image

এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ইমদু এক ভয়ংকর খুনীর নাম

image

ভয়ংকর কোন অপরাধীকে গ্রেফতারের আগে পাঠকদের কাছে সেই অপরাধী সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়ার জন্যই অপরাধীর কুকর্মের কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরছি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সবাইকে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে হাত দিলেন, তখনই "আমরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে" বিশ্বাসী হয়ে একদল মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সংক্ষেপে যাকে জাসদ বলা হয় গঠন করলেন। প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্বা আর নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার তরুণকে এই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামক মন্ত্রের ভেলকিবাজিতে ফাঁসিয়ে ছিলো। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে নতুন রাজনৈতিক বৈজ্ঞানিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে লিপ্ত হয় জাসদ। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে অস্থির করে তোলে জাসদ। খোদ ঢাকায় থানা লুট, হামলা, গুপ্ত হত্যা, গুম সব অপরাধে অস্থির শেখ মুজিব সরকার। এই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে তৎকালীন ঢাকা জেলার কালিগন্জে জন্ম নেয় এক ইমদু নামের ভয়ংকর সন্ত্রাসী।

পুরো নাম এমদাদুল হক ইমদু। ঢাকা জেলার কালিগন্জের সাতানী পাড়ায় তার জন্ম। জাসদের রাজনীতি দিয়েই তার যাত্রা শুরু। ইমদু মুলতঃ জাসদের রাজনীতি করেই কালিগন্জে খুনখারাবীতে হাত পাকিয়ে ফেলেন। স্বাধীনতা-উত্তর ক্যাডার পলিটিক্স বা অস্ত্রের রাজনীতিতে শক্তিমত্তার সঙ্গেই আবির্ভূত হয়েছিলো জাসদ।

কালিগন্জ ও ইমদুর সাতানীপাড়ার বাসিন্দারা জানান ১৯৭৪ সালে ইমদু জাসদ নেতা আলী হোসেনের হাত ধরে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামক মন্ত্রের বীন বাজাতে শুরু করেন। এরপরই এই এলাকা সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেন। তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পুলিশ প্রশাসনও দিশেহারা হয়ে উঠেছিলো। শুধু ইমদুই নয়, জাসদের নেতা আলী হোসেনও কালিগন্জের ভয়ংকর খুনী ছিলেন। দিন দিন আলী হোসেনের সঙ্গে ইমদু দূরত্ব তৈরী হতে থাকে।একই বনে’তো দুই রাজার শাসন চলতে পারেনা। আলী হোসেন ও ইমদুর দ্বন্দ্বে গ্রামের মানুষের দিন কাটতো আতংকের মধ্যে দিয়ে। এরই মাঝে ৭৭ সালে আলী হোসেন তার বাহিনী নিয়ে ইমদুর বাড়িতে হামলা চালায়।ইমদুকে না পেয়ে তার ছোট ভাই এনামুলকে কুপিয়ে খুন করে আলী হোসেন ও তার বাহিনী। ভাইয়ের হত্যার বদলা নিতেই ইমদু মুলতঃ ভয়ংকর হয়ে উঠেন। এরপরই জাসদ করা তার দলের লোকদেরই খুন করা শুরু করেন। জয়দেবপুরের বাবুল, আব্দুল কাদের ভূইয়া, কফিলসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ইমদু কালিগন্জে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জানান দেন। কখনো বাড়ি থেকে স্বজনদের সামনে কুপিয়ে, কখনো মায়ের বুক থেকে টেনে এনে প্রকাশ্যে খুন করতেন। ইমদুর এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাকে জাসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বৈজ্ঞানিক সমাজ তন্ত্রের মন্ত্রের জালে ইমদু খুন-খারাবীর রাজনীতিতে হাত পাকিয়ে তো আর বসে থাকতে পারেন না। তাই ক্ষমতার রাজনীতির স্বাদ নিতে মনস্থির করেন। ওই সময়ে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির রাজনীতিতে ঢুকার পথও পেয়ে যান। দেশে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। তখন বৃহত্তর ঢাকার আসন ছিলো ৩২ টি। ঢাকা জেলার মধ্যেই ছিলো বর্তমান, মানিকগন্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ। সংসদীয় আসন ১৭৪(ঢাকা-১ থেকে ঢাকা-৩২) ২০৫ পর্যন্ত ৩২টি সিট ছিলো। ঢাকার কালিগন্জের সিটি ছিলো ঢাকা-২৩ আসন। এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এক সময়ের ইউনিয়ন পরিয়ষদের চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান। নিজ এলাকায় তিনি গেদু মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। কুখ্যাত খুনী ইমদু ছিলো তার নির্বাচনী এলাকার। কিন্তু সংসদ সদস্য হয়েও তিনি ইমদুর ভয়ে ভীত থাকতেন। এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোন প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। এমপি তিনি হলেও রাজত্ব ছিলো সন্ত্রাসী ইমদুরই। তখনও ইমদু বিএনপিতে যোগদান করেননি। সংসদ নির্বাচনের পরের বছরই ইমদু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জার্সি বদল করে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শের জার্সি গায়ে জড়ান।তখন সালটা ১৯৮০। এরপর বর্তমান গাজীপুর জেলার কালিগন্জের সাতানীপাড়া গ্রামের এমদাদুল হক ইমদুকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ক্ষমতার উৎস হয়ে উঠেন খোদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিটি। ইমদু হয়ে উঠেন এক ভয়ংকর অপরাধী। এই ভয়ংকর খুনীকে ১৯৮২ সালে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিলেন আকরাম হোসাইন।

পরের পর্বে থাকছে আরও.......