image

এসি আকরামের জবানবন্দিঃ শেষ সময়ে ভয়ংকর ইমদু অসহায় হয়ে পড়েছিলেন

image

ভয়ংকর খুনী এমদাদুল হক ইমদু বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। রোগাক্রান্ত মুরগির মতো জাতীয় যুব সংস্থার অফিসে বসে ঝিমুতেন। ইমদুকে গ্রেফতারের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত মুরগির মতো দেখাচ্ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন ওই সময় ইমদুর সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন এমন কয়েকজন নেতা।

১৯৮২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের শাসনামলের যুবও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কাশেমের মিন্টু রোডস্থ সরকারী বাসভবন থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগে ইমদু সিদ্ধেশ্বরী রোডে জাতীয় যুব সংস্থার ঢাকা জেলার অফিসে আড্ডা দিয়ে সময় পার করতেন। দল থেকে বহিষ্কার হলেও তৎকালীন যুব মন্ত্রী আবুল কাশেমের আশ্রয়েই থাকতেন ইমদু। গ্রেফতারের আগের দিন বিকেল পর্যন্ত ইমদুর সঙ্গে জাতীয় যুব সংস্থার অফিসে আড্ডা দিয়েছেন এমন একজন যুব নেতাই বলছিলেন ইমদুর শেষ সময়ের অসহায়ত্বের দিন গুলোর কথা।

ওই যুবনেতা জানান, পুলিশ অফিসার আকরাম হোসাইনই ইমদুকে গ্রেফতার করেছিলেন এটাই আমরা জেনেছিলাম। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ভয়ংকর এই খুনী ইমদু আঁচ করতে পেরেছিলেন তার কাছে থাকা ক্ষমতা নামক শক্তির ম্যাজিক কাঠিটি আর কাজ করছে না। যেকোন সময়ই তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন আশংকায় তিনি যুব মন্ত্রী আবুল কাশেমের ক্ষমতার ছাতার নীচে আশ্রয় নেন। ইমদু ঘুরাঘুরি বন্ধ করে প্রতিদিন দুপুর ১২টায় জাতীয় যুব সংস্থার অফিসে আসতেন আর রাতে চলে যেতেন। ক্ষমতাসীন দলের যুব নেতার উচ্ছাসে যেন ভাটা পড়েছিলো। সবাই কানাঘুষা করতেন ইমদুকে নিয়ে। হঠাৎ করেই এই ছন্দ পতন। মহাশক্তির অধিকারী ইমদুর দাপটের ছন্দ পতন ধীরে ধীরে বিএনপি সরকারের পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো, তখনও নেতাদের কেউ ভাবতেই  পারেননি।

৮১ সালের ৩০মে রাতে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিচারপতি সাত্তার নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ইমদু থেকে যান যুবমন্ত্রী আবুল কাশেমের আশ্রয়ে তারই সরকারি বাসভবন মিন্টু রোডে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কুখ্যাত ইমদুর সকল অপকর্মের ফাইল সংগ্রহ করতে শুরু করে। তৎকালীন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার(এসপি) এর অফিসে ইমদুর হত্যা, নির্যাতন, লুটপাটসহ সকল অপকর্মের দলিলদস্তাবেজ জমা হতে শুরু করে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসে। ইমদুর মাথার উপর থেকে পৃষ্ঠপোষকদের ছায়ার হাতটিও সরে যেতে থাকে। তাই জাতীয় যুব সংস্থার অফিসই হয়ে উঠে ইমদুর আড্ডার একমাত্র জায়গা। গরম আর শীত সারা বছরই ইমদুর গায়ে থাকতো ঘিয়া রংয়ের কাশ্মীরি শাল বা চাদর। এই চাদর বা শাল গায়ে থাকার কারণই ছিলো অস্ত্র বহন করলে যাতে কারো নজরে না আসে। সেকালের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অস্ত্র বহনের কালচারটাই ছিলো এরকম। জাতীয় যুব সংস্থার অফিসে তার সঙ্গি সাথীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, আজম খান (এরশাদের আমলে কালিগন্জে আওয়ামীলীগ নেতা ময়েজউদ্দিন হত্যায় ফাঁসির দন্ড পেয়ে এরশাদের অনুকম্পায় ক্ষমা পাওয়া নেতা), জাহাঙ্গীর মাহমুদ, এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, রোকন উদ্দীন ভূইয়া, মিলু, যাত্রাবাড়ির খোকন প্রমুখ।

চলবে..........