শিরোনাম
মাহফুজ আলম, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) সংবাদদাতা | ১৮:৪৮, অক্টোবর ৫, ২০১৮
সরকারিভাবে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও কাপ্তাই ইউনিয়নবাসীর ভাগ্যে সে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মৌজা সংকটের কারণে। কাপ্তাইকে মৌজাকরণ আওতায় না আনায় প্রায় ১৫ হাজার জনগণ স্বাধীনতার ৪৫বছর পরেও উদ্বাস্তুর ন্যায় বসবাস করছে এ ইউনিয়নে। অভিশপ্ত কাপ্তাইবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামণা করে কাপ্তাইকে মৌজা ঘোষণা দাবী জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। মৌজাকরণ বাস্তবায়নে কয়েক দফা একাধিক চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতারা প্রচেষ্টা চালিয়েও বারবার ব্যর্থ হওয়ায় কাপ্তাইয়ের জনগণের ভাগ্যে এক টুকরো জমিও মিলেনি। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর অত্রিক্রম হলেও কাপ্তাই ইউনিয়নে মৌজাকরণ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যে বাসস্থানের জায়গা এখনো নির্ধারিতভাবে জুটেনি। যদিও বাংলাদেশ সংবিধানে-স্বীকৃত দেশের প্রতিটি নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের চাহিদার অন্যতম বাসস্থান নিশ্চিতকরণ। কাপ্তাইবাসীর এ প্রাণের দাবী মেটাতে এবং সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিতকরণে কেবল এ পর্যন্ত মিলেছে আশ্বাস।
বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সাংসদ এবং উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কিন্তু ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের মৌজাকরণ সমস্যা কাটিয়ে একটি স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিল যা কেবলমাত্র নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যই ছিল বলে এলাকাবাসীর অভিমত। কাপ্তাইবাসীর প্রাণের দাবি একটি মৌজা ঘোষণা না হওয়ায় এ ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র ভয়াবহ ও মানবেতর। ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৮ভাগ নাগরিক পরিকল্পিত ও প্রত্যাশিত মৌজার অভাবে আবাসন-ব্যক্তি মালিকানা জায়গা জমি ও বাসস্থানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রতি বছর ১ অক্টোবর বিশ্ব বসতি দিবসে দেশের সমাজ বিজ্ঞানিরা সকল নাগরিকের জন্য আবাসন-বসবাসের সুবিধা নিশ্চিতকরণের দাবী জানালেও ঐসব দিনগুলোতে কাপ্তাইয়ের ১৫ হাজার ভূমিহীন জনগণের অধিকারের দাবী আদায়ে সরকারী পর্যায়ে অদ্যাবধি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি কাউকে।
চেয়ারম্যান, মেম্বার থেকে শুরু করে কাপ্তাই ইউপির সকল জনপ্রতিনিধিরা ভাড়া করা বাসায় থেকে জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরেই। কেউ কেউ মনে করছেন, স্থানীয় সরকারের কাপ্তাই ইউনিয়নের সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ যাবৎ যতগুলো চেয়ারম্যান মেম্বার নির্বাচিত হয়ে কাপ্তাই ইউপি’র জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছে তাদের অধিকাংশরই বর্তমানে অস্থিত্ব নেই কাপ্তাইয়ে। এর মূল কারণ নিজস্ব কোন ভূমি না থাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৬৮সালের যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে প্রথমে জিয়ার খান এক ব্যক্তি কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পরে রহিম নামের ব্যক্তিটি কাপ্তাইয়ের ইউপি চেয়ারম্যান হন, এর পরবর্তী ১৯৭৬ সালে কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলহাজ্ব আব্দুর শুক্কুর, তার পরবর্তীতে লতীফ ভূঁইয়া চেয়ারম্যান হন, এর পর ১৯৮২ সালে মো: ইদ্রীছ কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, এরপরে এনামুল করিম মাস্টার ১৯৮৯ সালে চেয়ারম্যান হন, ক্রমান্বয়ে ছৈয়দ ইসমাইল নিজামী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি ১৯৯৬ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকেন। এর পর মহিউদ্দিন কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন, তিনি একাধারে ২০১০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে কাপ্তাইয়ের জনগণ অধিকার আদায় ও কাপ্তাইকে মৌজা ঘোষণাকরণ প্রত্যাশা রেখে সুশিক্ষিত প্রকৌশলী আব্দুল লতিফকে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার আট বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কাপ্তাইবাসী প্রত্যাশিত মৌজার কোন কুলকিনারা পাচ্ছে না।
স্থানীয় জনগণ বলছে, ৪৫ বছর সময়কালে ৯ জন কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান ভোটে নির্বাচিত হন। কিন্তু তাদের কারোই বর্তমানে কাপ্তাইয়ে বসবাস বা কোন অস্থিত্ব নেই। এর মূল কারণ ছিল ভূমিহীন প্রতিনিধিরা সকলেই ভাড়া করা বাসা নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করতেন এবং বর্তমানেও করছেন। যার ফলশ্রুতিতে কারো ভাগ্যে জুটেনি বন্দোবস্তীর এক টুকরো জমিও। এখনো উদ্বাস্তুর ন্যায় বসবাস করছে কাপ্তাইয়ের সাবেক ও বর্তমান ৯ ইউপি চেয়ারম্যান, ১৫০ জন মেম্বারসহ ১৫ হাজার জনগণ। বিষয়টি দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষকে ভাবিয়ে তুললেও পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার কাউকে এ নিয়ে ভাবতে দেখা যাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল অবহেলিত কাপ্তাইকে মৌজাকরণের দাবী রেখে কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Developed By Muktodhara Technology Limited