শিরোনাম
মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ সংবাদদাতা | ১৮:৫০, নভেম্বর ৭, ২০১৯
চলতি রবি মৌসুমে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় ১২শ ৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি আবাদ হয়েছে। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খনদীর উভয় তীরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। যাকে সবুজ বিপ্লবও বলা যেতে পারে। শীতের সবজির এই নীরব বিপ্লবে খুশি স্থানীয় কৃষকরা।
চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খনদীর উভয় তীরের ১০ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন ভোরের কুয়াশায় ফসলের মাঠে গিয়ে দিনভর সবজি পরিচর্যায় শ্রম দিচ্ছেন চাষিরা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত শঙ্খচরের মাটি সবজি চাষের জন্য বেশ উর্বর এবং উপযোগী হওয়ায় এখানে সব ধরণের সবজি চাষ হয়। পুরো বছরেই এ অঞ্চলের কৃষকরা শঙ্খচরে সবজি চাষ করে থাকেন।
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী, ধোপাছড়ি, হাসিমপুর, বৈলতলী, বরমা এবং সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, পুরানগড়, ধর্মপুর, নলুয়া, চরতী ও আমিলাইশ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষক সবজি চাষের সাথে সরাসরি জড়িত। এই চরে উৎপাদিত বীষমুক্ত বেগুন ও মূলার আলাদা কদর রয়েছে সারা দেশব্যাপী। এছাড়া শিম, ঢেঁড়শ, করলা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঝিঙ্গা, তিত করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পেঁপে, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাক উৎপাদন হয় এখানে।
শঙ্খ চরে উৎপাদিত সবজি গুণেমানে ও স্বাদে ভালো হওয়ায় ভোজন রসিকদের কাছে এখানকার সবজির চাহিদা বেশি। কৃষকরা ভ্যান, রিক্সা, ট্রলি, নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত বোটে করে দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন বাজারে নিয়ে আসেন সবজি বিক্রির জন্য। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব বাজার থেকে সবজি সংগ্রহ করে ট্রাক যোগে আশপাশের এলাকা ও চট্টগ্রাম-ঢাকা সহ সারেদেশে সরবরাহ করেন।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) শঙ্খচরের সবজি চাষি দোহাজারী কিল্লাপাড়া এলাকার জসিম ও জামালের সাথে আলাপকালে তারা জানান,
অধিক লাভের আশায় চাষিরা আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেন। শঙ্খ চরে ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই মুলা, বেগুন, বরবটি ও শিম চাষ শুরু হয়। তা কার্তিক মাসের শুরু থেকেই বাজারে বিক্রি করা যায়। এছাড়া শীতকালীন অন্যতম সবজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি আশ্বিন মাসের শেষের দিকে রোপণ করেন তারা। এর আগে তারা মুলা বিক্রি করেন। আশ্বিন মাসের শেষ দিকে ও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই সকল প্রকার শীতকালীন সবজি বাজারে পুরোদমে বিক্রি করেন বলেও জানান তারা।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাঁচা বাজার দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি ভার (৮০ কেজি) মূলা ২২শ-২৫শ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৩০-৩৫ টাকা, বরবটি ২৫/৩০ টাকা, তিতা করলা ৫০-৫৫ টাকা, শশা ২৫-৩০ টাকা, লাউ (আকারভেদে) প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০-২৫ টাকা, ঢেড়শ ৩০/৩৫ টাকা, মূলাশাক ও কপিশাক প্রতিভার (৮০ আঁটি) ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধনিয়া পাতা প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাষীরা জানান শীতের সবজি শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপি শঙ্খচর থেকে এখনো আসা শুরু হয়নি। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির সরবরাহ বাড়বে। তখন শীতের সকল প্রকার সবজি পাওয়া যাবে। সবজি সংরক্ষণের জন্য চন্দনাইশ কিংবা সাতকানিয়ায় হিমাগার না থাকায় সবজি চাষীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন যাবত কৃষকরা দাবি জানিয়ে আসলেও হিমাগার নির্মাণ হচ্ছেনা। ফলে পাইকারদের বেঁধে দেয়া দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। সবজি দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় অনেক সময় নামমাত্র লাভে চাষির হাতে সবজির মূল্য গুঁজে দেয়া হচ্ছে।
শঙ্খচরে উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য দোহাজারীতে হিমাগার নির্মাণ করা গেলে বাজারে সবজির দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে আর কৃষকেরাও সবজির ন্যায্য দাম পাবে বলে মত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার বলেন, চন্দনাইশ উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ১২ শ ৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাধাকপি ও টমেটোর চারা লাগানো শুরু হচ্ছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সহায়তা দেয়ার কারনে আশানুরূপ ফলন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited