image

বাংলাদেশের ফুটবলের কলংকিত দিন ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর !

image

বাংলাদেশের ফুটবলের উন্মাদনার দশক বলতে ৭০দশককের মাঝামাঝি সময় থেকে নব্বই দশককেই বুঝায়। ঢাকার জনপ্রিয় দুই প্রধান শিরোপা প্রত্যাশী মোহামেডান-আবাহনীকে ঘিরেই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। পাড়া-মহল্লায় অলিগলিতে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে চলতো নানা যুক্তিতর্ক, কে শ্রেষ্ঠ মোহামেডান না আবাহনী? ফুটবলের এই জনপ্রিয়তায় খেলোয়াড়রাও হয়ে উঠেছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। মোহামেডান- আবাহনীর খেলার দিন ঢাকা স্টেডিয়াম হয়ে উঠতো লাখো দর্শকের মিলন মেলা। এমনই এক সন্ধ্যায় মুখোমুখি হয়েছিলো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান-আবাহনী।

১৯৮২ সাল। ২১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। দুপুরের পর থেকে লাখো দর্শকের গন্তব্য ঢাকা স্টেডিয়াম। গ্যালারীতে তিলধারনের ঠাঁই নেই।স্টেডিয়ামের আশপাশের উচু ভবনগুলোতেও দর্শকের ঠাঁই। লীগ টেবিলে মোহামেডানের অবস্থান শীর্ষে। সুপার লীগের শেষ ম্যাচে মোহামেডান হারলেও চ্যাম্পিয়ন। পক্ষান্তরে আবাহনী জয়ী হলেও রানার্সআপ। তবে দু'দলের মর্যাদার লড়াই বলে কথা। আবাহনীর লক্ষ্য শিরোপা জয় হাতছাড়া হলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারাতে পারলেই তার লাখো সমর্থককে জয়ের উৎসব ভুলিয়ে দিবে শিরোপা হারানোর বেদনা।

গ্যালারীতে উপচে পড়া দর্শক।মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা প্রথম থেকেই ফুরফুরে মেজাজে খেলছিলো।কারণ তাদের শিরোপা জয় বা লীগ চ্যাম্পিয়নশীপ নিশ্চিত হয়েই আছে। তাই মাঠে উপস্থিত দুই দলের লাখো ফুটবল প্রেমী খেলার শুরু থেকেই তীব্র উত্তেজনা, উন্মাদনা আর স্নায়ুযুদ্ধে সময় পার করছিলেন। তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা পূর্ণ খেলার দ্বিতীয়ার্ধের ২৬ মিনিটে  সাদাকালো শিবিরের ১১ নাম্বার জার্সি পরিহিত কোহিনূরের গোলে (১-০) এগিয়ে যায় মোহামেডান। তবে আকাশী-হলুদ গ্যালারীর এই  নিরবতা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি।মিনিট দশেক পরেই গর্জে উঠলো দর্শকরা গোল- গোল ধ্বনিতে। আবাহনীর রাইট আউট আনোয়ারের জোড়ালো শট মোহামেডানের গোলরক্ষক মোহসীন গোললাইন থেকে  ফিরিয়ে দেন। আবাহনীর খেলোয়াড়দের দাবি, বল গোল লাইন অতিক্রম করেছে। সেই ম্যাচের রেফারি মুনির হোসেন ওই লাইনের দায়ীত্বে থাকা সহকারী রেফারি মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করেন। মোহসিন বারপোস্টের ভেতরে থাকলেও বল গোললাইন অতিক্রম করেনি। এমনটাই বলছিলেন লাইন্সম্যান মহিউদ্দীন। তাই আবহনীর গোলের দাবি বাতিল করে দেন রেফারী মনির হোসেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে আবাহনীর আনোয়ার, সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলাল ও অন্য খেলোয়াড়েরা। চড়াও হয় রেফারী ও সহকারীদের উপর। দর্শকরা মাঠে ও গ্যালারিতে ইটপাটকেল যুদ্ধে মেতে উঠেন।পুলিশ মারমূখি হয়ে গ্যালারিতে কাঁদানে গ্যাস মারতে থাকে। ফুটবলের আনন্দ উৎফুল্ল পরিবেশ মূহুর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে উঠে।

মাঠের ফুটবল লড়াই স্টেডিয়ামের বাইরে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, পল্টন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রণক্ষেত্রে পরিনত হয় গোটা এলাকা। স্টেডিয়ামের বাহিরে গাড়িতে আগুন ভাংচুরসহ দুই দলের সমর্থকদের তান্ডবে জনমনে আতংক তৈরী হয়। দু’দলের খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে চলে যায় পুলিশ প্রহরায়। এ তো শেষ হলো মাঠের খেলা। বাই-লজ অনুযায়ী মোহামেডান ২-০ গোলে জয়ী হয়।কিন্তু রাতেই শুরু হলো সেনাশাসকদের ক্ষমতার খেলা। মাঠের খেলোয়াড়দের কোমড়ে রশি বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে হাজির করা হয়েছিলো সামরিক আদালতে। মাস ছয়েক আগেই এরশাদ সামরিক শাসনে ক্ষমতা দখল করে দেশের রাজনৈতিক নেতা, বিএনপির মন্ত্রী এমপিদের ধরে ধরে জেলে পাঠাচ্ছেন। সন্ত্রাসীদের বিচার যখন সামরিক আদালতে হচ্ছে, তখনই দেশে খেলা নিয়ে এমন গোলযোগ যেন সেনাশাসক গোষ্ঠীর জ্বালাতনের কারণ হয়ে উঠে। কিছুতেই তা বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশের উপর হুকুম জারি করা হলো,ধরে নিয়ে আসো সেই খেলোয়াড়দের যারা মাঠে রেফারির সিদ্ধান্ত মানেননি।

রাতেই যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ দেশ সেরা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দীন, আশরাফ উদ্দীন চুন্নু, গোলাম রব্বানী হেলাল, কাজী আনোয়ার হোসেন, মনি, আশিষসহ ডজনখানেক খেলোয়াড়কে গ্রেফতার করে।এছাড়াও শ্রীলঙ্কার পাকির আলী, প্রমলালকেও গ্রেফতার করা হয়। সবাইকেই রাখা হলো রমনা থানার হাজতে। বাংলাদেশের ফুটবলারদের জন্য এটা ছিলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। যা তারা কখনো কল্পনাও করেননি। এমনি পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের খেলোয়াড়দের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। সেনাশাসনের জালে আটকে যান আবাহনীর তারকা ফুটবলাররা। সকালেই তাদের হাজির করা হলো শাহবাগ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে স্থাপিত "ক" অঞ্চলের আঞ্চলিক  সামরিক আইন প্রশাসকের আদালতে। তখন মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক।

সেই দিনে মাঠে থাকা সহকারী রেফারী আব্দুর রশিদ ৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের কথা বলতেই তিনি বললেন, এ দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি ৩৯ বছর ধরে। খেলা শেষ পুলিশ প্রহরায় আমাদের পৌঁছে দেয়া হয় বাড়িতে। রেফারি মনির হোসেন নিষেধ করেছিলেন বাড়িতে ঘুমাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স কোয়াটার ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি পুরান ঢাকার বাংলা বাজারের বাসায় ঘুমাই। রাতে সেই বাড়ি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে আমাকে।

সেই আটকের দুঃসহ স্মৃতির বর্ননা করতে গিয়ে আব্দুর রশিদ জানালেন, ভোররাতে যৌথ বাহিনী পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ফরাশগঞ্জের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। মনে হচ্ছিলো আমি ভয়ংকর কোন সন্ত্রাসী। আমাকে ধরে আনা হলো মতিঝিল থানায়। ওসি মন্জু আমাকে বললেন, আমরা যেভাবে বলবো ঠিক সেভাবেই মার্শা"ল" কোর্টে সাক্ষী দিতে হবে। অন্যথায় অন্য মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিবো। উপর থেকে আমাদের এমন অর্ডারই দেয়া হয়েছে। এরপর একে একে রেফারি মনির হোসেন, সহকারী মহিউদ্দিন চৌধুরী ও চতুর্থ রেফারি আব্দুল আজিজকেও ধরে এনে হাজির করা হলো থানায়। এরপর আমাদের শিখিয়ে দেয়া হলো আদালতে কি বলতে হবে।যে ফুটবলাররা দেশের মানুষকে আনন্দ দেয়, বিদেশে ফুটবল খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো সামরিক সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের। প্রথমে বর্তমান বারডেম হাসপাতালের পাশে একটি ভবনে পরে শেরেবাংলা নগরের সামরিক আদালতে আমাদের হাজির করে সাক্ষী দিতে আদালতে তোলা হয়েছিলো।

পুলিশ যা শিখিয়ে দিয়েছিলো, তাই আমরা বলতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ফুটবলার কাজী আনোয়ারকে এক বছর, গোলাম রব্বানী হেলালকে ছয় মাস, কাজী সালাউদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিন চুন্নুকে ১ মাস করে সশ্রম  কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এরপর তাদের সাধারণ অপরাধীদের মতো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। খেলার মাঠের এই ঘটনা নিয়ে সেনাশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আবাহনীর সমর্থকসহ সর্বস্তরের ফুটবলপ্রেমীরা রাজপথে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সালাউদ্দীন ও চুন্নুকে যশোর ও আনোয়ার আর হেলালকে রাজশাহী কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেশের জনপ্রিয় ফুটবলারদের কোমড়ে রশি হাতে হাতকড়া পরিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর দ্রুত ফুটবল দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার আবাহনীর সমর্থক কমলাপুর রেলস্টেশনে জড়ো হয়। পরিবার পরিজন স্বজন ছাড়া জেলের ভেতরে ওই বছর ঈদুল আযহা পালন করেন খেলোয়াড়েরা। যা ছিলো তাদের খেলোয়াড়ী জীবনের এক দুঃসহ স্মৃতি। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের মুখে সেনাশাসক এরশাদ সরকার ১৭ দিন পর ৮ অক্টোবর তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হন।

মোহামেডান-আবাহনীর আলোচিত সেই ম্যাচের পর সেনাশাসকরা কেন এমন কঠোর হলেন, এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজেছি অনেক বছর। দেশে সামরিক আইন চলাকালে এধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত ছিলো। আমি এই ঘটনার বছর খানেক পরই ক্রীড়া সাংবাদিকতায় নাম লেখাই। মাত্র ২৫০ টাকা বেতনের চাকরি। তৎকালীন দেশের নিউজ ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক রিপোর্টর-এ। ঢাকার ফকিরেরপুল হোটেল মতিঝিলের বিপরীত দিকের ভবনেই অফিস। খেলা পাগল হিসেবে ক্রীড়া সাংবাদিকতাটা নেশা থেকে পেশায় পরিনত হওয়া একটি বিরাট বিষয় বলে নিজের কাছে মনে হয়েছিলো। প্রিয় খেলোয়াড়দের খেলা টাকা দিয়ে টিকেট কেটে দেখতে হবে না। পাশাপাশি প্রিয় খেলোয়াড়দের ইন্টারভিউ নিবো, তাদের মুখেমুখি হবো।

যা বলছিলাম, ফিরে আসি কথায়। ক্রীড়া সাংবাদিকতা শুরুর প্রথম থেকেই আমার বিবেককে একটি বিষয় তাড়া করতো। তা হলো কেন আমাদের তারকা ফুটবলারদের কোমড়ে রশি বেঁধে জেলে পাঠিয়েছিলো? এর নেপথ্যের কারণ তা জানার। তাই এই ঘটনায় যাদের মামলার সাক্ষী করা হয়েছিলো তাদের সঙ্গে দেখা হলেই আলাপচারিতায় জানতে চাইতাম ফুটবলের সেই কলঙ্কিত দিনটির পেছনের ঘটনা। তখনও দেশে চলছে এরশাদের সেনাশাসন। ভয়ে কেউই কিছু বলতে চায় না। আমার শ্রদ্ধাশীল প্রয়াত গুরু আতাউল হক মল্লিক ভাই, যিনি একাধারে ধারাভাষ্যকার, ক্রীড়া লেখক, সাংবাদিক, আম্পায়ার-স্কোরারসহ বহুমুখী মেধার অধিকারী ছিলেন।তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে মাঝেমাঝে ফুটবল রেফারী এসোসিয়েশন যাবে। তখন ফুটবল রেফারী এসোসিয়েশনের অফিস ছিলো বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ আওয়ামীলীগ অফিসের পেছনে। টিনের দোচালা ঘর। সেখানে মল্লিক ভাই সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।মল্লিক ভাই বললেন, এবার তুমি তোমার মতো করে সব জেনে নিবে।

১৯৮৩ সালের দিকে দেশে দৈনিক বাংলার বাণী শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা। আমি খেলার পাতায় দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে নিয়মিত লিখতাম। আমার লেখা দিন দিন ক্রীড়াঙ্গনে বেশ আলোচিত হলো। তাই ফুটবল রেফারী এসোসিয়েশনের সবাই আমাকে স্নেহ করতেন। একদিন রেফারী মনির ভাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম আপনি কেন দেশের জনপ্রিয় খ্যাতিমান ফুটবলার সালাউদ্দিন, চুন্নু, আনোয়ার ও হেলালের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন? মনির ভাই বলেছিলেন, পানিতে বসবাস করে যেমন কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না, তেমনি আমরাও সেদিন বিরুদ্ধাচরণ করতে পারিনি। নইলে আমরা ফুটবল অঙ্গের মানুষ, আমরা কি ইচ্ছা করে মামলার সাক্ষী হতে গিয়েছিলাম? খেলা শেষে পুলিশ পাহাড়ায় রাতে আমাদের সবাইকে বাড়ি পৌছে দিলেও আবারও ভোরে আমাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের শিখিয়ে দেয়া বক্তব্য সামরিক আদালতে দিতে বাধ্য করে। সেই দিন পুলিশ আমাদের আর্মির ভয় দেখিয়ে সাক্ষী দিতে বাধ্য করেছিলো। তাদের ধারণা, সেনাশাসক হয়তো এমন ঘটনা প্রস্রয় দিতে চায়নি। সাংবাদিকতার কারনে বিভিন্ন সময়ে সেনা অফিসার বা ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানতে পেরেছিলাম পেছনের কিছু ঘটনা। ফুটবল মাঠে আবাহনীর খেলোয়াড়দের গোলযোগ ছিলো শায়েস্তা করার একটি ইস্যু মাত্র।

১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে লেঃজেঃহোম এরশাদ একাধারে সেনাপ্রধান ও তৎকালিন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের খ্যাতিমান ফুটবলার মনোয়ার হোসেন নান্নুকে প্রথমে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ঘোষণা করে আবার তা পরিবর্তন করে মোহামেডানের গোলরক্ষক শহিদুর রহমান সান্টুর নাম ঘোষণা  করা হয়। এতে জাতীয় দলে থাকা আবাহনীর খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ করে জাতীয় দলের হয়ে ব্যাংক এশিয়ান গেমস্ ফুটবলে যেতে অস্বীকার করেন। তখন ফুটবল দল নিয়ে মহাসংকট তৈরী হয়। সংকট উত্তরণে তৎকালীন জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ও  বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সেনাপ্রধান লেঃজেঃহোম এরশাদ আবাহনী ক্লাবে গিয়ে খেলোয়াড়দের অনুরোধ করেন ফুটবলারদের দলে ফিরে আসতে। কিন্তু তার অনুরোধ আবাহনীর কেউ রাখেননি বরং এরশাদকে আবাহনীর খেলোয়াড়েরা নানা কথা শোনিয়ে দেয়। এতে এরশাদ অপমানবোধ করেন। তাই সুযোগ পেয়েই সেই দিনের অপমানের প্রতিশোধ নিতে তার নির্দেশেই খেলোয়াড়দের জেলে পাঠানো হয়েছিলো এমনটাই বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ফুটবলার সালাউদ্দিন ফুটবল থেকে অবসর গ্রহন করলে এরশাদ বঙ্গভবনে তাকে সম্বর্ধনা দেন এবং নামমাত্র মূল্যে রাজধানীর বনানীতে ফুটবলার সালাউদ্দিনকে রাজউকের একটি প্লট উপহার দিয়েছিলেন। এরশাদ সরকারের শাসনামলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিভিন্ন পদে তার অনুগত অনেক সেনা অফিসার ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসাররা দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানতে পেরেছিলাম নানা তথ্য। সেনা অফিসারদের অনেকেই জানিয়েছিলেন, দেশে সামরিক শাসন চলাকালে এ ধরনের বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় না দেয়ার জন্যই তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের কাছে গোলযোগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠে।যাতে করে দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের কোন মহল সুযোগ নিতে না পারে। শাসকদের ক্ষমতার বলির পাঠা হয়েছিলেন দেশ সেরা তারকা ফুটবলাররা।