শিরোনাম
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী সংবাদদাতা | ১৬:২১, মে ১১, ২০১৯
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সারা বছরই থাকে পল্লীবিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজি।রমজানের শুরুতেই বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তাদেরকে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রদান করলেও বন্ধ হয়নি বিদ্যুৎতের ধারাবাহিক ভেল্কিবাজি। চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ ও রমজানের ঈবাদত বন্দেগীর অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাস মাহে রমজান। ঈবাদতের জন্য রাত্রি জাগা থেকে শুরু করে সারাদিন মগ্ন থাকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ। তারাবীর নামায, সেহরী ও ইফতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাঁশখালী জুড়ে লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে। বছরের সারা মাসে বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজিতে এমনিতেই অতিষ্ট বাঁশখালীবাসী। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা এমনকি রাতেও বিদ্যুৎতের লুকোচুরি চলে দীর্ঘ বিরতীতে। একদিকে প্রচন্ড গরমের সঙ্গে বাঁশখালী জুড়ে চলছে নতুন নিয়মে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অফিস আদালতে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শিশু-বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল অসুখে। গত একমাসে দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসীর।উপজেলার প্রায় ৬৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুতের এসব অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর সাথে যদি কালবৈশাখীর একটু বাতাস হয় তবে বিদ্যুৎ অফিসের আর কোন দেখা মিলে না। অঘোষিত গাছ কাটার নামে, জড়ো-হাওয়ার অজুহাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বিদ্যুৎ আর আসে না। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় যেন বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি। এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আসতে না আসতেই বন্ধ হয়ে যায় অন্য এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে লাইট, টিভি, ফ্রিজ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে গ্রাহকদের।
পল্লী বিদ্যুৎ বাঁঁশখালী জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজারেরর অধিক। তন্মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৫৩ হাজার, বাণিজ্যিক ৬ হাজার, দাতব্য প্রতিষ্ঠান দেড় হাজার, বিভিন্ন ধর্মীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ ৫ শতের অধিক ও সেচ সংযোগ রয়েছে ৪৮৩ টি (যার বেশ কয়েকটি পানীয়জলের জন্য ব্যবহার করা হয়) । বাকীগুলো নতুনসংযোগ। এছাড়া রয়েছে পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি। ৩৩/১১ কেভি উপ-কেন্দ্র ১টি (২০ এমভিএ)। বর্তমানে কয়েকটি সাব স্টেশন চালু রয়েছে। তবে এ সমস্ত সাবস্টেশন গুলোতে সর্বোচ্চ লোড ১৭.৫০ মেগাওয়াট। ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভাসহ ৩৯৭ বর্গ কিলোমটার আয়তনের এ উপজেলার প্রায় ১৫০ টির ও অধিক গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎতের ডিজিএম মো. নাঈমুল হাসান।
বাঁশখালীর সাধারণ জনগণ বহুদিন যাবৎ বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায় বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ও দালাল চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতি মিটারে অতিরিক্ত টাকা আদায়, পাড়ায় পাড়ায় মুরগি, গরু, মাছের খামারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রধান করেছেন কিছু অসাধু চক্র। সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে গাছ কাটার অভিযোগ এনে সারাদিন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে রাখছে। চাম্বল বাজার ব্যবসায়ি ইউসুফ বলেন, "রমজানে ঘনঘন লোডশেডিং আমাদের জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকেনা। শনিবার (১১মে) সকাল সাড়ে ৭য় বিদ্যুৎ চলেগেছে। বেলা ২টা গড়ালেও বিদ্যুতের দেখা নেই।"
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন- "বাঁশখালীতে যেই হারে বিদ্যুৎতের সমস্যা হয় আমার চাকুরী জীবনে আমি আর কোথাও দেখিনি। আমাদের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জেনারেটর থাকলেও সরকারী ভাবে তেমন কোন জ্বালানি তেল এর ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্ধকারে রূপধারণ করে এবং অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুতের ব্যাপক হারে লোডশেডিং এর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীরা তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ে। যেখানে রোগীরা একটু সুস্থতা পাওয়ার জন্য সেবা নিতে মেডিকেলে আসে অথচ সেখানে রোগীরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আরো অসুস্থতা ভোগ করে। অনেক সময় অপারেশন করতে গেলে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টার বিদ্যুৎ থাকে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রক্ত, প্রসাব ও কফসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ও ব্যাপক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।"
বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–১ বাঁঁশখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নাইমুল হাসান সিটিজি সংবাদকে জানান- "বাঁশখালীতে যথেষ্ট বিদ্যুতের চাহিদা থাকা স্বর্ত্বেও সে হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছেনা। অনেক সময় সংযোগ তারে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে গিয়ে সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে কাজ করতে হয়। তবে চেষ্টা করি সর্ব্বোচ্চ বিদ্যুৎসেবা প্রদান করতে। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের বর্তমান সমস্যা আমাদের সৃষ্ট না। এটি চন্দনাইশ গ্রিডের সমস্যা। কারণ দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। তবে গুণাগুরি থেকে সাতকানিয়া হয়ে রাস্তা গুলো পাহাড়ী এবং অতিরিক্ত খারাপ হওয়ায় বিভিন্ন সময় জনবল সংকট হওয়ার কারণে ত্রুটির সৃষ্টি হয়। যার ফলে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়ে থাকে। এ গ্রিডে ৩০ মেগাওয়াট লোড নিতে পারে। এর মধ্যে ইনকামিং ব্রেকারে কারিগরি সমস্যার কারণে তা সম্পূর্ণ লোড নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে আমরা চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এতে লোডশেডিং হচ্ছে অতিরিক্ত।" তিনি আরো বলেন- "৩৯৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বাঁশখালীতে চাহিদা অনুসারে দৈনিক ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন অতচ সেখানে আমরা পাচ্ছি মাত্র ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আমাদের উপজেলা সদরের জোনাল অফিস ও সাবস্টেশন সহ ৫ টি অফিস মিলে মাত্র ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে তা দিয়ে আমরা পুরো বাঁশখালীতে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছি। অন্তত আরো ১২ থেকে ১৫ জন জনবল আমাদের দরকার। লাইনম্যান আছে মাত্র ২২ জন, স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে গেলে অন্তত আরো ৮ থেকে ১০ জন লাইনম্যান প্রয়োজন। ইলেকট্রেশিয়ান রয়েছে মাত্র ২৪ জন, আরো ২৬ জন ইলেকট্রিশিয়ানের প্রয়োজন। জনবল ঘাটতি থাকার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইলেকট্রিশিয়ান যদি আরো বৃদ্ধি পেত তাহলে দালালের সংখ্যাও কমে যাবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাঁশখালীতে ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে, জনজীবন অতীষ্টের মধ্যে জিবনযাপন করছে। বাঁঁশখালীতে বিদ্যুৎতের প্রতিদিনের লোডশেডিং নিয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার খবর আমি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে সাবস্টেশন চালু করা হয়েছে। বাঁশখালীর জনগণের দৌড়গোড়ায় বিদ্যুৎ পৌছিয়ে দিতে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। খুব শিগ্রই লোডশেডিং কমে যাবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited