শিরোনাম
এম.হোছাইন মেহেদী, লোহাগাড়া সংবাদদাতা | ১২:২৮, অক্টোবর ৬, ২০১৯
দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভূয়া হোমিও ডাক্তারের ছড়াছড়ি। সরকার স্বীকৃত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রী না নিয়েও অনেকে ডাক্তারি করে যাচ্ছেন । হোমিওপ্যাথিক আইন ১৯৯৮ এর সংশোধিত আইন ২০৭ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ডিএইচএমএস বা বিএইচএমএস কোর্স পাস করে এবং রেজিস্ট্রেশন সনদ নিয়ে নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন। কিন্তু লোহাগাড়ায় অনেকে বিএইচএমএস বা ডিএইচএমএস কোর্স শেষ করেননি। এমন কি সরকারী রেজিস্ট্রেশন সনদ না নিয়ে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে যাচ্ছেন। অনেক স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ঈমাম শুধুমাত্র ম্যাটেরিয়া মেডিকা বই পড়ে অথবা অনঅনুমোদিত তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদী কোর্স করে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন এবং রোগীদের বিভ্রান্ত করে ভুল হোমিও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব সরকারী রেজিট্রেশন সনদবিহীন ভূয়া হোমিও ডাক্তারদের প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। ভুল চিকিৎসার কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় হোমিও চিকিৎসার সুফল ভোগ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। ফলে হোমিও চিকিৎসার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে ।
এব্যাপারে ডা. ওমর ফারুক বলেন, সারাবিশ্বে হোমিওপ্যাথির অগ্রগতি হলেও প্রশিক্ষণবিহীন কিছু নামধারী হোমিও চিকিৎসকের কারণে আমাদের দেশে হোমিও চিকিৎসা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে আর একই অবস্থা আমাদের লোহাগাড়ায়ও। সবার জন্য সুস্বাস্থ্যে নিশ্চিত করতে ভূয়া হোমিও চিকিৎসক চিহ্নিত করা জরুরি।
হোমিও চিকিৎসায় সরকার অনুমোদিত দুই ধরণের ডিগ্রী অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। তৎমধ্যে একটি হলো ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের অধীনে ২ বছর মেয়াদী বিএইচএমএস ও অন্যটি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অধীনে ৪ বছর মেয়াদী ডিএইচএমএস কোর্স। এই কোর্সগুলো সম্পন্ন করার পর সরকারী রেজিট্রেশন সনদ নিতে হয়।
হোমিও চিকিৎসা আইন অনুযায়ী ৩ বছর অন্তর এই রেজিট্রেশন সনদ নবায়ন করতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোহাগাড়ায় অধিকাংশ হোমিও ডাক্তারদের কোন সরকারী রেজিট্রেশন সনদ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় কেউ কেউ রেজিট্্েরশন সনদ নিলেও মেয়াদ শেষে তা নবায়ন করেন না। রেজিট্রেশন সনদ না নেওয়ায় বা নবায়ন করায় সরকার প্রতিবছর এখাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ হোমিও চিকিৎসক পরিষদ লোহাগাড়া শাখার সহ-সভাপতি প্রবীন হোমিও চিকিৎসক ডা. জামাল উদ্দিন বলেন, সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ যদি হোমিও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা তার নিজ দায়িত্বে করে যাচ্ছেন। এখানে আমাদের সমিতির কোন দায় দায়িত্ব নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লোহাগাড়ায় প্রায় ২০০ শতাধিক হোমিও ডাক্তার রয়েছেন। এদের মধ্যে ভূয়া ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। এরা কেউ কেউ ডিএইচএমএস বা বিএইচএমএস পাস করলেও অনেকের সরকারী রেজিট্রেশন সনদ নেই। আবার অনেকের হোমিও ডিগ্রী এবং সরকারী রেজিট্রেশন সনদ কোনটাই নেই।
সারাবিশ্বে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দিন দিন উন্নতি, প্রচার-প্রসার ও জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বাংলাদেশের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। দেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার এই দূর্গতির পেছনে ভূয়া ও রেজিট্রেশন সনদবিহীন হোমিও ডাক্তারগণ অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তোছিফ আহমেদ বলেন, শীঘ্রই ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোন ডাক্তারের সরকারী ট্রেনিং ও সনদ না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited