শিরোনাম
মোঃ আহসান আরিফ চৌধুরী | ১৪:৩৪, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
আমি যে জায়গায় বসে আছি এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক হাটহাজারীতে গড়ে তোলা বিমানবন্দরের ভাঙ্গা রানওয়ে। ভাঙ্গা রানওয়ে ও জীর্ণ কন্ট্রোল রুম (নিচের ছবি) ছাড়া সেই বিমানবন্দরের কোনো স্মৃতিচিহ্নই এখন আর নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনীর বিমান জাপান আক্রমণ করে পুনরায় ফেরত আসার আগেই শেষ হয়ে যায় বিমানের জ্বালানি তেল। তাই দূরত্ব কমানোর জন্য তারা অস্থায়ীভাবে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। হাটহাজারী পৌরসভার মধ্য পাহাড়তলী মৌজায় নির্মাণ করা হয় সেই বিমানবন্দর (বর্তমান হাটহাজারী সরকারী ডেইরী ফার্ম ও আদর্শ গ্রাম সংলগ্ন)। এ জন্য উচ্ছেদ করা হয় আলমপুর, খীলপাড়া ও চন্দ্রপুর গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারকে। ব্রিটিশ সরকার এ জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি ঘরের জন্য এক হাজার ৩শ' থেকে দুই হাজার টাকা এবং প্রতি পরিবারকে পরিবহন বাবদ ১১০ টাকা করে দেয়। এ ছাড়া আবাদি জমির ভাড়া হিসেবে প্রতি বছর ৪০ শতকের জন্য চুক্তিনামামূলে ৮০ টাকা করে প্রদান করেছিল বলে লোকমুখে প্রচার আছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যতদিন ব্রিটিশ সরকার এ জায়গা ব্যবহার করবে ততদিন বার্ষিক ভাড়া সদর এলাকার ডাকবাংলোতে জায়গার মালিকদের পরিশোধ করা হবে।
১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মোট তিন বছর জায়গার মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ দু'বছর প্রদান করে ব্রিটিশ সরকার। এরপর দেশ ভাগ হয়ে গেলে ব্রিটিশ সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা পাকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তাদের শিশু সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ সময় স্থানীয় জনসাধারণ তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেনদরবার করে এডিসি (রাজস্ব) ও হাটহাজারী সেটেলমেন্ট অফিস থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করে।
ব্রিটিশ সরকার চলে যাওয়ার পর থেকে বিমানবন্দরের ভূমি মালিকরা তাদের জায়গায় ফিরে আসেন। সেখানে তারা শুরু করেন চাষাবাদ। যা অদ্যাবধি অব্যাহত আছে। তবে বিমানবন্দরের রানওয়ের ঢালাই মজবুত হওয়ায় ওই জায়গার মালিকরা সেখানে চাষাবাদ করতে পারেন না। তাই তারা সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
বিমানবন্দরের বিশাল জায়গাটি ব্রিটিশ সরকার স্থায়ীভাবে অধিগ্রহণ করেনি।
বর্তমানে নদীভাঙ্গন এলাকার লোকজন ও ছিন্নমূল বিভিন্ন পরিবার রানওয়ের উপর ও বিমানবন্দর এলাকায় বসবাস করে।
হাটহাজারীর এই বিমান বন্দর ও পুরাতন এই স্থাপত্য সংরক্ষণ করা খুবই জরুরী।
লেখক: প্রভাষক, নানুপুর লায়লা-কবির কলেজ, ফটিকছড়ি।
Developed By Muktodhara Technology Limited