শিরোনাম
ঢাকা ব্যুরো | ২১:৪২, জুন ২৯, ২০২০
যাত্রীরা যখন সবাই ঘাটে নেমে যখন যার যার গন্তব্যের ভাবনায় ছিলেন তখনই মৃত্যুদূত তাদের সব স্বপ্ন চুরমার করে দিলো। এ যেন কোন দূর্ঘটনা নয়, একেবারেই লঞ্চ চাপা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে মানুষ হত্যা। সোমবার সকালে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামপুর লাল ঘাটে বিশাল স্টিলবডির দানব লঞ্চের থাবায় মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডেই (৩২টি লাশ উদ্ধার) অর্ধশত মানুষের জীবন কবজ করে নিলো মৃত্যুদূত ময়ূর নামের লঞ্চটি।
ঘাটে থাকা বিআইডাব্লিউটিএ এর সিসি ক্যামারায় এমন দৃশ্যই সাক্ষ্য হয়ে আছে। নদীতে কোন শৃংখলা না থাকা ৫০জন যাত্রী বহনের অনুমতি থাকলেও এক থেকে দেড় শতাধিক যাত্রী বহনের কারনে লঞ্চের গতি কম থাকায় বিপদজনক পরিস্থিতে দ্রুত অতিক্রম করতে না পারার কারণে ছোট ছোট যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো দুর্ঘটনায় পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার তীরে ভিড়ার কয়েক মিনিট আগেই মৃত্যু মুখে পড়তে হলো প্রায় অর্ধশত নৌ যাত্রীকে।
বেঁচে যাওয়া লঞ্চ যাত্রী মাসুদের ভাষ্য : সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এমএল মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি এলাকা থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। সদরঘাটের কাছেই ফরাসগঞ্জ ঘাট এলাকায় নদীতে লঞ্চটি ডুবে যায়। কেবিনের জানালা দিয়ে বের হয়ে সাঁতরে বেঁচে যান মো. মাসুদ নামে এক কাপড় ব্যবসাী। বেঁচে যাওয়া যাত্রী মাসুদের বর্ণনায় উঠে আসে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটি।
মাসুদ জানান, ময়ূর -২ নামে একটি লঞ্চ ধাক্কা দিলে মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই মনিং বার্ড উল্টে নদীতে ডুবে যায়।
মাসুদ বলেন, ‘ঘাটে ভেড়ার জন্য আমাদের লঞ্চ সোজা চলছিলো। অন্য একটা লঞ্চ বাঁকা হয়ে রওনা দিচ্ছিলো। বাকায়ে রওনা দেওয়াতে ওই লঞ্চটা আমাদের লঞ্চের মাঝামাঝি আঘাত করলে সাথে সাথে লঞ্চটা কাঁত হয়ে ওল্টে ডুবে যায়। আর এই ঘটনা ঘটে মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই। আমি কেবিনে ছিলাম। কোনমতে গ্লাস খুলে আমি বের হয়ে যাই। ভেতরে আমার আপন দুই মামা ছিলো। তারা বের হতে পারেন নাই। তাদের খোঁজ করছি।।
নিহতরা হলেন - শাহাদাত হোসেন (৪৪), আবু তাহের বেপারী (৫৮), সুমন তালুকদার (৩৫), ময়না বেগম (৩৫), তার মেয়ে মুক্তা আক্তার (১৩), আফজাল শেখ (৪৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪২), গোলাপ হোসেন (৫০), সুবর্ণা বেগম (৩৮), তার ছেলে তামিম (১০), আবু সাঈদ (৩৯), সুফিয়া বেগম (৫০), শহিদুল ইসলাম (৬১), মিজানুর রহমান কনক (৩২), সত্য রঞ্জন বনিক (৬৫), শামীম বৈপারী (৪৪), বিউটি আক্তার (৩৮), আয়শা বেগম (৩৫), মো. মিল্লাত (৩৫), মো. আমির হোসেন (৫৫), সুমনা আক্তার (৩২), পাপ্পু (৩২), মো. মহিম (১৭), দিদার হোসেন (৪৫), হাফেজা খাতুন (৩৮), হাসিনা রহমান (৩৫), সিফাত (৮), আলম বেপারী, তালহা (২), ইসমাইল শরীফ (৩৫), সাইফুল ইসলাম (৪২) ও বাসুদেব নাথ (৪৫)।এ
দের বেশীর ভাগ বাসিন্দাই মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। সকলে লঞ্চ ডুবির সংবাদ গণমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি ঘাট, ঢাকায় থাকা স্বজনরা সদরঘাট, শ্যামবাজার, মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে ভীড় জমান।
এ সময় স্বজনহারানো বা নিখোঁজ থাকাদের আহাজারিতে গোটা এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
Developed By Muktodhara Technology Limited