শিরোনাম
শাহজাহান চৌধুরী শাহিন, কক্সবাজার সংবাদদাতা | ২৩:৩৬, আগস্ট ১৬, ২০২০
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার বাসীকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস। পুরোপুরি অচল হয়ে পড়া কক্সবাজার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে রোহিঙ্গাসহ প্রায় ৪ হাজার। রোহিঙ্গাসহ অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকায় পুরোপুরি লকডাউন তুলে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছেন, ১৭ আগষ্ট সোমবার থেকে সীমিত আকারে লকডাউন তুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করবে পর্যটন শহর। দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে করোনার বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কায় কাবু। গত ৫ মাসে সেখানে কাজ হারিয়েছেন ২ লাখেরও বেশি মানুষ। কর্মহীন মানুষদের কাজে ফিরিয়ে নিতে লকডাউন শিথিল করে দোকানপাট খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৭ আগস্ট) থেকে সীমিত আকারে কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্ট সহ পর্যটন শিল্প সম্পূর্ণ পরীক্ষামূলকভাবে খুলে দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র কক্সবাজার পৌর এলাকার পর্যটন শিল্প সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান সমুহ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির জুম কনফারেন্স সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, জেলার পর্যটন শিল্পের সাথে বিভিন্নভাবে প্রায় ২ লাখ মানুষ জীবিকা জড়িত। তাদের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্বাস্থবিধি কঠোরভাবে মেনে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পর্যটন শিল্প খুলতে হবে। মেনে চলতে হবে, এ বিষয়ে প্রণীত কর্মপন্থার সকল নিয়মাবলি। এ বিষয়ে স্টেক হোল্ডার সহ কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পের সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং আগত পর্যটকদের যে কোন অবস্থাতেই স্বাস্থ্য বিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে। তারপরও কেউ স্বাস্থ্য বিধি লঙ্গন করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষনিক তদারকি থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
পর্যটন শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে উখিয়া-টেকনাফের পর্যটন শিল্পও খুলে দেওয়ার অনুরোধ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে এসেছে-সে ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজার পৌর এলাকায় পর্যটন শিল্প সীমিত আকারে খোলা থাকাবস্থায় কোভিড-১৯ এর সংক্রামণের মাত্রা ও গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষন করে পর্যটন শিল্পের উম্মুক্ত এলাকা আরো সম্প্রসারিত করা বা সংকুচিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সমুদ্র সৈকত মাস্ক ছাড়া প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। স্থানে স্থানে ব্যানার পোস্টারে টাঙানো হয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস পর সীমিত আকারে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্ট, ক্ষুদে, ভাসমান ব্যবসায়ী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে প্রস্তুতির ধুম পড়ে গেছে। ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। নিচ্ছেন, স্বাস্থ্য বিধির আলোকে বিভিন্ন ব্যবস্থা। ফিরে আসছে, কক্সবাজারের কোলাহলময় ঐতিহ্যবাহী পর্যটন শিল্পের আসল রূপ। যদিও বা পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে ব্যাপকভাবে পর্যটক আসা শুরু করেছে। আগামী অক্টোবর থেকে কক্সবাজারে পর্যটন মওসুম শুরু হওয়ার মাস দেড়েক আগে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উম্মুক্ত করে দেওয়ায় পর্যটন শিল্প উদ্যোক্তারা বেশ খুশি। তারা আসন্ন পর্যটন মৌসুমের জন্য সময় নিয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
এছাড়া, কক্সবাজার জেলা টুরিস্ট পুলিশও পর্যটক এবং পর্যটক শিল্পের সার্বিক নিরাপত্তায় বেশ প্রস্ততি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, রেসকিউ টিম গুলো সহ সংশ্লিষ্ট সকলে তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমুহ নিশ্চিত করেছেন।
Developed By Muktodhara Technology Limited