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনির মজুত করেছে টিসিবি। তবে রোজার মাসে এ পণ্য বিক্রি লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮০০ মেট্রিক টন। দুই হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের মজুত করা হলেও রোজার মাসে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক টন। মজুত করেছে ১২০০ মেট্রিক টন মসুর ডাল। আমদানির জন্য পাইপলাইনে রয়েছে আরো ৭৫০ মেট্রিক টন ডাল। বিক্রি করা হবে ছোলা ও খেজুরও। এরই মধ্যে ১৫০০ মেট্রিক টন ছোলা গুদামজাত করেছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। আর রোজার আগে কেনা হবে ১০০ মেট্রিক টন খেজুর।

সূত্র : মানবকন্ঠ



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

২০:১৯, অক্টোবর ৮, ২০২১

আবিষ্কারের বিস্ময় বালক বাঁশখালীর আশির, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা


Los Angeles

২১:৩৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

করোনাকালে বাল্যবিয়ে : পড়ালেখায় ইতি টেনে অনেক কিশোরী এখন পুরোদস্তুর সংসারী


Los Angeles

১৯:১৫, অক্টোবর ৩, ২০২১

দিন দিন বেপরোয়া-ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা


Los Angeles

২০:১৬, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১

উন্নয়ন সমৃদ্ধির রোল মডেল বাংলাদেশ- জেনেভায় ভূমিমন্ত্রী


Los Angeles

১৭:১২, মে ২৬, ২০২১

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট


image
image