image

আজ, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দোহাজারীতে রেলমন্ত্রীর ডেমু ট্রেন উদ্বোধন অতপর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মোঃ জাহেদ হোসেন    |    ১৭:৫০, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২১

image

মোঃ জাহেদ হোসেন (ফাইল ছবি)

গত ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১খ্রীঃ শনিবার বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রেলমন্ত্রী এডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে জনসাধারণের যোগাযোগ সুবিধার্থে ডেমু ট্রেন উদ্বোধন করলেন। মন্ত্রী মহোদয় উদ্বোধনোত্তর আড়ম্ভরপূর্ণ রাজনৈতিক মঞ্চে আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে প্রাসঙ্গিকক্রমে সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি টেনে আনেন।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করে রেল লাইনের চলমান কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের চলমান কাজে বাধা সৃষ্টি করতে একদল নদী হতে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে মিছিল ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছেন। মন্ত্রী তাদেরকে বালু উত্তোলনে বিরোধিতা করা হতে বিরত থাকতে বলেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নজর দেয়ার অনুরোধ করেন।

মন্ত্রী মহোদয় একদল বলতে কাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছেন তা আমার বোধগম্য হয়নি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সাঙ্গু নদী তীরবর্তী কোন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির স্থায়ী বসবাস নেই। যারা বালু উত্তোলনে বিরোধিতা করছেন তা’ অত্র অঞ্চলের নদী ভাঙ্গনপীড়িত জনগোষ্ঠি। যাদের অতীত ইতিহাস অত্যন্ত ভয়াবহ এবং করুণ। এসব করুণ আর্তনাদ মন্ত্রী মহোদয়ের ক্ষমতার আবর্তের ভেতরে পৌঁছেনি কিংবা এসব হত জনগোষ্ঠির পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। যার কর্ণ কোহরে হত দরিদ্রের আর্তনাদ পৌঁছেনা তার নাম সুজন হয় কিভাবে? তার নাম হওয়া উচিত ছিল কুজন। মন্ত্রী মহোদয় তার বক্তব্যে বালু উত্তোলনের উপকারীতা সম্পর্কে যে তকরির পেশ করেছেন তার সিকি পরিমানও অপকারীতা কিংবা করুণ পরিনতির কথা বলেননি। এ কারণে তার বক্তব্যে আমি দু’টি ধারণা পেয়েছি।

প্রথমত হয়তো তিনি বালু উত্তোলন পরবর্তী করুণ পরিনতি সম্পর্কে অবগত নন। দ্বিতীয়ত তিনি বালু খেকোদের এজেন্ডা নিয়েই এ এলাকায় এসেছেন। ডেমু ট্রেন উপলক্ষ মাত্র। রক্তচোষাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নই মূল লক্ষ বলেই আমার কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। আমি অবশ্য মন্ত্রী মহোদয়ের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম না। সাংবাদিক কামরুল ইসলাম মোস্তফার কিয়দাংশ ভিডিও এবং পরিবেশিত সংবাদের মাধ্যমেই বিষয়টি জেনেছি। এজন্য আমার অনুজ কামরুল ইসলাম মোস্তফাকে ধন্যবাদ। ভিডিও চিত্রে আরো দেখা গেছে, এসময় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে মঞ্চে ধারণ ক্ষমতাতিরিক্ত নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতি। দূঃখজনক হলেও সত্য মন্ত্রী মহোদয় বক্তব্যে যখন অন্যের শিখানো জনস্বার্থ বিরোধী তথ্য উপস্থাপন করছেন তখন কোন নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধি মন্ত্রীর অসত্য তথ্য শুধরানোর চেষ্টা করেননি বরং অবাক চিত্তে নেতার জনস্বার্থ বিরোধি বক্তব্য কর্ণ কোহরে প্রবেশ করে অন্তরে ধারণ করে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি আর পদপদবীর রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

মাননীয় রেলমন্ত্রী মহোদয় রেল লাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এ এলাকার জনগোষ্ঠিকে যে স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা করেছেন তা’ ঘর হারা, ভিটে হারা হত দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাছে কতটুকু পৌঁছাতে পেরেছেন আমি জানিনা। মন্ত্রী মহোদয়ের জানা উচিত অভাবগ্রস্ত আর দূর্দশাগ্রস্ত নিঃস্ব হত দরিদ্র লোকের কাছে কাকের কর্কষ ডাক আর কোকিলের কুহুতান সমান। অনুরূপভাবে পদ্মা নদীর মত গভীর নদীতে যেসব ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় ওই ধরনের মেশিন দিয়ে ক্ষুদ্র সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে নদীর দু’তীর নিমিষেই ধ্বসে পড়বে এ বিষয়ে মন্ত্রীর সন্দেহ থাকলেও আমাদের কোন সন্দেহ নেই। সাথে সাথে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যাবে ভাঙ্গনপীড়িত এ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠির ভাঙ্গন প্রতিরোধ বাঁধ স্থাপন পরবর্তী বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ভাঙ্গন পীড়িত বিশাল জনগোষ্ঠি যখন গাছ তলায় আর বাঁশ তলায় অথবা খোলা আকাশের নীচে মানবেতর দিনাতিপাত করবে তখন তাদের কাছে রেল লাইনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য আর রেলের ঝনঝনানি বিষাক্ত সর্পের ছোবল মনে হবে। হয়ত একদিন পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত এলাকায় কোথাও ঠাঁই না হলে এসব জনগন রেল ষ্টেশনের টিকেট কাউন্টারে ছাদের নীচে শুয়ে শুয়ে বিষাক্ত সাপের দংশন সহ্য করে ভাবতে থাকবে- “আমি দেখেছি কত যে গগনচুম্বি অট্টালিকার সারি, তার ছায়াতে দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী” 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন উঠতি বয়সের দেশপ্রেমিক তাদের অতিরঞ্জিত দেশ প্রেমের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। দেশ প্রেমের ঠেলায় সংবাদ পরিবেশন এবং ভিডিও পোষ্ট করার দায়ে অভিযুক্ত করে সাংবাদিক কামরুল ইসলাম মোস্তফাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করে জর্জরিত করে দিচ্ছেন। তাদের ধারণা, দেশপ্রেম শব্দটিতে শুধুমাত্র তাদের অনুপ্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকবে। আর কারো যেন দেশপ্রেম শব্দে প্রবেশের কোন অধিকার নেই। এটা অবশ্য তাদের দোষ নয়। এটা বয়সের দোষ। ব্রেষ্ট ফিডিং বাচ্চারা আর কত বুঝবে? উপদেষ্টাদের এসব বিষয়ে আরো সজাগ হওয়া প্রয়োজন। একজন লোক কর্তৃক মন্ত্রীর জনস্বার্থ বিরোধি কথা জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা কোন দিন দোষের হতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক কামরুলের প্রতিবেদন না পড়লে মন্ত্রী কি বলেছেন তা জানতে পারতাম না। এক্ষেত্রে সমালোচনার ঝড় ওঠা প্রয়োজন ছিল রেল মন্ত্রীর জনবিচ্ছিন্ন বক্তব্যের বিরুদ্ধে। তা না হয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে সংবাদ পরিবেশনকারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। ওই সাংবাদিক নিজেও একজন ভাঙ্গনপীড়িত ব্যক্তি। তিনিতো আর যাই হোক মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমর্থক হতে পারেন না। ঘটনাটা এমন, ক্ষেতে ফসল চুরি হয়ে গেছে। একজন লোক চোরের সংবাদ দিলেন। গৃহস্ত তখন দোষটা সংবাদদাতার ঘাড়ে দিয়ে বললেন, ‘তুই কেমনে দেখলি‘? 

পরিশেষে মন্ত্রী মহোদয়কে আর একটা শেষ নসিহত করি। আসলে আমাদের রেলমন্ত্রী মহোদয় কি জানেন না, রেল লাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদারী কাজের শিডিউলে স্থানীয় নদ-নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন কথা উল্লেখ নাই। বালু কিংবা মাটি দিয়ে ভরাট কাজ সম্পন্ন করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ঠিকাদারের প্রতি মন্ত্রী মহোদয় যে দরদ প্রদর্শন করেছেন তা’ দেখানো উচিত ছিল হত দরিদ্র ভাঙ্গনপীড়িত জনগোষ্ঠির প্রতি।

পক্ষান্তরে ঠিকাদারদের বিভিন্ন স্থানে কাজের জন্য সিলেন্ট সেন্ট কিংবা সিলেটি ক্রাশ পাথরের কথা উল্লেখ থাকলেও সেটা যথারীতি হচ্ছে না সে বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য সুষ্পষ্ট নয়। সবই কপাল! হায়রে কপাল! কপাল পোড়া হলে কাঙ্গালীরা কাঙ্গালী ভোজেও ভাত পায়না।

লেখকঃ মোঃ জাহেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাতকানিয়া প্রেস ক্লাব।



image
image

রিলেটেড নিউজ

Los Angeles

১৮:০৯, মে ১২, ২০২২

বজ্রপাত হচ্ছে-সাবধান হই


Los Angeles

১২:২৮, অক্টোবর ৭, ২০২১

“কয় জন ভালো নয়, সয় জন ভালো হয়”


Los Angeles

০০:৫৯, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবলের কলংকিত দিন ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর !


Los Angeles

১১:৩৪, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

প্রকৃতিতে নয়, কেবল কাগজের নোটেই আছে ‘জাতীয় পাখি দোয়েল‘


Los Angeles

২২:১২, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১

ফুটবলের মরা গাঙে কি আবার জোয়ার আসবে ?


Los Angeles

২৩:০৮, আগস্ট ১৫, ২০২১

শাসক নয় বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক সেবক ছিলেন


Los Angeles

১৮:৫৭, আগস্ট ১৩, ২০২১

আড্ডা যেন এক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়


Los Angeles

০০:০৪, আগস্ট ৮, ২০২১

বাইরে মুক্তির কল্লোল ও বন্দী একটি পরিবার


image
image