image

আজ, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনায় প্রতিবন্ধী শিশুর যত্ন

মো.আবুল বশার    |    ১৭:২৮, অক্টোবর ২৬, ২০২০

image

চৌদ্দ বছর বয়সী আজিজুল হাকিমের হাত দুটি আজ প্রায় নয় বছর ধরে সম্পূর্ণ অচল। “পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির কাছে এক দোতলা মসজিদ থেকে একজন আমাকে ধাক্কা দিলে আমি বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ে যাই। এরপর আর কিছু মনে নাই, জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে। আমার ডান হাত কেটে ফেলছে ডাক্তার। আর বাম হাতও এরপর অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু আমি সবই করতে পারি। খালি লুঙ্গি বা প্যান্ট পড়তে পারি না, শার্টের বোতাম লাগাতে পারি না।” দৈনন্দিন প্রায় সব কাজই একাই করতে পারে, এমনকি মুখে কলম ধরে লিখতেও পারে হাকিম।  মীরসরাইয়ের এক প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ‘এ প্লাস’ পেয়ে এবার ক্লাশ নাইনে উঠলেও অভাবের কারণে ভর্তি হতে পারে নি। হাকিম একজন আত্মীয়কে সাথে নিয়ে ঢাকার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে এসেছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির সহায়তায় কোন একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার আশায়। কিন্তু এখনো জানে না সে ব্যবস্থা আদৌ হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা। 

হাকিমের মত যে কোন মানুষ যে কোন বয়সে প্রতিবন্ধী হতে পারে। কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী, কেউ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছাড়াও আছে দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশু। আছে জন্মপ্রতিবন্ধী।

এ প্রতিবন্ধিতা কোন রোগ নয়। এটি মস্তিষ্কের বিকাশ বা আঘাতজনিত সমস্যা মাত্র। ফলে শিশুর ক্ষেত্রে মানসিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। স্বাভাবিক শিশুর মত ঐ শিশু পরিবারের, সমাজের কিংবা বন্ধু-বান্ধবের মাঝে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেনা।  দেখতে শুনতে স্বাভাবিক ও উজ্জ্লবর্ণের হলেও এরা নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে পছন্দ করে। যেটার লক্ষণ কারো ক্ষেত্রে চোখে বুঝা নাও যেতে পারে। কারো বা কম বেশি হতাশা থাকে। এই ধরনের শিশুর অনেক অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি, উচ্চ স্বরে চিৎকার করা, চেঁচামেচি করা, সবকিছু ভেঙে ফেলা, মা বাবা বা আত্মীয়স্বজনকে মারধর করা বা কোন কিছু ছুঁড়েমারা, ঠিক মত টয়লেট ট্রেনিং না করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খিচুনী বা মানসিক পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে। এরা অনেক সময় প্রকৃতি ভালোবাসে, বাহিরের জগতের নীলাকাশ, কালোমেঘ বা বৃষ্টি হলে খুবই উৎফুল্ল হয়ে যায়। আবেগ প্রবণ হয়, অনেক সময় বাহিরে বের হয়ে রাস্তায় বা পার্কে খুব আনন্দের সাথে দৌড়া দৌড়ি করে, গুন গুন গান করে, ফুলকে ভালোবাসে, প্রজাপ্রতির সাথে খেলা করে, মনে মনে কবিতা আবৃত্তি করে। বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী শিশুর সমস্যা তত গুরুত্ব হয় না। মারাত্মক হলে ভিন্ন কথা।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী শিশু ঘরেই আছে, স্কুল বা বাহিরে যাওয়ার তেমন সুযোগ নেই। আমাদের দেশের বাস্তবতায় আমাদের বাসস্থান প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য মানানসই নয়। তাই এ পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী আক্রান্ত শিশুর মা বাবারা স্বস্তিকর অবস্থায় নেই বলেই মনে হয়। এক্ষেত্রে কিছু উপদেশ বা পরামর্শ পরিবারের কাজে আসতে পারে। 
 
আগেই বলা হয়েছে বেশিরভাগ অটিজম শিশু প্রকৃতি ভালোবাসে। তাই ঘরের ভিতরে প্রাকৃতিক পরিবেশ আনুন। ঘরের ১টি রুমকে ফার্নিসার সরিয়ে রুমটাকে খোলামেলা রাখুন। প্রয়োজনে ঘরটিকে কৃত্রিম গাছ-পালা, ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখুন। রং তুলি দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্যসংবলিত ছবি দেয়ালে লাগান। তাদের সাথে এমনভাব করুন বা আচরণ ভঙ্গি করুন যেন এটি একটি বাহিরের পরিবেশ। কিছু কাগজের ফুলও তৈরি করে রাখতে পারেন। যেহেতু প্রতিবন্ধী শিশুরা বহুদিন ঘরে আটকে আছে সেহেতু তাকে ৭ দিনের জন্য ১টি রুটিন করে দিন। সকালে ঘুম থেকে রাত্রে বিছানায় যাওয়া পর্যন্ত রুটিন করে ফেলুন। একেক দিন একেক রকম বৈচিত্র নিয়ে রুটিন করবেন। দেওয়ালে বড় বড় করে লিখে রাখুন। কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত তার কি কাজ এটা অনেকটা ক্যাডেট কলেজের ছাত্রদের রেজিমেন্টেড রুটিনের মত। তবে সে ওই রুটিনে অনিহা প্রকাশ করলে রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনুন। শিশুর কাপড়-চোপড় সব সময় ঢিলে-ঢালা ও রঙ্গিন করার চেষ্টা করুন।

মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে মাঝে মাঝে শিশুকে গরম পানিতে গোসল করাবেন। তখন সমস্ত শরীরে চেপে চেপে গা হাত পরিস্কার করাবেন। এ ধরনের চাপ/প্রেসার অনেকটা থেরাপির কাজ করবে। ঘরের মাঝখানে একটি দোলনা লাগাবেন। সম্ভব হলে ছাদে নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করবেন। অথবা খুব ভোরে সামনের রাস্তায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা দৌড়া-দৌড়ি করবেন। আপনার শিশু যদি তার সমস্যার কারণে কোন ওষুধ খেয়ে থাকে তা অবশ্যই নিয়মিত খাওয়াতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশু প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে। প্রয়োজনে রাত্রে ১ চামচ ইছুবগুলের ভূসি ১ গ্লাস পানিতে গুলিয়ে ঘুমানোর আগে খাইয়ে দিবেন। প্রয়োজনে কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ ব্যবহার করবেন। খিুচনি থাকলে খিচুনির ওষুধ সঠিকভাবে খাওয়াতে হবে। আর মানসিক অস্থিরতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ খওয়ানো যেতে পারে। চর্বিযুক্ত খাবার দিবেন না, আঁশযুক্ত খাবার, সবজি খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন, টিভি বা ট্যাব দেখা একদম বন্ধ করে দেবেন না। তবে কার্টুন নয়  শিক্ষণীয় কোন প্রোগ্রাম হলে ভাল। শিশুর প্রত্যেক কথা বা কাজকে বিশ্লেষণ করবেন। বিরক্ত হলে অন্য প্রসঙ্গে যাবেন। সব সময় তার ন্যূনতম কাজকে প্রশংসা করবেন। কিছুতেই তিরস্কার করবেন না। বস্তুত এ সময়ে মা-বাবাকে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলশিক্ষক বা গুগল থেকে পরামর্শ নিবেন।
 
করোনা এই মহামারিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে মা বাবারা উদ্বিগ্ন থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিবন্ধী ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এই পরিস্থিতিতে ও সেবাকার্যক্রম চালু রেখেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত এই সেবা কার্যক্রম চালু আছে। চিকিৎসাসহ সব ধরনের থেরাপি যেমন- লো-ভিশন, ডেভেলপমেন্টাল থেরাপি, সাইকোলজি, আর.এন.ডি.এ, স্পীচথেরাপী, নিউট্রিশান, অকুপেশনাল থেরাপী, ইইজি, হেয়ারিং ইত্যাদি চালু রয়েছে। 
 
শিশুদের স্নায়বিক জটিলতা ও প্রতিবন্ধিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তনয়া মিজ সায়মা হোসেন কাজ করছেন সেই ২০০৮ সাল থেকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেয়েছেন বিশেষ পরিচিতি। “শৈশব ও কৈশোরে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলাম গ্রামীণ জনপদে। দেখেছি এ ধরনের শিশুদের গ্রামে পাগল বলে হাসি-তামাসা করা হতো। বলা হতো পরিবারের কারো পাপের ফসল এটি, আল্লাহর অভিশাপ আরো কত কি। বাবা-মা বাধ্য হয়ে সন্তানকে ঘরের বাইরে বের করতো না, লুকিয়ে রাখতো। এমনকি কেউ কেউ ঘরের ভেতরে শেকল দিয়েও বেঁধে রাখত। বেদনার নীল জগতে বসবাসকারী এসব শিশুদের সমাজের এবং পরিবারের বোঝা ভাবা হতো”-বক্তব্য সায়মা হোসেনের।

আজ তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার ব্রতে নিরলস  সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স করে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কল্যাণে। তাঁর প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় প্রতিবন্ধিতা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় অটিজম নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে এ সম্মেলনের মাধ্যমেই। সার্কভুক্ত দেশসমূহের অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা সহায়তার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে এ নেটওয়ার্ক বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন। শিক্ষা, যোগাযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সকল উন্নয়নে প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়েছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ ভাগেরও অধিক প্রতিবন্ধী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে ২০ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৫৭ জন, মহিলা ৮ লক্ষ ৩ হাজার ৬১২ জন এবং হিজড়া ২৫৮৯ জন। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণ জরিপ সেল ১২ ক্যাটাগরিতে এই সংখ্যা অনলাইনে তালিকবদ্ধ করছে। তালিকামতে, অটিজম ক্যাটাগরিতে ৫৭ হাজার ৮৭৫ জন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ১২৪ জন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী ৭৩ হাজার ৭২৯ জন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩০ জন, বাক প্রতিবন্ধী ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪৪০ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৪১ জন, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ৬৫ হাজার ৩৪৬ জন, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৮ হাজার ৭৩৪ জন, সেরিব্রালপালসি ৯১ হাজার ২৬০ জন, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ২ লক্ষ ৯ হাজার ৭৭৮ জন, ডাউন সিনড্রোম ৪ হাজার ৬৮৮ জন ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১৫ হাজার ৯১৩ জন।

এ বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এ জনগোষ্ঠীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকার কাজ করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ৫ হাজার ৫২ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব অসহায় মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার।  সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। শনাক্তকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ল্যামিনেটেড পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ভুক্ত একটি অধিদপ্তরে রূপান্তরের জন্য একে ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তর’ হিসেবে ঘোষণাসহ নাম ফলকও উন্মোচন করেন। প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউণ্ডেশনের ক্যাম্পাসে এ সরকারই ২০১০ সালের ২ এপ্রিল ’অটিজম রিসোর্স সেন্টারে’ এরও শুভ উদ্বোধন করেন। এর পাশাপাশি সেখানে একটি করে প্রতিবন্ধী কর্মজীবী পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল, প্রতিবন্ধী শিশুনিবাস ও অটিষ্টিক স্কুলও চালু করা হয়েছে। এছাড়া অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের অভিভাবকগণকে শিশুর প্রত্যাহিক লালনপালনের বিষয়ে প্রশিক্ষণদানসহ বিভিন্ন প্রকার সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন-ক্যাম্পাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকপর্যায়ের শ্র্রবণ, বুদ্ধি ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয়ও চালু রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর জন্য আবাসিক সুবিধা রয়েছে। এমনকি ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ৬৩টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও ১১টি স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজমও পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিক্ষালাভ করছে।

দেশের প্রতিবন্ধী ও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদানের জন্য দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির দোরগোড়ায় থেরাপিউটিক সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে ৩২টি ভ্রাম্যমান মোবাইল রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি-ভ্যান এর কার্যক্রম চলমান আছে।বাংলাদেশের ১৪টি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। নীতি নির্ধারক, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা সবাই এ কর্মযজ্ঞে এক কাতারে শরীক করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন সূচনা ফাউন্ডেশনের মত সম্পূর্ণ সেবাধর্মী অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের। যুক্ত করেছেন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ডা. গোলাম রব্বানী, ডা. আফম রহুল হকের মত বরেণ্য চিকিৎসকদের। 

প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করে। তিনি বলেছেন, এদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। সেটাই বিকাশিত করে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। যেন মেধা বিকাশের মাধ্যমে তারাও সমাজকে কিছু উপহার দিতে পারে। অটিজমে আক্রান্ত প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, চালর্স ডারউইন, আইজ্যাক নিউটনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, অটিস্টিক শিশুরা যেন অবহেলায় হারিয়ে না যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তারাও মানুষ। তারাও আমাদের সমাজের অংশ। তাদের জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে। একটা দেশকে উন্নত করতে হলে তা সবাইকে নিয়ে করতে হবে। কাউকে অবহেলা করে না। জাতীয় উৎসবসমূহে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে এখন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আঁকা ছবি শোভা পাচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় আর্ন্তজাতিক আইন গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রণী দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এর প্রটোকলেও স্বাক্ষর করেছে। যা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী মানবিক নেতৃত্বে এবং তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, অগ্রণী ভূমিকার কারণে।

বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন একটি পতাকা, স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশ। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অদম্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি; পেয়েছি উন্নয়নশীল বাংলাদেশ, স্বপ্ন দেখছি উন্নত বাংলাদেশের। আর সে লক্ষ্যেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে সার্কভুক্ত দেশ সমূহকে ছাড়িয়েছি আমরা। জাতির পিতার দৌহিত্রের যোগ্যতার লীড়ারশীপে দেশের পিছিয়ে পড়া প্রায় ১৬ লক্ষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের নতুন স্বপ্ন দেখানো এবং তাদের উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার কঠিন কাজটি করেছেন দৃঢ়তার সঙ্গে আমাদের প্রিয় সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া' রবীন্দ্রনাথের এ ভাবনার সারথী, মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন লক্ষ বছর স্ব মহিমায় নিজ কর্মগুণে।  

লেখক : মো.আবুল বশার, পিআইডি, চট্টগ্রাম।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৮:০৯, মে ১২, ২০২২

বজ্রপাত হচ্ছে-সাবধান হই


Los Angeles

১২:২৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

“কয় জন ভালো নয়, সয় জন ভালো হয়”


Los Angeles

০০:৫৯, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবলের কলংকিত দিন ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর !


Los Angeles

১১:৩৪, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

প্রকৃতিতে নয়, কেবল কাগজের নোটেই আছে ‘জাতীয় পাখি দোয়েল‘


Los Angeles

২২:১২, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১

ফুটবলের মরা গাঙে কি আবার জোয়ার আসবে ?


Los Angeles

২৩:০৮, আগস্ট ১৫, ২০২১

শাসক নয় বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক সেবক ছিলেন


Los Angeles

১৮:৫৭, আগস্ট ১৩, ২০২১

আড্ডা যেন এক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


Los Angeles

০০:০৪, আগস্ট ৮, ২০২১

বাইরে মুক্তির কল্লোল ও বন্দী একটি পরিবার


image
image