শিরোনাম
জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা সংবাদদাতা | ১৮:২৭, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
কর্ণফুলী টানেল ঘিরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দুই মাসের মধ্যে শুরু হচ্ছে ছয় লেইনের সংযোগ সড়কের কাজ।
বৃহস্পতিবার চারশ‘ কোটি টাকার এ প্রকল্পের দরপত্র জমাদান সম্পন্ন হয়। তুলনামূলক বিবরণী মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরুর চেষ্টা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এসড়ক এক সময় কর্ণফুলী টানেল হয়ে কক্সবাজার দিয়ে মিয়ানমারের উপর দিয়ে যাবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত।
দেশজুড়ে মহামারী করোনার বাগড়াতেও কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ভালভাবেই। এর মধ্যে প্রকল্পের ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলকে কেন্দ্র করে ইকোনমিক জোন, কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল, বন্দর কার্যক্রম সম্প্রসারণসহ বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। টানেলের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারমুখি ৯০ শতাংশ গাড়ি চলাচল করবে কর্ণফুলী টানেল হয়ে। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর ও টেকনাফ স্থল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। কর্ণফুলী টানেল হয়ে যে সড়ক কক্সবাজার যাবে তা কোনো একসময় মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত।
আর সড়ক নেটওয়ার্কে বিশাল এই পরিকল্পনার সংযোগস্থল হতে যাচ্ছে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট প্রশস্ত ৬ লেইনের টানেল সংযোগ সড়কটি। তাই অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ গুরত্ব পাচ্ছে এই সড়কটি।
দ্রুত এগুচ্ছে টানেল প্রকল্পের কাজ : টানেল সংশ্রিষ্ট সূত্র জানায় এর মধ্যে এই প্রকল্পে ৫৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনার মধ্যে বন্ধ ছিল না প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পে বিশেষজ্ঞসহ ২১৯ চীনা নাগরিক কাজ করছেন এবং দেশীয় কর্মকর্তা ও শ্রমিক পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন প্রায় সাড়ে ৫শ’। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত চীনা বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা করোনার মধ্যে দেশে ফিরে গেলেও সম্প্রতি আবার কাজে যোগ দিয়েছে। করোনার মধ্যেই শেষ হয়েছে আরো ৫ ভাগ কাজ।
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে আনোয়ারা পয়েন্ট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের একটি টিউবের বোরিং এবং রিং প্রতিস্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী নবেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ইউটার্নের মাধ্যমে অপর টিউব প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হবে। এ প্রক্রিয়ায় টার্গেট অনুযায়ী আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ টানেল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানানো হয়েছে।
সংযোগ সড়কের টেন্ডার সম্পন্ন : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল সংযোগ ছয় লেইনের সড়কের ই-টেন্ডার জমা হয়েছে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) । কর্ণফুলীর উপজেলার শিকলবাহা এলাকা থেকে আনোয়ারা উপজেলার কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার এই সড়ক ঘিরে আশায় আছেন অনেক সাধারণ মানুষ।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা উপজেলার কালাবিবির দীঘি মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটারের একটি সংযোগ সড়কের মাধ্যমে ঢাকা-কক্সবাজারের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার কমিয়ে আনার চিন্তা চলছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানা যায়, টেন্ডার জমার পর তুলনামূলক বিবরণী তৈরি করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে ঠিকাদারের কাছ থেকে নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড (এনওএ) বা সম্মতি নেওয়ার পর দেওয়া হবে কার্যাদেশ। তবে কাজ পাওয়ার জন্য ৫ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত দেওয়া হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে দেওয়া হবে কার্যাদেশ।
জানা যায়, ১৬০ ফুট প্রশস্তের এই সড়কটিতে ধীরগতির গাড়ির জন্য দুই লেইনসহ মোট ৬ লেইন হবে। সড়কের জন্য বেশিরভাগ জমি অধিগ্রহণ করা থাকলেও ব্যস্ততম বাজার গুলোতে কিছু জায়গা অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। মূল কাজ শুরুর পরেই এই অধিগ্রহণ করার চিন্তা করছে সওজ।
ছয় লেইনের সংযোগ সড়ক ঘিরে অনেকাংশে বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলের ব্যস্ততম চাতরী চৌমুহনী বাজার ও কর্ণফুলীর উপজেলার বড়উঠান ফাজিলখাঁর হাটসহ কয়েকটি বাজারের চেহারা। বর্তমানে সড়কটি প্রশস্ততা মাত্র ১৯ ফুট। রাস্তাটি সরু হওয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময় এই সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। কেইপিজেডের বিভিন্ন কলকারখানা ছুটি হলে যানজট স্থায়ী হয় ৩/৪ ঘন্টা পর্যন্ত।
এই সড়কটি নতুন করে ১৬০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। সড়কের জন্য বেশিরভাগ জায়গা সওজের অধিগ্রহণে থাকলেও চাতরী চৌমুহনী ও ফাজিলখার হাট এলাকায় কিছু জমি াধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। আর এতে আতংক দেখা দিয়েছে রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
ইতিমধ্যে অনেকেই মূল সড়কের আশপাশ থেকে দূরে গিয়ে ব্যবসায়িক ঠিকানার খোঁজ শুরু করেছেন। দুই শতাধিক দোকানের চাতরী চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যেই বেশি আতংক কাজ করছে। এই বাজারের পাশেই কর্ণফুলী টানেলের মূল সড়ক, চায়না ইকোনমিক জোন, কেইপিজেড ও টানেলের বিকল্প সড়ক হওয়াতে অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে কয়েকটি মার্কেট ও বেশকিছু দোকানপাট।
আতংকে ব্যবসায়ীরা : চাতরী চৌমহনী বাজারের ৪ তলা বিশিষ্ট নির্মাধীন মার্কেটের মালিক মো. ইব্রাহিম জানান, টানেল সংযোগ সড়কের প্রসারনের বিষয় নিয়ে আতঙ্কে আছি, মার্কেটের কাজ ৮০ ভাগ শেষ করেছি এ অবস্থায় ভাঙনের কবলে পড়লে আমি বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হব।
হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী ইকবাল বাহার জানান, নিজের অর্থ-সম্বল বলতে এ দোকানটিই, এ অবস্থায় টানেল সংযোগ সড়কের বর্ধিতকরণে আমার দোকান উচ্ছেদ করলে কোথায় যাব জানিনা।
সড়ক ও জনপথের দোহাজারী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, টেন্ডারে ঠিকাদারের যোগ্যতা বিবেচনার জন্য ৫ বছরের টার্নওভার চাওয়া হয়েছে। এই সময়ে তাদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। ঠিকাদারের জন্য জামানত নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। নির্বাহী সুমন সিংহ আরো বলেন, কিছু পকেট ল্যান্ড আছে। মূল কাজ শুরুর পর সেগুলো অধিগ্রহন করা হবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited