শিরোনাম
মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ সংবাদদাতা | ১৮:৩৬, জুলাই ৭, ২০১৯
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময়, গ্রীষ্মে প্রচন্ড রোদে তীব্র তাপদাহে ছাতা সবার নিত্যসঙ্গী। নিন্ম আয়ের মানুষদের বেশিরভাগই পুরনো ছাতা মেরামত করিয়ে প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। সুঁই-সূতা, চট আর অকেজো ছাতা নিয়ে ফুটপাতের এক কোনে অবস্থান করে পুরনো ছাতা মেরামত করতে দেখা যায় কিছু মানুষকে। ওরা আর কেউ নয়, ওরা মৌসুমি ছাতা মেরামতের কারিগর। ছাতার কাপড় ও শিক বদল কিংবা তার কেটে যাওয়া সবকিছুই সারাতে পটু এরা।
রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার খান প্লাজার সামনে কথা হয় আনোয়ার মিয়া নামের একজন বয়োবৃদ্ধ ছাতা কারিগরের সাথে। আলাপকালে তিনি জানান, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রাম থেকে প্রতি বছর বৈশাখ মাসে দোহাজারীতে আসেন তিনি এবং আশ্বিন মাসে গ্রামে চলে যান। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া ১২০০ টাকা, এক রুমে পাঁচজন থাকেন। নিজ হাতে রান্না করে খাবার খান। রুমমেটদের মধ্যে তিনি ছাড়া বাকি চারজন গ্রামে ফেরী করে মনোহরী মালামাল বিক্রি করেন।
তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "দুই ছেলের মধ্যে একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী, অপরজন গ্রামের মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, তারা শ্বশুড় বাড়িতে সুখেই আছে।"
প্রতিদিন কত টাকা আয় হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কোন দিন পাঁচ শত টাকা, কোন দিন ছয় শত টাকা। যাঁরা ছাতা মেরামতের কাজ করেন, প্রচন্ড তাপদাহ, বর্ষা কিংবা বৃষ্টির যত বেশি ক্রন্দন, তত বেশি আয় তাঁদের। সারা বছর ছাতার কারিগরদের তেমন কোন কাজ থাকে না। গরমের সময় কিছুটা কাজ থাকে। তবে বর্ষাকালে ছাতার ব্যবহার বেশি হয় বলে কাজও বেশি থাকে।"
এক ছেলে প্রবাসে অন্য ছেলে শিক্ষকতা করে, বাড়িতে আরাম-আয়েশ করে দিনযাপন না করে নিজ জেলা থেকে এতদূরে অন্য জেলায় এসে এমন পরিশ্রম করছেন কেন ? এমন প্রশ্ন করতেই মৃদু হেসে তিনি জবাব দিলেন, "কোন কাজই ছোট না। চুরি-ডাকাতি করি না। ছেলেদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, হালাল পথে উপার্জিত টাকা দিয়ে দিনাতিপাত করতে চাই।"
বয়োবৃদ্ধ আনোয়ারের আত্মপ্রত্যয়ী কথা শুনে পার্শ্ববর্তী এক দোকানী বলে উঠলেন, "এভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যদি কোন কাজকে ছোট মনে না করে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যায় তবে আমাদের দেশ অবশ্যই সমৃদ্ধশালী হবে।"
Developed By Muktodhara Technology Limited