শিরোনাম
রাউজান সংবাদদাতা | ০০:৩১, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
রাউজানের সংস্কৃতি জগৎকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে রাউজান শিল্পকলা একাডেমী। এক সময়ের ভরাডুবি সংস্কৃতিকে নবরুপে উজ্জীবিত করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে রাউজান শিল্পকলা একাডেমী। নাচ, গান, তবলা, গিটার, চিত্রাংকন, আবৃত্তি ও শুদ্ধ উচ্চারণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পকলা একাডেমী। যে কারণে উপজেলার সকল জাতীয় প্রোগ্রামে এই একাডেমীর স্বতঃস্পূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়। এছাড়াও একাডেমীর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে বিটিবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাউজান শিল্পকলা একাডেমী। বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাউজানের সাংসদ রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এম.পি।
৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করা এই শিল্পকলা একাডেমীর বর্তমান ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে ৭৭২ জন। নব নির্মিত দ্বি-তলা বিশিষ্ট একটি ভবনে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন পিরিয়ডে ক্লাস নেয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষ ভাবে গড়ে তুলার জন্য রয়েছে ১৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকা।
আরো রয়েছে ১১ জনের একটি পরিচালনা পর্ষদ। যার প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। শিল্পকলা একাডেমীর অধীনে পরিচালিত হয় আরো দু'টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। একটি হলো সুর নিকেতন, অন্যটি হলো উপজেলা শিশু বিকাশ কেন্দ্র। শিশু বিকাশ কেন্দ্র থেকে প্রতি শুক্রবার সকালে ৮টা থেকে ছোট ছোট শিশুদের চিত্রাংকন শেখানো হয়। যেখানে রয়েছে ২'শ অধিক শিশু শিক্ষার্থী। শিশুরা প্রতি শুক্রবারে মায়ের হাত ধরে চলে আসে এখানে। হাসি খুশিতে বিভিন্ন আর্ট শিখে তারা। দেখে মনে হয় যেন একটি ফুলের আসর।
জানা যায়, এক সময়ে রাউজানে সংস্কৃতির তেমন কোন চর্চা ছিল না। নির্দিষ্ট কোন স্থান ছিল না, যেখানে সংস্কৃতির চর্চা করবে। একারণে শিশু কিশোরদের সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ তেমন লক্ষ করা যেত না। ধাবিত হতো না সংস্কৃতির দিকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নতুনত্বের আগমন দেখা যেতো না।
তবে রাউজানে সদরে নামে একটি শিল্পকলা থাকলেও এর কোন সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না কোথাও।
ছিল না কোন ছাত্র-ছাত্রী। হতো না কোন প্রশিক্ষণ। জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল এটি।
শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি শামীম হোসেন রেজা জানান, আমি যখন রাউজানে যোগদান করি তখন শিল্পকলার কোন চিহ্ন ছিল না। পরে খবর নিয়ে দেখি রাউজান-রাঙ্গুনিয়া নিজাম উদ্দিন পাবলিক হলের পাশে একটি আবদ্ধ ঘরে শিল্পকলার অবস্থান। সেখানে গিয়ে দেখি তালায় জং ধরেছে, খোলা যাচ্ছিল না। অনেক কষ্টে তালা ভেঙে ভেতরে যখন প্রবেশ করি দেখি পোকা মাকড় আর মাকড়শার ঝাঁল সেখানে। ময়লাযুক্ত অবস্থায় একটি হারমোনিয়াম ছাড়া কিছুই নেই। দেখে খুবই খারাপ লেগেছিল। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই শিল্পকলার জন্য কাজ করবো। বিষয়টি আমি সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে অবহিত করি। তিনি আমাকে সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। তারই সহযোগীতায় আমরা ৬ জন শিক্ষার্থী সাথে নিয়ে শিল্পকলার আরম্ভ করি। ভবনের জন্য তিনি রাউজান অফিসার্স ক্লাবের পাশে একটি দ্বি-তলা ভবন করে দেন। সেই থেকেই আমরা প্রতি শুক্রবার ও শনিবার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দিয়ে আসছি। এখন আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে ৭৭২জন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় জায়গা সংকুলান হওয়াতে সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী আরো একটি ভবনের জন্য ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। বর্তমানে শিল্পকলার ছাত্র-ছাত্রীরা উপজেলার বিভিন্ন প্রোগ্রাম অংশ নিচ্ছে। আমরা আশাকরি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষার্থী তাসমিয়া আলম অনন্যা, প্রতীক্ষা ও রিদি দাস সহ অনেকে জানান, শিল্পকলা একাডেমী এখন আমাদের স্বপ্নের ঠিকানা। স্বপ্ন পূরণের বাতিঘর। ছোট থেকেই চোখে স্বপ্ন দেখে আসছি নৃত্য শিল্পী হবো। গান শিখবো। শিখার মত আগে কোন প্রতিষ্ঠান ছিল বলে আমরা কোথাও প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। ভেবে ছিলাম স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে। কিন্তু এখন শিল্পকলা একাডেমী আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণে সারথী হয়েছে।
Developed By Muktodhara Technology Limited