শিরোনাম
জাহেদুর রহমান সোহাগ, রাঙ্গুনিয়া সংবাদদাতা | ০০:৫২, এপ্রিল ২১, ২০১৯
রাঙ্গুনিয়ায় নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ১৪ বছর বয়সের পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার । বাবা-মা জোরপূর্বক তার বিয়ের আয়োজন করলে সে বিষয়টা সাহস নিয়ে প্রধান শিক্ষককে জানায়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা শিক্ষার্থী শারমিন আকতার ।
দুপুর ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান ফেজবুকে স্ট্যাটাস দেন “বালিকা, তোমার সাহসিকতায় মুগ্ধ। ” এরপর থেকে রাঙ্গুনিয়ায় আলোচনায় আসে শারমিন আকতার । সৎ সাহসের জন্য শারমিন ও তৎক্ষনিক সহযোগিতার জন্য রাঙ্গুনিয়ার ইএনও জনগনের প্রশংসায় ভ’ষিত হন ।
শারমিন বলেন, ‘পরিবারে আমি একমাত্র মেয়ে। আমার বাবা ভ্যান চালায়, বড় ভাই সিএনজি অটোরিক্সা চালক ও মেঝো ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। হঠাৎ মা-বাবা আমার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি বলছি যে, আমি ছোট, এখন বিয়ে নয়, পড়ালেখা করবো। তাছাড়া আমার এক জায়গায় বিয়ে হলে তোমরা তো বুঝবে না যে স্বামীটা ভাল। যদি স্বামী খারাপ হয়, আমাকে ছেড়ে দে, তারপর! কিন্তু তারা শোনে নাই’।
বাবা কথা না শোনায় অবশ্য দমে যায়নি সে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাহায্যে স্থানীয় প্রশাসনকে তার বিয়ের কথা জানায় শারমিন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে থেমে যায় বিয়ে। তার এমন সাহসিকতায় মুগ্ধ সকলে।
সে আরও বলে, ‘মনে হচ্ছিল বিয়ে হলে জীবনটা এখানেই শেষ। আমি পড়ালেখা করে আরও বড় হতে চাই।’
‘উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড কাদেরীয়া পাড়া এলাকার মো. মিজানের দুই ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সন্তান শারমিন আক্তার। সে বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ সভাপতি মফজ্জল আহমদ কন্ট্রাক্টর বলেন, শনিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে ছাত্রীটি এসে কান্না করছিল এবং বলছিল, বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করেছে এবং রবিবার ফেনীতে নিয়ে আপন খালাতো ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে দেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি নিজে গিয়ে বাল্যবিয়েটি বন্ধ করে দেন।’
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে আমি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ফোন পেয়ে শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ঠ সকলকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। তার পরিবারকে বাল্যবিয়ের কুফল ও নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝালে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। পরে মুচলেকা নিয়ে বাল্যবিয়েটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও সম্পূর্ণ বিনা খরচে স্কুলে তার পড়ালেখা নিশ্চিত করা হয় এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তার খোজখবর রাখার জন্য দায়িত্ব দিয়ে আসি। আমি শারমিনের সাহসিকতায় মুগ্ধ। এভাবে যদি সবাই সাহস নিয়ে এগিয়ে আসে তবে দেশে বাল্যবিয়ে শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে।’
Developed By Muktodhara Technology Limited