image

আজ, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নেতৃত্বহীন বিএনপিতে চেইন অব কমান্ড নেই

ইকবাল কবির, ব্যুরো চীফ (ঢাকা)    |    ২২:৪৫, মে ১২, ২০১৯

image

জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব দানকারী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী আর তারেক রহমানের দীর্ঘ সময়ে বিদেশে অবস্হানে মূলতঃ বিএনপি এখন নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে।সেই সঙ্গে দলে নেই কোন চেইন অব কমান্ড।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মীর্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমানউল্লাহ আমান এদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কার বেশী আস্হা ভাজন সেটাও গুরুত্ব বহন করে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রিয় ভাজন নেতারাও মুল্যায়িত হন না। দলের ভেতরে থাকা সিনিয়র নেতাদের এ উপ-দলীয় বলয়কে ঘিরেই গড়ে উঠে দলের সহযোগী সংগঠন গুলোর নেতৃত্ব। যে যার অধিপত্য বিস্তার করে সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব গড়তে পারেন দলে তার তত প্রভাব গড়ে উঠে। এর বাইরে রয়েছে আঞ্চলিক ভিত্তিক গ্রুপ।যার প্রভাব কেন্দ্রীয় ও দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকে।আর এ সকল উপ-দলগুলোর আস্হা অর্জনের পরিসমাপ্তি ঘটে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পছন্দ- অপছন্দের উপর। তাই সঠিক বা যোগ্য নেতৃত্বের কোন মূল্যায়ন হয় না বলেই দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করেন। তাই জিয়া পরিবারের একজনকে জেলে আরেকজনকে প্রবাসে রেখে দেশে অর্ধ ডজন উপ-দলীয় নেতার নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে আগামীতে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে কতটুকু সফল হতে পারবে এটাই এখন দেখার বিষয়।

গত একযুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা, সেই সঙ্গে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাভোগ এবং দলের উত্তরসুরী তারেক রহমানের দন্ড মাথায় নিয়ে বিদেশ অবস্হানকে কেন্দ্র করে বস্তুতঃ দলটি এখন একক নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সম্প্রতি ত্রিশ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে জয়ী পাঁচ জনের শপথ গ্রহন ও জাতীয় সংসদে যোগদানকে কেন্দ্র করে দলের হাই-কমান্ডের সিদ্ধান্তহীনতা এবং নেতৃত্বহীতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে বিশ দলীয় জোট এবং ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নিয়ে শুরু হয়েছে জোটবদ্ধ থাকা না থাকার মান-অভিমানের রাজনৈতিক খেলা। এই খেলার শেষ কোথায় তা রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নেতারাও আঁচ করতে পারছেন না। গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ হতেই বিএনপি হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়াকে কেন্দ্র করে ঐক্য ফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটে শুরু হয় বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলা। এরই মধ্যে আন্দালিব রহমান পার্থ বিশ দলীয় জোট ত্যাগের ঘোষনা দেন। জোট ত্যাগীর ক্ষোভ, তাদের  সঙ্গে কোন আলোচনা না করে কেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শপথ নেয়ার অনুমতি দিলেন। পাঁচ জনের শপথ নেয়া এবং মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথ না নেয়ার নেপথ্যে রয়েছে বিএনপির নানা উপ-দলের ষড়যন্ত্রের ফসল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্হায়ী কমিটির দুই সিনিয়র নেতা যাদের নামের আদ্যক্ষর ম এরা দলের পদবঞ্চিতদের একত্রিত করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করেছেন, মীর্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির নির্বাচিত পাঁচ জনই শপথ নিয়ে সংসদে যোগদান করছেন। লন্ডন থেকে তারেক রহমান বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর শুরু করলে এ নিয়ে শুরু হয় বিএনপির নেতৃত্বে থাকা নানা গ্রুপের নানামুখি তৎপরতা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন বিষয়টি বুঝতে পারেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এরা পাঁচ জন শপথ নিবেনই। কারণ হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যুক্তি দেখিয়েছেন তারা নিজ নিজ এলাকায় জয়ী হয়ে যদি সংসদে না যান, তবে আগামীতে এরা আর জয়ী হতে পারবেন না। সেই সঙ্গে পাঁচ বছর সংসদে থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে তাদের শত্রুতা বা বৈরী মনোভাব কমে আসবে এতে দলই লাভবান হবে। আর সংসদে না গেলে না তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। এছাড়া বিশেষ মহলের চাপও ছিলো তাদের শপথ নেয়ার জন্য। যদিও এ চাপ কোন মহলের ছিলো এটা কেউ প্রকাশ করতে চান না। এছাড়া সরকার যদিও দল ভাঙ্গার কথা বার বার অস্বীকার করে তবুও এ সুযোগ তারা নিতে চাইবেন, এটা এখন ওপেন সিক্রেট। কারণ সরকারের মন্ত্রী এমপি ও নেতারা বলে আসছেন অপেক্ষা করুন বিশ দলীয় জোট থেকে আরো অনেকেই বের হয়ে আসবেন।যতদুর জানা যায়, বিএনপির এই পাঁচ সংসদ সদস্যকে দিয়েই বিএনপি বিভক্তির বিষয়টি চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো। প্রথম শপথ নেয়া ঠাকুরগাঁওয়ের জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হলেও শেষ দিনে শপথ নেয়া চারজনের কাউকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি।বহিষ্কার হলেই এরা সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী বিএনপি দাবি করে একটি বিএনপির সৃষ্টি করতো বলে আভাস ছিল। যেমনটা ঘটেছিলো ৯৬ এ সংসদে। এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি নিয়ে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই শেষ সময়ে নিজের নেতৃত্ব ও দলে তার কমান্ড ধরে রাখার স্বার্থে তার অনুমতি নিয়েই শপথ বলে চালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। আর দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীদের একহাত দেখাতে এবং তারেক রহমানের আস্হা অর্জনে দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি। তাই দলের ভাঙ্গন ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ বলে জানা গেছে।

মূলতঃ বিএনপির চেইন অব কমান্ড বলে কিছুই নেই, এমনটাই মনে করছেন দলের বেশীর ভাগ শীর্ষ নেতাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, জেলা কমিটিগুলো গঠনে স্হানীয় নেতাদের মতামতের কোন মুল্যায়ন নেই। ঢাকায় বসে পদ বেচা- কেনা করে নেতাদের কয়েকজন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে দলের তৃণমূলে অসন্তোষ বাড়ছে, যোগ্যরা মুল্যায়িত না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন। বিগত বারো বছরে দলটির প্রতি জনসমর্থন থাকলেও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলনের কোন সফলতা দেখাতে পারেনি দলটি, এমনটাই মনে করেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

মাঠ পর্যায়ের নেতা- কর্মীদের অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নানা উপ-দল গ্রুপের কারণে একেক নেতার একেক পন্থী হিসেবে দলে পরিচিতি গড়ে ‍উঠেছে। আর এই পীর- মুরিদদের কারণে বিএনপি মুলত একটি নেতৃত্বহীন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র নেতা বলেন, চার এমপির শপথের দিন বিএনপির পল্টনের অফিসে একটি গ্রুপ মীর্জা ফখরুল ইসলামকে সরকারের দালাল আখ্যায়িত করে তার উপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করতে গিয়ে জানতে পারেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের  নির্দেশেই শপথ নিচ্ছেন, তখন হতাশ হয়ে তারা ফিরে আসেন। এভাবে এই দল গত দশ বছর ধরে শীর্ষ নেতাদের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে বিভক্ত। যার ফলে সঠিক নেতৃত্বের অভাবেই দলটি এখন চরম ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছেছে।

শপথ নেয়ার প্রশ্নে দলীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নেয়ার আশংকায় গত ৪মে দলের স্হায়ী কমিটির সভাও স্হগিত করা হয়। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দশ দিনের একটি কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। গত দশ বছরে একের পর এক সরকার পতনের বৃহত্তর আন্দোলনের কথা বলা হলেও মূলত দলটির কর্মসূচি চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আগামী অক্টোবরের কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল হতে মতামত নিয়ে দলকে ঢেলে সাজানো ও যোগ্য নেতাদের মুল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিদেশে থেকে দেশের রাজনীতির বাস্তবতা উপলব্ধি না করে কাগজ কলমে নেতাদের প্রোফাইল দেখে বানানো কমিটি কতটুকু কার্যকর হবে সেটা সময়ই বলে দিবে।

এদিকে বিএনপি নেতাদের মাঝে রয়েছে একাধিক গ্রুপ। সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতারা একেকজন একেক সিনিয়র নেতার অনুসারী। দলে তিনি অমুকের লোক, তিনি তমুকেল লোক হিসেবেই পরিচিত। পৃথক পৃথক উল্লেখযোগ্য এই সিনিয়র নেতারা হলেন, ব্যারিষ্টার মওদুদ, ড.মোশাররফ হোসেন,মির্জা আব্বাস।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

০১:১৭, মে ১৪, ২০২২

বাঁশখালী ইউপি নির্বাচনে নৌকায় শেষ হাসি যাঁদের


image
image