শিরোনাম
মালেক রানা, কর্ণফুলী সংবাদদাতা | ০৪:১৩, মে ২৩, ২০১৯
নিত্য নতুন মডেলের বাইক কিনতে মোটর সাইকেলের শো রুমে আর যেতে হয়না। কেন না হাত বাড়ালেই কর্ণফুলীতে মিলছে কম ম‚ল্যে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটর সাইকেল। যাকে স্থানীয় ভাষায় টানা বা কাটা গাড়ি বলে থাকেন।
সমপ্রতি এ উপজেলার মইজ্জ্যারটেক মোড়ের ক্যাফের ফরহাদের সামনে, আনোয়ার সিটি-নুর মার্কেট ও হাজী টাওয়ারের মার্কেট চত্বর, পুরাতন ব্রীজঘাট স্টেশন, ইছানগর বাজার-বিএফডিসি সড়ক, শিকলবাহা কলেজ বাজার ও মাস্টার হাট এমনকি বোর্ড বাজার সহ বিভিন্ন মার্কেট ও অফিসের সামনে নম্বর প্লেটবিহীন অন টেস্ট লেখা অসংখ্য মোটর সাইকেলের দেখা মিলে।
এদের মধ্যে পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী অসংখ্য মোটর সাইকেল আরোহীকে দেখা যায়। যাদের বেশির ভাগই নিয়মনীতি তেয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে এসব চোরাই মোটর সাইকেল নিয়ে সড়কে চলাচল করছে বলে জানা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, এসব চোরাই গাড়ির বেশির ভাগই দিনে একজনের হাতে থাকলেও রাতে একই গাড়ি অন্যজনে চালাতে ও দেখা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, রাত বাড়ার সাথে সাথে সড়কে এসব গাড়ির সংখ্যাও রহস্যজনকভাবে বেড়ে যায়। স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নাম পরিচয়হীন এসব টানা গাড়ি দিয়ে নাকি অনেকে আবার ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত।
দীর্ঘদিন যাবত কর্ণফুলীতে এসব অবৈধ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা গাড়ির ব্যবহার থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ কিংবা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা না হওয়া এবং নীরব ভূমিকায় দিন দিন কর্ণফুলীতে চোরাই মোটর সাইকেল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে স্থানীয়রা জানায়।
সূত্র জানায়, ভারত থেকে কুমিল্লা,ফেনী ও নোয়াখালী সীমান্ত পথে এসব চোরাই মোটর সাইকেল কর্ণফুলীতে প্রবেশ করে। পরে একটি মোটর সাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আলাদা আলাদা ভাবে রাউজান গহিরা হয়ে এলাকায় এসে পরিণত হয় সম্পূর্ণ মোটর সাইকেলে । এসব গাড়িতে আবার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও ভূয়া নেম প্লেট ও ছাঁটানো হয়। অনেক সময় অন্য একটি বৈধ গাড়ির কাগজের ফটোকপি দেখিয়ে চলছে একের অধিক মোটর সাইকেল। অনেকে আবার ট্রাফিকের চোখ ফাঁকি দিতে ইঞ্জিন নং, চেসিস নং-ও নগরীর কদমতলীর বিভিন্ন ওর্য়াকশপ থেকে পরিবর্তন করে থাকেন বলে নাম প্রকাশ না করা একজন মোটর সাইকেল চালক তথ্য দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকা ছাঁড়িয়ে কর্ণফুলীতে চোরাই মোটরসাইকেলের রমরমা বাণিজ্য শুরু হয়েছে প্রায় ৬/৭ বছর আগে। এক শ্রেণীর সিন্ডিকেট ও চোরাকারবারীরা সীমান্ত পথে মোটরসাইকেল দেশের ভেতরে নিয়ে আসে পরে নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে কৌশলে নিয়ে আসে কর্ণফুলীতে এবং সুযোগ বুঝে বিক্রি করছে। সেসব বাইকে আবার ভূয়া নম্বর প্লেট এমনকি নকল রেজিষ্ট্রেশন নম্বর বসিয়ে বিনা বাধায় রাস্তায় চলাচল করছে। প্রশাসন যেন দেখেও দেখছেনা কারণ অনেক পুলিশ সদস্যের মোটর সাইকেল ও নাকি এ পথে আসা বলে কয়েকজন মন্তব্য করেন।
সোজা কথায়, কাটা পথে আসা টানা গাড়ি গুলো মাত্র ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে সিন্ডিকেট চক্রটি। যদিও এসব মোটর সাইকেলের বাজার মূল্য ২লাখ ১০ হাজার কিংবা ১ লাখ ৮৫ হাজারের মধ্যে। কখনো এর সঙ্গে ভূয়া কাগজ দেয় আবার কখনো কোন কাগজপত্র ছাড়াই বিক্রি করে। কম দামে পাওয়ায় কিছু লোকজন সেগুলো কিনে থাকে। এরপর অনেক ক্রেতা আবার থানা পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে ‘যোগসাজসে’ রাস্তায় চলাচল করে। বিশেষ করে উপজেলার চরপাথরঘাটা, চরলক্ষ্যা ও শিকলবাহা এলাকায় যে সমস্ত মোটর সাইকেল সড়কে চলে তার অধিকাংশই নম্বরবিহীন। এ বিষয়ে প্রশাসনের সর্তক নজর প্রত্যাশা করে এলাকার সচেতন জনগণ।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি স‚ত্র জানায়, কুমিল্লা এলাকার সীমান্ত ঘেঁষে অন্তত ১৫ টি চক্র রয়েছে। এ সব চক্রের কাজই হলো চোরাই পথে ভারত থেকে নিয়ে আসা মোটর সাইকেল বিক্রি করা। এর মধ্যে রয়েছে জিংফু, ডিসকভার, পালসার, সিবিজেড, বাজাজ, মাহিন্দ, ইয়ামাহা, টিভিএস এফজেড-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি তারা শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসে। ফলে গাড়ির ম‚ল্য কমে যায়। প্রতি গাড়িতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা কখনো কখনো লাখ টাকারও কেশি লাভ হয়ে যায়। ফলে অন্যদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার শুল্ক হারাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে কর্ণফুলী থানার অপারেশন অফিসার খন্দকার আওরঙ্গ জেব জানান, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা জুড়েই চোরাই মোটর সাইকেল ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করা হবে। এবং কারো কাছে চোরাই মোটরসাইকেল কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত এ রকম তথ্য থাকলে স্থানীয় থানায় জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।’
Developed By Muktodhara Technology Limited