শিরোনাম
আনোয়ারা সংবাদদাতা | ১৭:৩৬, জুলাই ২২, ২০১৯
আনোয়ারার দেয়াং পাহাড় ও আশপাশের এলাকায় ৫ বছর ধরে চলছে বন্য হাতির তান্ডব। প্রতি দিন হাতির পাল লোকালয়ে চালাচ্ছে হামলা। দুই সপ্তাহে ২ জন নিহত, আহত ডজন খানেক, ভাংচুর করেছে শতাদীক বাড়ী ঘর। সারা রাত পাহারায় থাকে এলাকাবাসী।
জানা যায়,চুনতি অভয়ারন্য থেকে বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকা হয়ে আনোয়ারায় দেয়াং পাহাড়ে অবস্থান নেয় হাতির পাল। আর প্রতি রাতে আশপাশ এলাকায় ঢুকে তান্ডব চালায় বন্য হাতির দলটি। সর্বশেষ ১৪ জুলাই উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নিয়াজ তালুকদার বাড়ীতে হাতির আক্রমনে মারা গেছে আক্তার হোসেন (৫০) নামে এক বৃদ্ধ। তার এক সপ্তাহ আগে বটতলী গুচ্ছ গ্রামে হাতির হামলায় নিহত হয় আরেক মহিলা।
প্রতি বছরই পথ হারিয়ে বন্য হাতির পাল হানা দিলেও এবার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাতিগুলো দেয়াঙ পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ১৪ জুলাই রাতভর বৈরাগ ইউনিয়নের কান্তির হাট এলাকায় দুটি হাতি আক্রমণ চালায়। এসময় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় আকতার হোসেন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায় । তার মৃত্যুর ঘটনার আগে কয়েক বছরে মারা গেছে আরো ৫ জন। এ বছরের ২৬ জুন মাসে বটতলী গুচ্ছ গ্রামের বৃদ্ধা মোমেনা খাতুন (৬৫), ২০১৮ সালে বৈরাগ ইউনিয়নের মোহাম্মদ পুরে বৃদ্ধ আবদুর রহমান (৭০), ১৭ সালে কর্নফুলীর বড়উঠান গ্রামের খিলপাড়ায় জালাল আহমদ (৪৫), ১২ সালে এই গ্রামের মরিয়ম আশ্রম এলাকায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে জুয়েল দাশ (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্র সহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চুনতি অভয়ারণ্যে ৪২টি ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকা মিলিয়ে ৪৭টি বন্য হাতি রয়েছে এই অঞ্চলে। এই হাতিগুলোর মধ্য থেকে কোন কোনটি পথ হারিয়ে প্রতি বছর আনোয়ারায় ঢুকে পড়ছে।
কয়েক দিন আগে উপজেলা চাপাতলি, ভোলা শাহ, কবিরের দোকান, খান বাড়ী, মোহাম্মদ পুর, গুয়াপঞ্জক, কেইপিজেড এলাকা, বারশতের পশ্চিমচাল, বারখাইনের হাজী গাঁও গ্রামে একইভাবে হাতির আক্রমনের শিকার হন অসংখ্য মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,দেয়াঙ পাহাড়ে হাতির অবস্থান সম্পর্কে বন বিভাগকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা। গত ৫ বছর ধরে হাতির পালটি উপজেলার বৈরাগ, বারশত ও বটতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার শতাদিক বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এলাকার খেতখামার ও জমির ফসল ক্ষতি করছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরী জানান, আনোয়ারায় হাতির আক্রমণে গত এক বছরে তিনজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বসত ঘর ভাংচুর, ফসলী জমি, গাছ পালা সাধারণ মানুসের ব্যাপক ক্ষতি করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে হাতি গুলো সরিয়ে নিতে বনবিভাগকে বারবার তাগিদা দেওয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দূর্গঘটনা ঘটলে বনবিভাগের লোকজন দায়ে পড়ে এলাকায় আসলেও তাদের আর দেখা যায়না। তিনি এব্যাপারে আনোয়ারার মানুষের জানমাল রক্ষায় হাতি গুলো ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন,বন্যা হাতি প্রতিরোধে বৈরাগ, বটতলী, বারখাইন ইউনিয়নে ৬টি ইআরটি দল গঠন করা হয়। তাদেরকে উপকরণ সামগ্রী দেয়া হয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জান মাল রক্ষায় সচেতনতার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে ইআরটি দলের সদস্যদেরা এলাকায় বন্যা হাতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited