image

এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ডাকাত মকিম গাজী আমাদের বোকা বানিয়ে পালাতে চেয়েছিলো

image

মকিম গাজী। আশির ও নব্বই দশকে দেশের ডাকাত জগতের এক সম্রাটের নাম। পটুয়াখালীর মাটি ভাঙ্গা গ্রামে জন্ম নেয়া এই ডাকাত আলোচিত হয়েছিলেন ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুই দুইবার পালিয়ে। জেল পলাতক এই ডাকাতকে ধরতে পুলিশ প্রসাশনকে হিমশিম খেতে হয়েছিলো। তখন তথ্য প্রযুক্তির এত সুযোগ সুবিধা ছিলোনা। সোর্স নির্ভর অপরাধী আটকেই পুলিশকে কাজ করতে হতো। তবে তখন সোর্সদের মধ্যে ছিলো না কোন ছলচাতুরী বা প্রতারণা। এমনই সময়ে নব্বই দশকের প্রথম দিকে মকিম গাজী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার দলবলসহ কারাপ্রাচীর টপকে পালিয়ে যান। ঢাকার উর্দু রোডের বর্তমান নতুন রাস্তার প্রাচীর টপকে পালিয়ে ছিলেন তিনি।

ডাকাত মকিম গাজীর জেল পালানোর সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠে পত্রিকার পাতায়। এসি আকরাম হোসাইন তখন ডিবিতে। ঢাকার তৎকালিন ১৪টি থানা, এসবি, ডিবিসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাই হন্যহয়ে খুঁজতে থাকেন মকিম গাজীকে। এসি আকরাম হোসাইন একাধিকবার গ্রেফতার করেছেন মকিম গাজিকে। তাই মকিম গাজীর অবস্থান সম্পর্কে তার খোঁজখবর নেয়া অনেকটা সহজ ছিলো। দুপুরেই সংবাদ এলো মকিম গাজী তৎকালীন ডেমরা থানার কোনা পাড়া এলাকার একটি ঝুপড়ি ঘরে অবস্থান করছে। সঙ্গে সঙ্গে সিভিল পোশাকে ছদ্মবেশে ওই বাড়িটির চারপাশে অবস্থান নেয় গোয়েন্দা পুলিশের দলটি। ধীরে ধীরে মকিম গাজীর অবস্থান করা ঘরটির নিকটে পৌঁছাতেই ঘরের বেড়া কেটে পেছন দিয়ে পালাতে চেষ্টা করেন জেল পলাতক মকিম গাজী। এসময় একজন পুলিশ অফিসার মকিম গাজীকে ঝাপটে ধরে চেংদোলা করে মাথার উপরে তুলে ধরে চিৎকার করে বলতে থাকেন স্যার পেয়ে গেছি, স্যার পেয়ে গেছি। জেল পলাতক মকিম গাজীকে গ্রেফতার পুলিশের মর্যাদার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছিলো। পালানোর ২৪ ঘন্টা না যেতেই মকিম গাজীকে আটকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন। ডিবির প্রায় সবকয়টি টিমের সদস্যরাই অভিযানে অংশ নিয়েছিলো বলে এসি আকরাম বলছিলেন।

মকিম গাজীকে কঠোর পাহারায় মতিঝিল থানা হাজতে রাখা হয়। এ সময় রাতে তাকে ডাল রুটি দেয়া হলে মকিম গাজী পুলিশের উদ্দশ্যে বলেন, মকিম গাজী ডাল- রুটি খায় না, মোড়গ পোলাও খায়। পরদিন কয়েকটি সংবাদপত্রে মকিম গাজির এই ডায়লগটি ছাপা হয়েছিলো।

১৯৮৮/৮৯ সালের দিকে ডাকাত মকিম গাজী ঢাকার মগবাজারের বটতলী এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ওই বাড়ির অবস্থান দেখতে যান এসি আকরাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসছে। কিন্তু কিছুতেই মকিম গাজীর অবস্থান করা বাড়িটি সনাক্ত করতে পারছিলেন না। এসময় একটি বাড়ি থেকে বের হওয়া একজন পথচারীর কাছে এসি আকরাম জানতে চান, এখানে দুই-তিন দিন হয় একজন নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে কোন্ বাসায় বলতে পারেন। ভদ্রলোক আঙ্গুলের ইশারায় দূরে একটি বাড়ি দেখিয়ে দ্রুত হাটতে থাকেন। সময় গলি থেকে দৌড়ে এসে স্থানীয় সোর্স এসি আকরামকে বলেন, স্যার আপনার সঙ্গে এইমাত্র কথা বলা লোকটিই মকিম গাজী। তখনই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গোয়েন্দা দলের সদস্যরা দৌড়ে তাকে ঝাপটে ধরে ফেলেন। মকিম গাজী এভাবে তাদের বোকা বানিয়ে পালানোর চেষ্টাটি এসি আকরাম টিম সদস্যরা বেশ উপভোগ করেছিলেন। মকিম গাজীর পালিয়ে যাওয়ার এই কৌশলটির কথা মনে হলেই তিনি একা একা হাসতেন।

পটুয়াখালীর মাটি ভাঙ্গা গ্রামের হামিদ গাজীর ছেলে মকিম গাজী কিশোর বয়স থেকে নৌ ডাকাতি শুরু করেন। এরপর মকিম গাজী নিজেই ডাকাত দল গঠন করে ঢাকাসহ সারা দেশেই বাসাবাড়িতে ডাকাতি করে বেড়াতেন। তার দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন লাল গাজী, মোস্তফা কামাল, কাঞ্চন গাজী প্রমুখ।

ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলায় তার ১১০ বছরের জেল হয়েছিলো। ঢাকায় মকিম গাজীর টার্গেট ছিলো পুরান ঢাকার লালবাগ, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, মতিঝিল রমনা এলাকা। মকিম গাজী প্রায় ৩০ বছর ধরে কারাগারে বন্দী আছেন।এর মধ্যে অনেক মামলায় আদালতে রাষ্ট্র পক্ষ সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতায় খালাশ পেয়েছেন। কারাগারে এখন তার বয়স ৭০ এর বেশী। বিভিন্ন সময়ে কারাবিধি অনুযায়ী ২০বছর জেল খাটার পর বন্দী আচরণ ভাল থাকায় মুক্তি দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার নাম পাঠানো হলেও জেল পালানোর কারণে তার মতো দাগী অপরাধীকে মুক্তির বিবেচনায় আনা হয়নি।