শিরোনাম
মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ সংবাদদাতা | ১২:০১, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
"স্তন ক্যান্সার বাংলাদেশে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলেও এটি শরীরের সংবেদনশীল একটি অংশের রোগ হওয়ায় আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী এই বিষয়ে কথা বলতে চান না। যার ফলে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে মারা যায় প্রায় ৮ হাজার নারী।বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে, সঠিক ও পূর্ণ চিকিৎসায় ৯০ শতাংশ স্তন ক্যান্সার রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব।
মানুষের জীবন বাচাঁনোর জন্য এই সামাজিক কুসংস্কার থেকে বের করে আনতে আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা কিছু করা যায় তার সবকিছুই করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে" মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে স্তন ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতামূলক সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন রাজধানী ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী।
সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে স্তন ক্যান্সারের কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬৪টি জেলার প্রতিটি উপজেলায় যাওয়ার প্রত্যয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সচেতনামূলক প্রচারণা শুরু করে বর্তমানে অবস্থান করছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ ১০ টি উপজেলার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরী করতে ছুটে গেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছে। ফটিকছড়ি উপজেলার হালদা চা বাগানের শ্রমিকদেরকেও শুনিয়েছেন স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য। নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল গ্রামে জন্ম নেয়া সমাজকর্মী সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী তাঁর এই উদ্যোগে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন প্রিয় বান্ধবী শেরপুর জেলার শিবরদী উপজেলার জোবাইরা তাসনীম মমকে। বর্তমানে অবস্থান করছেন চন্দনাইশে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) উপজেলা রিসোর্স সেন্টার সংলগ্ন হলরুমে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সচেতনতামূলক সভায় বিস্তারিত আলোচনা করেন স্তন ক্যান্সারের কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে। এসময় তিনি বলেন, স্তনে ক্যান্সার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারন নেই, যাদের স্তনে ক্যান্সার হয়েছে তাদের একেক জনের লাইফ স্টাইল একেক রকম। লেইট ম্যারেজের ফলে স্তন ক্যান্সার হয়। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। তবে ৩০ বছরের বয়সের মধ্যেই সন্তান জন্ম দেয়া উচিৎ। আধুনিক নারীরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়াতে চান না শরীর ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে। এতে বাচ্চা যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়না, তেমনি মায়ের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে আঁশযুক্ত সবুজ শাক-সবজি ও ভিটামিন সি আছে এমন খাবার বেশি করে খেতে হবে। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারন চর্বিযুক্ত মাংস ও ক্যামিকেলযুক্ত শুটকি। স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। এগুলো কম খেতে হবে। ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে। প্রসাধন সামগ্রী, পারফিউম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। বক্ষবন্ধনীসহ আঁটোসাটো পোশাক বাদ দিয়ে ঢিলেঢালা পোশাক পড়লে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট নামে দুই ধরণের স্তন ক্যান্সার রয়েছে। প্রথমটি অপারেশনের মাধ্যমে সেরে গেলেও দ্বিতীয়টি কেমো ছাড়া সারবেনা। প্রতিটি কেমো অত্যন্ত ব্যয়বহুল যা নিন্মবিত্তের সাধ্যের বাইরে। ফলে মৃত্যু অবধারিত। তাই স্তন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীদের মতো পরিণত না হলেও, পুরুষদেরও স্তন আছে। সেখানে ক্যান্সার হওয়াটাও কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়৷ মহিলাদের মতো স্তনে ক্যান্সার হলেও, তা মহিলাদের তুলনায় ঢের বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ে পুরুষ শরীরে। পুরুষরা কেউই মানতে চান না, যে তাঁদেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। ফলে, স্তনে কোনও মাংসপিন্ড গজালেও, সেটাকে প্রথমে এড়িয়ে যান৷ আর যতক্ষণে শুভবুদ্ধির উদয় হয়ে চিকিত্সকের কাছে আসেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়, পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই একটু দেরি প্রাণঘাতী হয়ে পড়তে পারে৷ স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ জানতে চেয়ে একজন শিক্ষিকার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্তনে চাকা ও পিণ্ড অনুভূত হওয়া যা ব্যথাহীন এবং খুব দ্রুত আকারে বেড়ে যাচ্ছে। স্তনের ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন। যেমন চামড়া কুঁচকে যাওয়া, কমলার খোঁসার মতো ছোট ছিদ্র দেখা দেওয়া, চামড়ায় টোল পড়া, দীর্ঘস্থায়ী ঘা ইত্যাদি। নিপল দিয়ে রস নিঃসরণ হওয়া বা রক্তপাত হওয়া। নিপল ও তার চারপাশের কালো অংশ ফুঁসকুড়ি ও চুলকানি। স্তনের আকার পরিবর্তনের সাথে গলার কাছে বা বগলে চাকা অনুভূত হওয়া। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে চাইলে বেশি বয়সে বাচ্চা জন্মদান না করার পাশাপাশি ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার করা। নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা, এক্ষেত্রে ৩০ বছরের পর, প্রতিমাসে মাসিকের পর পর নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা। আর কখনো কোন উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited