শিরোনাম
শাহেদ হোসাইন ছোটন, বোয়ালখালী সংবাদদাতা | ২৩:৫৬, আগস্ট ২৩, ২০১৯
১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের পর দেশের কিছু স্থানে স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে মানুষ শহীদ মিনার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে থাকে। এমনই এক অনন্য প্রচেষ্টার ফসল চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। এখানেই স্কুল পর্যায়ে প্রথম কোনো শহীদ মিনার নির্মিত হয়, যা এখনও দেশে পরিচিতি লাভ করেনি। ১৯৬৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদদের সম্মানে তৈরি করা হয় এই শহীদ মিনার।
সারাদেশে তখন চলছিল সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন। তার মধ্যেই কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এ শহীদ মিনার তৈরি করেন। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক কাজী আবদুল গণি ছাবেরী।
এটি নির্মাণের পর শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন স্কুলের দুই ছাত্র মো. নূরুল হুদা ও সৈয়দ আবুল হাসান। ‘বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার নির্মাণের অপরাধে’ স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয় তাদের। স্কুলটির বিজ্ঞান শিক্ষা খাতের বরাদ্দও ওই বছর বাতিল করা হয়। ইট-সিমেন্টের এ শহীদ মিনার মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা ধ্বংস করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এমএ বার্ণিকের লেখা ‘জেলায় জেলায় শহীদ মিনার’ গ্রন্থেও উল্লেখ করা হয়েছে, কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মিত শহীদ মিনারই দেশের স্কুল পর্যায়ের প্রথম শহীদ মিনার।
এই শহীদ মিনার নির্মাণের নেপথ্য উদ্যোক্তা ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সৈয়দ জালাল উদ্দীন। তার সঙ্গে আরও ছিলেন বোয়ালখালী থানা ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জাসদ নেতা মো. সৈয়দুল আলম, সাংস্কৃতিক সংগঠক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
স্কুল পর্যায়ে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনার : শহীদ মিনার তৈরি করলে স্কুলের অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে এমন আশঙ্কায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা এ উদ্যোগে বাধা দেন। তবে তাদের আশঙ্কার পরও শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। রাতে স্থানটি পাহারা দিয়ে রেখে ভোরের দিকে কয়েকজন ছাত্র একত্রিত হয়ে গাছের গুঁড়ি, ইট, পাথর, সিমেন্ট নিয়ে হাজির হয়। হারিকেনের আলোতে কাজ শেষ করে।
তখনও দেশের অন্য কোনো স্কুলে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়নি। এটি দেখতে ও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে তাই তখন অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে স্কুলে ছুটে আসেন।
শুধু শহীদ মিনার নির্মাণের অপরাধে সৈয়দুল আলম, নূরুল হুদা ও মরহুম সৈয়দ আবুল হাসানকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, ‘কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৈরি করা শহীদ মিনারটি দেশের স্কুল পর্যায়ের প্রথম শহীদ মিনার। শহিদ মিনারটির নির্মাতা অনেকের মধ্যে সৈয়দুল আলম এবং নুরুল হুদা আর প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলের দপ্তরী এখনো বেঁচে আছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এই কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ সাহেবের সুপারিশে বাংলা একাডেমিতে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছি।
আবেদন করার পরও স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আবেদনের পরে বাংলা একাডেমি কোনো কিছু জানা যায়নি আর আমরাও যোগাযোগ করিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আগে সরকারি ছিলো না তাই সরকারের নজরে আসেনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited