image

এসি আকরামের জবানবন্দিঃ প্রেমিকার স্বামীর হাতেই খুন হয়েছিলো তাপস

image

অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পাওয়ার পরও তাপস হত্যার মোটিভ ও কোন ক্লু না পাওয়ায় মীরপুর থানার পুলিশ এই মামলা নিয়ে অন্ধকারেই থেকে যায়। লাশের সুরতহাল রিপোর্টে তাপসের বুকে কামড়ের একটি বড় ক্ষত আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে। লাশ দেখতে এসে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম পারভেজের বন্ধু হাজারীবাগের চামড়া শিল্পের কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ও ট্যানারী মালিক সোহেল আহমেদ দিলু তাপসের বুকে থাকা কামড়ের ক্ষতটি কঠিন শত্রুতা ও প্রতিহিংসা পরায়নতার আলামত বল মনে করেন। তিনি ওই দিন সন্ধ্যায় বন্ধু পারভেজকে সঙ্গে নিয়ে ডিবি'র এসি আকরামের সঙ্গে দেখা করে তাপস হত্যার রহস্য উদঘাটনে সহায়তা চান।

তাপসের লাশ উদ্ধার ও লাশের ছবি দেখে এসি আকরাম হোসাইন এই হত্যাকান্ডের পেছনে প্রতিহিংসা কাজ করেছে বলে তাদের জানান। তদন্তের শুরুতেই এসি আকরাম হোসাইন এই প্রতিহিংসার মূলতঃ দুটি কারণ হতে পারে বলে তদন্তের গাইড লাইন হিসেবে সামনে নিয়ে আসেন। প্রথমতঃ জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ, দ্বিতীয়ত নারীঘটিত। দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই আকরাম হোসাইন হত্যার রহস্য উদঘাটনের পথে পা বাড়ান। তৎকালীন ধানমন্ডি থানাধীন ঝিকাতলার যে বাসাটিতে তাপস থাকতেন সেখানে গিয়েই তিনি হত্যার মোটিভ পেয়ে যান। ঠিক তাপসের রুমটির বিপরীত দিকে এক সুন্দরী রমনী থাকেন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে। তার সঙ্গে তাপসের একটি সম্পর্কের তথ্য পান আকরাম হোসাইন। রাত ন’টার দিকে বাড়িটি রেকি করে চলে আসেন। বাড়িটির সামনে এবং পেছনে দুটি দরজা আছে চলাচলের জন্য। এরপরই অভিযান। মধ্যে রাতে এসি আকরামের সঙ্গে তার সহকর্মী শাহজাহান, মতিউর রহমান ও আব্দুর রবসহ ডিবি’র একটি চৌকস দল।

মিন্টু রোড থেকে আকরাম হোসাইনের সিভিল পোষাকের দলটি বের হয়েছে। ঝিকাতলার সেই বাড়ি (তাপস যে বাড়িতে থাকতেন)তে অভিযান চালিয়ে বাড়িতে থাকা ওই সুন্দরী রমনীকে না পেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন তার মেয়ে ডলি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালিন্দীতে আছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের ডিবি’রর তত্বাবধানে রেখে তার বাবাকে সঙ্গে নিয়েই রাতেই কালিন্দী  থেকে ডলি ও তার স্বামী রিপনকে গ্রেফতার করে রাতেই ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরপর পৃথক পৃথকভাবে ডলি ও তার স্বামী রিপনকে জিজ্ঞাবাদের বের হয়ে আসে তাপস হত্যার রহস্য।

মাদকাসক্ত রিপন পেশায় সিনেমা হলের টিকেট চেকার। তাপস হত্যার বর্ণনা দিয়ে রিপন জানান, তার স্ত্রী ডলির সঙ্গে তাপসের পরকিয়া চলছিলো। প্রায়ই নানা উছিলায় ডলি রিপনের মীরপুরের বাসা থেকে বাবার বাড়ি ঝিকাতলায় চলে আসতো। আর পাশের ফ্লাটের সাবলেটে থাকা তাপসের সঙ্গে রঙ্গলীলায় মেতে উঠতো। রিপন জানতে পারেন, দুজন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অভিসারেও গিয়েছে। এমন খবর জানতে পেরে রিপন ক্ষুদ্ধ হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় তাপসকে হত্যার। তাই সে ডলিকে দিয়েই খবর দেয় তাপসকে তার সঙ্গে দেখা করা দরকার জন্য।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডলি তাপসকে নিয়ে কলাবাগানের ১নং গলির একটি বাড়িতে যায়। সেই বাড়িটি রিপনেরই বন্ধু’র। ডলি তাপসকে নিয়ে ওই ফ্লাটের রুমে প্রবেশ করার পরই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাপসের তার হাত-পা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর মুখে মাসকিন পেঁচিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাপস যাতে চিৎকার করলে শব্দ না হয়। এভাবেই ডিবি অফিসেই তাপস হত্যার লোমহর্ষক বর্ননা দেন ডলির স্বামী রিপন। এরপর লেক সার্কাস কলাবাগানের ১নাম্বার গলির যে বাড়িতে তাপসকে হত্যা করা হয়, সেখানে অভিযান চালিয়ে রিপনের দুই বন্ধুকে আটক ও একটি কাটা রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

তাপসকে নির্মম নির্যাতনের পর শ্বাস রোধে হত্যা করে একটি বেবীট্যাক্সিতে করে তার লাশ মীরপুর বেড়ীবাঁধের পাশে ফেলে আসে বলে রিপন জানায়। ডিবিতে আবেদনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এসি আকরাম হোসাইন তাপস হত্যার রহস্য উদঘাটন ও খুনী চক্রকে গ্রেফতার করেন। পরে যে বেবীট্যাক্সি দিয়ে তাপসের লাশ বহন করা হয়ে সেই বেবীট্যাক্সি উদ্ধার ও চালককেও গ্রেফতার করা হয়।

রিপন জানায়, তার স্ত্রী"ডলির সামনেই তাপসকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং তার স্ত্রী ডলিকে হুশিয়ার করা হয়, যদি সে এই ঘটনা ফাঁস করে তবে তাকেও তাপসের মতো হত্যা করা হবে।

রিপন আরো জানায়, হত্যার পরই সে ডলিকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের কালিন্দীতে চলে আসে। মাত্র ৬/৭ ঘন্টার মধ্যেই তাপস হত্যার রহস্য উদঘাটন ও খুনী চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন এসি আকরাম হোসাইন।

লাশের গায়ে নির্যাতনে কামড়ের ক্ষতটিই তাপস হত্যায় অন্ধকারে থাকা ডিবির দলটিকে আলো জ্বালিয়ে পৌঁছে দেয় খুনী পর্যন্ত। এভাবে ক্লু’লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও খুনীদের গ্রেফতার করেছিলেন ডিবির কাজ পাগলা অফিসার খ্যাত এসি আকরাম হোসাইন।