image

রাউজানের প্রেমতোষ বড়ুয়া বিষমুক্ত মাল্টায় পাল্টালেন ভাগ্য

image

চট্টগ্রামের রাউজানে দুই একর জায়গায় জৈব প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক মুক্ত মাল্টা বাগান গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক প্রেমতোষ বড়ুয়া (৫২)। পাহাড়ী টিলা ও সমতল ভূমিতে ২০১৭ সালে পৃথক জায়গায় গড়ে তোলা বাগানে এখন মাল্টা ফলে টইটুম্বুর। দুই বাগানে ৬৩৬টা মাল্টা গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা মাল্টা। রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় বাজারে প্রেমতোষ বড়ুয়ার বাগানের মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ভালো দামে। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যেই তিনলাখ টাকার ফল বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন তিনি। দুটি বাগানে এখনো প্রচুর পরিমাণ ফল রয়েছে।

উপজেলার ৭নং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজান জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক প্রেমতোষ বড়ুয়া জানান, ১৯৮৮ সালে নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ১৯৯০ সালে মধ্যপ্রাচ্য পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে ২০০৭ সালে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে এসে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। এই সময়ে ইউটিউব চ্যানেলে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সাইটে প্রতিবেদন দেখে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ২৫ হাজার টাকা খাজনায় এক একর জমিতে ৩১৬টা মাল্টা গাছ রোপন করেন তিনি। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খরচ বেশী হওয়ায় তিনি মাল্টা বাগানে সম্পূর্ণ জৈব প্রক্রিয়া শুরু করে সফল হন। পরে নিজের পারিবারিক এক একর কৃষি জমিতে ৩১৬টা মাল্টা চারা রোপন করে বাগান সম্প্রসারণ করেন। 

প্রেমতোষ বড়ুয়া আরও জানান, প্রতি টন সাত হাজার টাকা করে ৩২ টন গোবরসহ জৈব কীটনাশক, জৈব ছত্রাক ও সেক্সফেরোমন পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ রাসায়নিক মুক্ত বাগান গড়েছেন তিনি। ওমান প্রবাসী ছোটভাই প্রিয়রাজ বড়ুয়ার সহযোগিতাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন নিয়ে বিনিয়োগ করে এখন সফল কৃষক হিসেবে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে পরিবারে। বাগানে স্ত্রী ও দুই সন্তানও তাকে সহযোগিতা করেন। আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে জীবনযুদ্ধে সফলতার গল্পে নিজের নাম লিখিয়েছেন প্রেমতোষ।

মাল্টা চারার পাশাপাশি দুটি বাগানে উন্নত জাতের  আম, লিচু, কাঁঠাল, পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের ফলদ গাছের চারা রোপন করেছেন।
প্রেমতোষ বড়ুয়ার বিষমুক্ত মাল্টা বাগান দেখতে প্রতিদিন অনেকেই তার বাগানে ছুটে যান। গ্রাম-বাংলার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় পরিবেশে প্রেমতোষ বড়ুয়ার দুটি বাগানে আর্থিক সফলতার গল্প শুনে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন মাল্টা চাষে। প্রেমতোষ বড়ুয়ার মাল্টা বাগানের সফলতায় রাউজানে মাল্টাচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসাইন বলেন, রাউজানের জন্যে উপযোগী যে ফসল রয়েছে সেগুলো সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছি। তার মধ্যে অন্যতম মাল্টা ফল। রাউজানে প্রায় ৪০টি মাল্টা বাগান রয়েছে। মাল্টা বাগান থেকে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। মাল্টা চাষে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা চাচ্ছি মাল্টা বাগানগুলো জৈব পদ্ধতিতে গড়ে তোলার জন্যে। রাউজানে বর্তমানে জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন হচ্ছে এমন মাল্টা বাগান আছে। যেখানে কীটনাশক বা রাসায়নিক ব্যবহার হয়না। আমরা সবসময় কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সকল প্রকার সহযোগিতা তাদের করা হচ্ছে।