শিরোনাম
মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ সংবাদদাতা | ০০:০৮, জুন ২, ২০১৯
চন্দনাইশ উপজেলার দুর্গম ধোপাছড়ি ইউনিয়নে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের চারদিন পর মোঃ রিয়াদ (৯) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত রিয়াদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ধোপাছড়ি এলাকায় বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিক মোঃ জাকারিয়ার ২য় পুত্র।
শনিবার ভোর আনুমানিক পৌনে ৬ টায় পশ্চিম ধোপাছড়ি এলাকার একটি গহীন পাহাড় থেকে রিয়াদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রহিম মোল্লা (৩০) কে আটক করেছে পুলিশ। আটক রহিম মোল্লা মিয়ানমারে নাগরিক। তার বাবার নাম অলি মিয়া।
সরেজমিন পরিদর্শনে পশ্চিম ধোপাছড়ি এলাকায় জাকারিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুত্রশোকে বিলাপ দিয়ে কাঁদছেন রিয়াদের মা ইসলাম খাতুন (২৮)। রিয়াদের মা বলেন, "রিয়াদ স্থানীয় মাদ্রাসায় হেফজখানায় পড়তো। গত সোমবার আমার অসুস্থতার কারনে সে বাড়ীতে আসে। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ীর পার্শ্ববর্তী পুকুরে তার ছোট ভাইয়ের কাপড়চোপড় ধৌত করতে গেলে অপহরণকারী রহিম মোল্লা পাখির বাসা থেকে পাখির ছানা নিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে পাহাড়ের চুঁড়ায় গভীর জঙ্গলে নিয়ে গেছে বলে প্রতিবেশীদের মুখে শুনেছি। পরবর্তীতে বুধবার সকালে ০১৮৮৫-৩০১০৯২ নাম্বার থেকে রিয়াদের বাবার মোবাইলে ফোন করে রিয়াদের মুক্তিপণ হিসেবে এক লক্ষ টাকা দাবি করে অপহরণকারী রহিম মোল্লা। বুধবার সকাল ১১.১৩ মিনিটে ০১৮৩৩-২৬০৫১৬ বিকাশ নাম্বার ও বিকাল ২.৩৯ মিনিটে ০১৮৩২-৯৮২৯৭২ বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলে সে। আমরা গরিব মানুষ, এক লক্ষ টাকা দেয়ার স্বামর্থ নেই জানিয়ে অনেক কাকুতি মিনতির পর ৩০ হাজার টাকা পেলে রিয়াদকে ছাড়বে বলে জানায় রহিম।"
রিয়াদের বাবা জাকারিয়া জানায়, "বেশ কিছুদিন আগে আমার ক্ষেতের ধান কাটার জন্য রহিম মোল্লা সহ কয়েকজন শ্রমিক নেই। সব শ্রমিকদের ৭০০টাকা বেতন দিলেও সে কাজ কম করায় তাকে ৬০০টাকা দরে বেতন দেই। তাতে রহিম মোল্লা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। আমার নিস্পাপ সন্তানের প্রাণ কেড়ে নিয়ে আমার উপর এমনভাবে সে প্রতিশোধ নেবে আমি ভাবতেও পারিনি।"
এব্যাপারে চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী বলেন, "গত ৩০ মে চন্দনাইশ থানায় জাকারিয়া বাদী হয়ে রহিম মোল্লাকে আসামী করে অপহরণ মামলা দায়ের করার পর মামলার সূত্র ধরে মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজারের রামু পাহাড়ী এলাকা থেকে রহিম মোল্লাকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অভিযান চালিয়ে পশ্চিম ধোপাছড়ি এলাকার একটি পাহাড়ের ঝোপজঙ্গল থেকে শনিবার ভোর পৌনে ছয়টায় রিয়াদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য রিয়াদের লাশ চমেকের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে ধোপাছড়ি ইউ.পি চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম বলেন, "নিহত রিয়াদের পরিবারও মিয়ানমারের নাগরিক এবং যারা অপহরণ করেছে তারাও মিয়ানমারের নাগরিক।'' ধোপাছড়ি ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার মিয়ানমারের নাগরিক বসবাসরত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ''আ.লীগ সমর্থিত একজন ইউ.পি চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে যেন মিয়ানমারের নাগরিকদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়।" রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে ধোপাছড়ির সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে বলে জানান তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited