image

আজ, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এক্সেস রোড, এক্সেস যন্ত্রণা !

সফিক চৌধুরী    |    ২১:১১, জুলাই ১৭, ২০১৯

image

বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক/পোর্ট কানেক্টিং সড়ক ব্যবহারকারি আর এর দু’পাশে বসবাসকারী হাজারো মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার কবে হবে শেষ? কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা মাত্র দেড় কিলোমিটারের এক্সেস সড়কের কাজ কবে যে শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কিনা তা বোধহয় শুধু উপরওয়ালাই জানেন! কয়েক বছর ধরে যাচ্ছেতাই রাস্তায় যিনি বা যারা চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন শুধু তাঁরাই জানেন এর বেহাল দশা! 

আমাদের এত বড় পদ্মা সেতুর কাজও নাকি প্রায় অনেকটাই শেষের পথে, কিন্তু বন্দরনগরীর এই সড়কগুলির কাজ হয়তো তখনও চলমানই থাকবে!! এবড়ো-থেবড়ো নানা গর্ত, জলজট, যানজট, খুঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশে বাজার সহ নানা বিড়ম্বনা একটা না একটা সবসময় লেগেই থাকে। কিছুদিন পরপরই শুনি, এই সড়কগুলোর উন্নয়নে সবসময়ই কাজ চলছে, কিন্তু আমাদের ভোগান্তির অবসান হচ্ছে না- এটাই যেন বাস্তবতা। 

একটি শহরের পরিকল্পিত নগরায়ন তার নাগরিকের জন্য অপার সম্ভাবনা তৈরি করে, তেমনি এর অপরিকল্পিত উদ্দেশ্যহীন বিন্যাস যে প্রতিদিনের নগরজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরন যেন আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ আর হালিশহর! এই বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরনের চ্যালেঞ্জ কারও একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। একে হতে হবে সমন্বিত এবং জনগনের নিবিড় সম্পৃক্ততা থাকতে হবে তাতে। কিন্তু, সেইভাবে কী আমরা এগুতে পারছি? 

খুব সাধারণ একজন শহুরে মানুষও একটি সুস্থ সুন্দর নগরী বলতে পরিকল্পিত, সুন্দর আর নিরাপদ নগরীকেই বোঝেন। আর সেই সব স্বাপ্নিক মানুষের স্বপ্নকে পুঁজি করে বানিজ্যিক রাজধানী, বন্দর নগরী, মেগাসিটি, ভবিষ্যতের সিঙ্গাপুর ইত্যাদি নানা চটকদার কথামালা বছরের পর বছর শুনে আসছে চট্রগ্রামবাসী। কিন্তু, একটা শহরে শুধু কিছু পাকা রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উঁচু দালান, কিছু শপিং মল, অল্প বিস্তর ব্যবসা বানিজ্য আর প্রধান সমুদ্র বন্দর থাকলেই যে সে নগর সত্যিকারের নগরী হয়ে উঠে না বা উঠতে পারে না, তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরন আমাদের এই প্রিয় চট্রগ্রাম। 

প্রায় প্রতিদিনই আমরা শুনি, চট্রগ্রামের ভাঙ্গা আর বেহাল সড়ক মেরামতে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, নগরে কোন খানা-খন্দের সড়ক থাকবেনা, গলির রাস্তাও হবে সুন্দর, আলোকিত আর গতিময়! কিন্তু, যেখানে চট্রগ্রামের অনেকগুলো মুল সড়কের অবস্থাই তথৈবচ সেখানে নগরীর পথচলতি নাগরিকদের কাছে এই সকল কথামালা শুধুই কৌতুকপূর্ণ মনে হয়। 

নগরীর আগ্রাবাদ হতে হালিশহরমুখি ২ দশমিক ২ কিলোমিটারের আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কিন্তু, বর্তমানে এই সড়ক অল্প কিছু অংশ বাদে যেন এক জীবন্ত কংকাল! এই সড়কে (যদিও কোথাও কোথাও শুধু সড়ক না বলে কাদা মাটি আর বড় বড় খানা খন্দের পথই বলা যায়) বাধ্য হয়ে যাতায়াত করা মানুষগুলোর অবর্ণনীয় কষ্ট আর দুর্ভোগ এখন সীমা ছাড়িয়েছে। এই সড়কে এখন কোন অসুস্থ নারী-পুরুষ, শিশু বা বয়ষ্ক মানুষের পথ চলা অনেকটা অসম্ভব হয়ে ঊঠেছে, শ্রমজীবি আর সাধারন মানুষেরা আজ বেহাল সড়কের কারনে রিকশা/গাড়িতে বাড়তি ভাড়া দিতে গিয়ে নিঃস্ব প্রায়। এই সড়কের দুই ধারে গড়ে উঠা বিলাসবহুল ফার্নিচারের দোকান, কমিউনিটি সেন্টার আর অন্যান্য ছোটখাটো দোকান গুলো এখন মৃত প্রায়! যদিও যথাযথ কর্তৃপক্ষগুলো কেমন যেন নির্বিকার।

প্রায় প্রত্যেকের মাঝেই দায় এড়িয়ে চলার মানসিকতা, যদিও রাস্তার বেহাল দশা এবং পার্শ্ববর্তী গলিগুলোর বৃষ্টি এবং জোয়ারে জলাবদ্ধতা এখন এমন পর্যায়ে গেছে, কার দায় কতটুকু তা না খুঁজে সকলের সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিৎ। আর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তো কোন কথাই বলছেন না! উনাদের নাকি এখন খুঁজে পাওয়াই দায়! মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি’র সেই কথাটি এখানে যেন পুরোটাই সত্য--- "ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে ভদ্র পল্লীতে। এখানে তাঁহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না!" এভাবে কী মানুষ বাঁচে না বাঁচতে পারে? 

আচ্ছা, দেশের নাকি উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এখন অনেক এগিয়েছে, তাহলে এই এলাকার রাস্তা এবং মানুষের এই পানিবন্দি জীবনের দিন কেন শেষ হচ্ছেনা? আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল গুলো খুব কৌশলে নিজেদের এই জাতীয় মানবিক ইস্যুতে নিজেদের সরিয়ে রাখে, শুধু মাত্র তখনই তারা কথা বলে, যখন মনে করে, ঘটনা থেকে তারা রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারে। আর এ সব কিছুই আমাদের জবাবদিহিতাহীন সমাজের করুন চিত্র! আর আমরা মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজও চলতি হাওয়ার পন্থি। অন্যদিকে, আমাদের জাতীয় নামধারী ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া গুলোর কাছে রাজধানী কেন্দ্রিক ঘটনা যতটা গুরুত্ব পায় ততটাই গুরুত্বহীন রাজধানী বাদে সারা বাংলাদেশ! 

কিন্তু, এভাবে আর কতদিন? আমাদের অনুভূতি গুলো কি এতই ভোঁতা যে, আমরা নিশ্চল, নিশ্চুপ হয়ে থাকবো? আর এরকম ভাঙ্গা আর বেহাল সড়ক নিয়েই কী আমরা সুন্দর নগর গড়তে চাইছি? কিন্তু, তা কি আদৌ সম্ভব? নিশ্চয়ই না। কারন, সুন্দর নগরী গড়ার আগে জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে, সেই সাথে সুন্দর, গতিময় এবং আলোকিত রাস্তা নির্মাণও জরুরী। এরপর আমরা সেই স্বপ্ন দেখতে পারি যে, আমাদের প্রিয় বন্দর নগরী হবে এশিয়ার বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর। আমাদের স্বপ্ন, প্রিয় বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শুধু বাসযোগ্য নগরীই হবে না, সেই সাথে তা হয়ে উঠবে বিকশিত ও প্রাণচঞ্চল।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৮:০৯, মে ১২, ২০২২

বজ্রপাত হচ্ছে-সাবধান হই


Los Angeles

১২:২৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

“কয় জন ভালো নয়, সয় জন ভালো হয়”


Los Angeles

০০:৫৯, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবলের কলংকিত দিন ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর !


Los Angeles

১১:৩৪, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

প্রকৃতিতে নয়, কেবল কাগজের নোটেই আছে ‘জাতীয় পাখি দোয়েল‘


Los Angeles

২২:১২, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১

ফুটবলের মরা গাঙে কি আবার জোয়ার আসবে ?


Los Angeles

২৩:০৮, আগস্ট ১৫, ২০২১

শাসক নয় বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক সেবক ছিলেন


Los Angeles

১৮:৫৭, আগস্ট ১৩, ২০২১

আড্ডা যেন এক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


Los Angeles

০০:০৪, আগস্ট ৮, ২০২১

বাইরে মুক্তির কল্লোল ও বন্দী একটি পরিবার


image
image