খুব ছোটবেলায় প্রথম শ্রেনীর পাঠ্য বইয়ে স্থান পেয়েছে একটা পাখি। সাধারণ জ্ঞান বা ক্ষুদে বার্তায় প্রথম শ্রেনীর কয়েকটি প্রশ্নের একটি হল, বাংলাদেশের জাতীয় পাখি কোনটি? গ্রামবাংলার চিরচেনা পাখিটি বিশেষ করে কৃষকদের সাহায্যকারী বন্ধু হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল একসময়ে। ভোরের দূত হিসেবে সবার আগে ঘুম বাঙাতে খুব সকালেই যে পাখিটা কিচিরমিচির ডাকতো, গাছের এ ডাল থেকে ও ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে দাপিয়ে বেড়াতো সেই চিরচেনা পাখিটি আজকাল খুব একটা চোখে পড়েনা। যে পাখিটার কথা বলছি তা হলো সাদা-কালো বর্ণের দোয়েল পাখি। এ দোয়েল কে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পাখি হিসেবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুই টাকার কাগজী নোটে বহুল পরিচিত দোয়েল পাখিটির স্থান হয়েছে।
দোয়েল পাখি শুধু ভোরেরদূত হিসেবে ঘুম ভাঙাত না, এটি কৃষকদের কাছে বেশ উপকারী পাখি হিসেবে পরিচিত। এ পাখিটির প্রিয় খাদ্য ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ। দোয়েল বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ধান ধ্বংসকারী পোকা-মাকড়কে খেয়ে সাবাড় করে, অন্যান্য ফসলের পোকা-মাকড় খেয়ে কৃষকদের উপকার করে থাকে। প্রকৃতির শ্রী-বর্ধনকারী এ পাখিটিকে এখন আর যত্রতত্র দেখা যায় না। যার ফলে ক্ষতি হচ্ছে গ্রাম বাংলার কৃষকরা। বাড়ীর বেলকনিতে, গাছের ডালে এখন দেখা যায়না পাখিটিকে। প্রকৃতির চঞ্চল পাখিখ্যাত সে দোয়েল পাখির ডাকও আজ বড় অচেনা হয়েগেছে। পাঠ্য বই হাতে নিয়ে পড়ুয়া ক্ষুদে শিক্ষার্থী পাখিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ছবিটাই একমাত্র অবলম্বন।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দূযোগ,পরিবেশ দূষণ, ক্ষেত-খামারে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও জলবায়ূ পরিবর্তনের কারনে বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। জানা গেছে, কৃষকের ফসল বিনষ্টকারী 'পোকামাকড়' দোয়েলের প্রধান খাদ্য হওয়ায় পোকামাকড় দমন করতে এক সময় কৃষকদের আলাদা কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হতো না। মূলত এ কারনেই দোয়েল গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে কৃষক বন্ধু পাখি হিসেবে বেশ পরিচিত।বাড়ির আশেপাশে দেখা যেত এ পাখিটি।এরা ঘন বন-জঙ্গলে কিংবা খোলা জায়গায় সব সময় থাকতে ভাল বাসেনা। তাই বসত বাড়ীর আশেপাশে গাছে, ঘরের চালের ফাঁকা জায়গায়, সবজির মাচায় এরা বাসা বাধে। এক সময় গাছের ডালে ডালে দোয়েল পাখির সুমধুর গানে মাতোয়ারা থাকত পুরো গ্রামাঞ্চল আর গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি।
দোয়েলের সুমধুর গানে গ্রাম বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙলেও এখন আর গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে আগের মত দোয়েলের ডাক শুনা যায় না। দোয়েল পাখি প্রকৃতির আর্শ্বিবাদ। একসময় যখন কৃষকেরা চাষাবাদ করত তখন সার কি এটা অনেকের অচেনাই ছিল। দোয়েল, বুলবুলি, শালিক সহ বিভিন্ন পাখিরা ক্ষেত থেকে থেকে পোকা-মাকড় শিকারের জন্য গাছের ডালে ফাঁদ পেতে বসে থাকত। ফসল বিনষ্ঠকারী এসব পোকা মাকড় খেয়ে ধ্বংস করায় কৃষকের ফসলও ভাল হতো। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও কৃষকের উপকারী পাখি দোয়েল এখন আর তেমন দেখা যায় না।
গ্রামবাংলার ভোরসকালে মাতিয়ে তোলা দোয়েল পাখি পাঠ্য বই আর কাগজি নোটে স্থির ছবি হয়ে থাকলেও প্রকৃতির চিরচেনা দোয়েল পাখি আর দেখা যায়না। বেশ কয়েকমাস বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালেও চোখে পড়েনি জাতীয় পাখিটি। হাজার বছরের পরিচিত পাখিটি কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এ পাখির চি-চি শব্দ এখন আর কানে শোনা যায়না বললেই চলে। ভারী মিষ্টিমধুর পাখির কলরব আজ তেমন জমে উঠেনা পল্লী বাংলার গ্রামগুলোতে। এসব চিরচেনা পাখি সংরক্ষণ ও বিলুপ্তি রোধে আমাদের করণীয় ভুমিকা চাই।
লেখক : শিব্বির আহমদ রানা, গণমাধ্যমকর্মী, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
Developed By Muktodhara Technology Limited