শিরোনাম
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী সংবাদদাতা | ২২:৫৬, মে ৬, ২০২০
বাঙ্গি বা ফুটি গরমকালের অন্যতম একটি রসালো ফল এবং আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য ফলগুলোর মধ্যে এটি একটি। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই গ্রীষ্মকালীন এ ফলের চাষ হয়ে থাকে। বাঙ্গি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে হলুদ রঙের হয়। আঞ্চলিকভাবে এ ফলটিকে লোকজন বিভিন্ন নামে চিনে। উপজেলার বাঁশখালীতে আঞ্চলিক ভাবে হরমুজ বলে চিনে। আবার অনেকেই বাকি ফল বলে চিনে। নামে যাই হোক, গোল খাঁজকাটা বাঙ্গি দেখতে মিষ্টি কুমড়োর মতো হলেও আকারে বেশ বড়। কোনোটি সবুজ, কোনোটির হালকা হলুদ রং হয়ে উঠে এসেছে বাজারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশখালী উপজেলার নাপোড়া ব্রীজের অদূরে প্রধান সড়কের দু’পাশেই বাঙ্গির স্তূপ। খুব ভোরেও বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠে বেচাকেনা। ক্রেতাদের কেউ বাঙ্গি হাতে নিয়ে টোকা মেরে, টিপে দেখছেন, কেউ বা নাকের কাছে ধরছেন। চার দিকে বাঙ্গির মনকাড়া সৌরভ। কেউ কেউ পথচারিদের থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে খুচরায় ক্রয় করছে পছন্দের ভাঙ্গি। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নাপোড়া এলাকায় গিয়ে ব্রীজের উত্তরাংশে প্রধানসড়কের দু’পাশে এই দৃশ্য দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার রাস্তার দু’পাশে নিয়মিতই বাঙ্গির হাট বসে। চাষিরা ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তুলে ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ওপর এনে হাট বসান। বেলা ১২ টা পর্যন্ত চলে এই হাট। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা হাজির হন এই হাটে। আসেন আশপাশের এলাকার ক্রেতারাও।
এ ছাড়াও যানবাহন থামিয়েও অনেকে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে। শেখেরখীল এলাকার ভাঙ্গিচাষী মোঃ ইসমাইল জানালেন, আমাদের এলাকায় প্রায় শতাধিক চাষি নিজেদের ক্ষেতে বাঙ্গির চাষ করেন। নাপোড়া-শেখেরখীল এলাকায় প্রায় ২শত কানির অধিক জমিতে এ ভাঙ্গির চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান অপর এক ভাঙ্গিচাষী সনাতন নাথ। এ এলাকায় পর্যাপ্ত পাহাড়ি ছড়ার পানি থাকায়, বাঙ্গিচাষের উর্বর ভূমি হওয়ার ফলে এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানের উৎপাদিত বাঙ্গি বেশ মিষ্টি বলে তাঁরা জানান।
রাস্তার পাশে বসা অস্থায়ী হাটে ঘুরে নানা আকারের বাঙ্গি দেখা গেল। দামও আকার অনুযায়ী। সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার বাঙ্গি আছে। গত বছর বড় সাইজের যে ভাঙ্গি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এখন ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছে চাষিরা। চাষিরা জানান, ‘করোনা সংকটে দেশে চলমান লকডাউনে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারেরা আসতে পারছেনা বলেই চলতি মৌসুমে আমরা উপর্যুক্ত দাম পাচ্ছিনা। তবে, পার্শ্ববর্তী উপজেলার সাতকানিয়ার কেরানাহাট, দোহাজারী, আমিরাবাদ, চকোরিয়া থেকে হাটে প্রতিদিন ১৫-২০জন পাইকারি বিক্রেতা বাঙ্গি কিনতে আসেন।’
বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের হাজী আলী মিয়া বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে দেড় কানি জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। ক্ষেতে উৎপাদিত সব ফলই আমরা এখানে বিক্রি করি।’ তিনি আরও জানান, আমার দেড়কানি জমিতে জমির লাগিয়ত সহ যাবতীয় খরচ পড়ে ৪০ হাজার টাকা। পুরো মৌসুমের ফল বিক্রি করে অর্জিত হতো ২ লক্ষ টাকা। তবে, এ বছর ৫০ হাজার টাকা আয় করতে কষ্ট হবে।’
উপজেলার নাপোড়া, শেখেরখীল ও পুকুরিয়ার চাঁনপুরে ভাঙ্গির ব্যাপক চাষ হয়। ভাঙ্গিচাষে স্বাবলম্বি হয় এ অঞ্চলের মৌসুমি চাষিরা। চলতি বছরে বাঙ্গির বাম্পার ফলন হলেও উচিত মুল্য না পেয়ে হতাশ চাষীরা। চৈত্রের ১৫ তারিখ থেকে ভাঙ্গি এসেছে বাজারে। বৃষ্টির আধিক্যতা না হলে এ ভাঙ্গি বাজারে থাকবে পুরো রমজান জুড়ে।
Developed By Muktodhara Technology Limited