শিরোনাম
মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ সংবাদদাতা | ০০:৫৭, জুলাই ১৪, ২০১৯
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় টানা আট দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শঙ্খনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র বেগে লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার দক্ষিণ হাশিমপুর ইউনিয়নের বড়পাড়া পাঠানিপুল এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহসড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দূরপাল্লার ও আভ্যন্তরীন যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি আভ্যন্তরীন সড়ক ছিড়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
শনিবার (১৩ জুলাই) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গত আট দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শঙ্খনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার ষ্টেশন রোড, দোহাজারী-লালুটিয়া-চৌকিদারফাঁড়ি সড়কের কোথাও কোমড় সমান পানি, কোথাও হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে জরুরী প্রয়োজনে দোহাজারী বাজারে আসছে মানুষ। এদিকে দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া, রায়জোয়ারা, পূর্ব দোহাজারী, বাবু খান বাড়ি, দিয়াকুল, বারুদখানা, লালুটিয়া, জামিজুরী, ঈদপুকুরিয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ঢলের পানি তীব্র গতিতে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানির স্রোতে বড়ুয়া পাড়া এলাকায় ২০ ফিট যায়গা জুড়ে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে দোহাজারীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওই এলাকার লোকজন। এদিকে উপজেলার সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর, বৈলতলী, বরমা, কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল ডুবে প্রায় হাজার হাজার বসতঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। এসব এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এক প্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবারের লোকজন। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে সরে যেতে দেখা গেছে। দোহাজারী কিল্লাপাড়া এলাকার রাবেয়া বেগম নামের এক নারী জানান, "আমার অসুস্থ্য ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। পানি বেড়ে যাওয়ায় সড়কে কোন যানবাহন না থাকায় কোমড় সমান পানির মধ্য দিয়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।" বড়ুয়া পাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা অনিল বড়ুয়া বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় বড়ুয়াপাড়া সংলগ্ন এলাকা পানিতে ডুবন্ত থাকে। কালভার্ট না থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তীব্র স্রোতে সদ্য সংস্কার করা সড়কটি ২০ ফিট যায়গাজুড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি আমরা।"
এদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে পানিবন্দী মানুষগুলো। উপজেলাজুড়ে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যৎসামান্য ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম বদরুদ্দোজা বলেন, "বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সরকারের তরফ থেকে বরাদ্দকৃত যা ত্রাণ পাচ্ছি তা দেয়া হচ্ছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদেরকেও সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকলেও উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited