image

চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

image

চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। 

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রবিউল আলম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শফি উদ্দিন, হোসেন মোহাম্মদ রেজা, সারোয়ার জাহান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ এনামুল হক এবং বিজ্ঞ মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ ফখদ্দিন চেীধুরী উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে পুলিশ কমিশনার, সিএমপি-এর প্রতিনিধি; বিশেষ পুলিশ সুপার, পিবিআই, চট্টমেট্রো; এডিসি ট্রাফিক (বন্দর), বিশেষ পুলিশ সুপার, সিআইডি-এর প্রতিনিধি এবং এডিসি প্রসিকিউশন উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মহানগরীর সকল থানার অফিসার ইন-চার্জগণ উক্ত কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জেল সুপার, চট্টগ্রাম; চমেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানের প্রতিনিধি, সহকারী পরিচালক (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর); প্রবেশন অফিসার এবং আদালতের জিআরও বেঞ্চ সহকারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। 

কনফারেন্সের শুরুতে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রবিউল আলম বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রæত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। 

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তার বক্তব্য বলেন যে, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৬১ ধারা মোতাবেক যাতায়াতের সময় বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। জালিয়াতির মামলাগুলোতে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৬৩ এবং ৪৬৪ ধারার উপাদান আকৃষ্ট করে কিনা তা সঠিকভাবে দেখতে হবে। মানবদেহে আঘাত সংক্রান্ত অপরাধসমূহে মূল ভিকটিমকে যাতে সাক্ষী করা হয়, সঠিক ধারায় যেন মামলা লিপি করা হয় এবং বিভিন্ন পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। 

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করত: প্রতিবেদন দাখিল, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করতঃ তাদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন। 

কনফারেন্সে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটগণ মামলার সাথে জব্দতালিকা প্রেরণ, খসড়া মানচিত্রে ঘটনাস্থল সুনির্দিষ্টকরণ, সাক্ষীর ১৬১ ধারার জবানবন্দি লিপিবদ্ধের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন, সাক্ষীর ওয়ারেন্টের প্রতিবেদন প্রেরণের উপর জোর দেন। এসময়ে ম্যাজিস্ট্রেটগণ যথাসময়ে সাক্ষী উপস্থাপনে পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাক্ষীর উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষতঃ পুরাতন মামলা অধিক হারে নিষ্পত্তি হওয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়াও বক্তাগণ দ্রæত গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও ডাক্তারি সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রæত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দেয়ার আগে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন বিজ্ঞ মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর। মামলার তদন্ত ও সঠিক ধারায় রুজুর ক্ষেত্রে আরো যতœবান হওয়ার জন্য বলেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি। 

বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্র্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনী সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করত: সমাপনী বক্তব্যে চীফ মেটোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব মোঃ রবিউল আলম বলেন যে, যে সকল আসামির পূর্বের মামলা নেই এবং কোন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত নয় তাদের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটগণকে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস এ্যাক্ট, ১৯৬০ এর বিধানাবলী অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। 

তিনি আরো বলেন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। নারীর অধিকার, কারাবন্দিদের অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকার সমুন্নত রেখে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার দ্রæততম সময়ে নিশ্চিতকরণ ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। কনফারেন্সে আগত সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে পারষ্পারিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে ও বিদ্যমান সমস্যাসমূহ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করলে কাজের মুল্যায়ন হয় এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ রবিউল আলম ।