image

এসি আকরামের জবানবন্দিঃ ২২ খুনের মামলার আসামি ছিলেন কুখ্যাত ইমদু

image

এসি আকরাম হোসাইন পুলিশে চাকরি জীবনে কোন দিন ইমদুর মতো ভয়ংকর খুনীর মুখোমুখি হননি। তার অপরাধের বর্ননা শুনে তিনি হতবাক হয়েছেন।স্তম্ভিত হয়েছেন।

ইমদু।অবিশ্বাস্য ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তার অত্যাচার জুলুমের খুনের কোন সীমারেখা ছিলো না। বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় অনায়েসে খুন করে চলে আসতেন বাধাহীন ভাবে।

জাসদের জার্সি গায়ে ৭৪ থেকে  তৎকালীন ঢাকা জেলার কালিগন্জ, জয়দেবপুর, নরসিংদীর পলাশ এলাকায় একের পর এক খুন করে ভয়ংকর দানবে পরিনত হয়েছিলেন ইমদু। জাসদের লেবাসে শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা এই ভয়ংকর খুনী বিএনপিতে যোগদান করে হয়ে উঠেন এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতার অধিকারী।তার দাপটের কাছে বিএনপির তৎকালীন কোন নেতা টু’শব্দ করারও সাহস পেতেন না। খুনখারাবিই ছিলো তার যোগ্যতা। ওই সময় বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী যুব দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমনে অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এই ভয়ংকর খুনী ইমদুর পেছনের অবিশ্বাস্য শক্তির রহস্য।

৭৫ পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে জিয়াউর রহমান দেশে আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্রেরের প্রবর্তন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে গুপ্ত হত্যা, খুন, ডাকাতিসহ সামাজিক নিরাপত্তা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিলো। তাই সেই সময় দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যারাক থেকে বের করে রাজনীতির মাঠে কাজে লাগাতে শুরু করেন শাসকরা। ফলে যা হবার তাই হতে শুরু করে। দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের বেছে বেছে ওই গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে রাজনীতির জার্সি গায়ে মাঠে নামিয়ে দেন প্রতিপক্ষ দমনের মরণ খেলায়। আর এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি অপরাধ সাম্রাজের অঘোষিত সম্রাটরা। সরকারের প্রতিপক্ষ নিধনের কাজ হলেও সুচতুর ইমদু, গালকাটা কামাল, কিবরিয়া টিপু, নরসিংদীর পলাশের জমিদার বাড়ির ও ঢাকার শাহজাহান পুরের বিদ্রোহি কবি খ্যাত বেনজিরের মেয়ের জামাতা কাজী আবু ইমরান, কালিগন্জের আজমখান, সুত্রাপুরের ফিরোজ, ঝিন্টু, মানিক ও শহীদ প্রমুখরা সরকারের প্রতিপক্ষ দমন না করে নিজেদের প্রতিপক্ষেকে দমন করা শুরু করেন।

ইমদু খুন করেন তারই উস্তাদ আলী হোসেনকে।গালকাটা কামাল-ঝিন্টু, শহীদ,মানিক গং খুন করেন কালিগন্জের বাসিন্দা পুরান ঢাকার যুবদলের নেতা ফিরোজ আলম মামুন ওরফে ফিরোজ ও জাফরকে। একের পর এক এমন হত্যাকান্ডে সরকারের পুলিশ প্রশাসনে উদ্বেগ ও আতংক দেখা দেয়। কারণ এই খুনের নায়কদের বিরুদ্ধে কেউই টু’শব্দ করার সাহস পাচ্ছিলনা। রাজনৈতিকদের কেউ প্রতিবাদের  চেষ্টা করলে এদের থামিয়ে দেয়া হতো এই বলে ওরা  বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার লোক, তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছুই বলা যাবে না এই কথা বলে।

জিয়ার শাসনামলে রাজনীতি ও দল পরিচালনার কেন্দ্র বিন্দু ছিলো তৎকালীন মিন্টু রোডের গণভবন। আর জাতীয় যুব সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এই নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করতেন। মাঝে মধ্যে জিয়াউর রহমান বৈঠকে উপস্থিত থাকলে সবাই তার সঙ্গে  কথা বলার সুযোগ না পেলেও মঞ্চে উঠে কথা বলতেন কুখ্যাত খুনী ইমদু। ওই সময়ে গণভবনে উপস্থিত থাকা এমন অনেকের কাছ থেকেই তা জানা গেছে।। এতে করে ইমদু আরো দুঃসাহসী হয়ে উঠতেন। নেতারা সবাই তাকে সমিহ করে চলতেন। এমনি পরিস্থিতিতে ইমদু অপরাধ জগতে এক দানবে পরিনত হন।

৮১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে জাসদের রাজনীতিতে তার উস্তাদ আলী হোসেনকে কুপিয়ে জখমের পর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। খোদ রাজধানীর বুকে প্রকাশ্যে এমন হত্যাকান্ডের খবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কানে গেলে বের হয়ে আসে ইমদুর ভয়ংকর সব খুনের লোমহর্ষক কাহিনী। জিয়াউর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে দল থেকে এদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। একে একে ফাঁস হতে থাকে ইমদুর অন্ধকার জগতের ভয়ংকর সব কাহিনী।ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুনের দানব ইমদু গাজীপুরের কালিগন্জে মানুষ খুন করার পর তার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফুটবল খেলতেন। শরীরের বাকি অংশ বাঁশে টাঙ্গিয়ে রাখতেন জনবহুল এলাকার রাস্তার মোড়ে অথবা গাছের সঙ্গে। ভারতীয় সিনেমার ডাকাত জাগিরার গল্পও হার মেনেছে ইমদুর হাতে মানুষ হত্যার বাস্তবতার কাছে।

গাজিপুর মসলিন কটন মিলে জাসদের আলী হোসেনের তিন সঙ্গীকে প্রকাশ্যে খুনের লোহর্ষক ঘটনা শ্রমিকদের মনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে। ইমদু এতো অপকর্ম করলেও  প্রাণের ভয়ে সবাই চুপ হয়ে থাকতেন। ইমদুর এই অপকর্মের কারণে তাকে ৮১ সালে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরই কুখ্যাত ২২ খুনের ভয়ংকর অপরাধী ইমদুর কপালে শনি ভর করে।

চলবে.....