image

পুলিশের ভয়ে নদীতে ঝাপ দিয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা

image

মাত্র চৌদ্দ পনেরো বছরের কিশোরী স্বর্ণা। পড়ালেখার অনেক সখ ছিলো তার। নিয়মিত নামাজ পড়তেন।চলাচল ছিলো পর্দানশীন।  শান্ত স্বভাবের মেয়ে স্বর্ণা। কোনদিন কারো সঙ্গে ঝগড়া বা উচু গলায় কথাও বলতো না। এমন মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত মা রীনা বেগমের আহাজারিতে আশেপাশের প্রতিবেশীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার হাজারীবাগের কুলাল মহল লেনের স্বর্ণার নানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো এমন শোকাবহ দৃশ্য। 

স্বর্ণার মা আহাজারি করছিলো আর বলছিলো, আমার মেয়ের ফুপু-দাদী ও চাচারা জুলুম অত্যাচার আর মেয়েকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে জীবন দিতে বাধ্য করেছে। স্বর্ণার চাচা-ফুফু, ফুফুর ছেলে এবং শান্তি মিলেই আমার মেয়েকে খুন করেছে। আমি এই খুনীদের বিচার চাই।এই বলেই বার বার আহাজারি করছিলেন।

স্বর্ণার খালা জানান, বুধবার রাতে ৬ নাম্বার কুলাল মহল লেনে স্বর্ণাকে তার চাচা বাবলু, ফুফুরা গালাগালি করেন।ঝগড়ার এক পর্যায়ে দাদীর সঙ্গেও চুলোচুলি হয়। এতে দাদী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শিকদার মেডিকেল চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখানেও স্বর্ণাকে সবাই বকাবকি করে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখায়। এতে স্বর্ণা ভীতু হয়ে সেখান থেকেই বছিলা ব্রীজের উপর থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ঝাপ দেয়।ব্রীজের উপর পরে থাকা তার স্যান্ডেল দেখেই সবার সন্দেহ হয় নদীতে ঝাপ দেয়ার বিষয়টি।

শুক্রবার বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদীর নবাববাড়ি ঘাট এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে সদরঘাট নৌ থানার পুলিশ। এরপর স্বর্ণার ভাই জিসান ও মামা আমজাদ তার লাশ সনাক্ত করে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত স্বর্ণার মামা আমজাদ জানান, আমরা শনিবার ময়নাতদন্তের পর লাশ দাফন করে মামলা করবো কিনা সিদ্ধান্ত নিবো।

জানা গেছে স্বর্ণা হাজারীবাগ নতুন রাস্তায় অবস্থিত হাজী ইয়াসিন বানু উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলো।

স্কুলের সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, মেয়েটি অত্যান্ত শান্ত প্রকৃতির ছিলো।

স্বর্ণার পিতার নাম আতিকুল্লাহ। স্বর্ণারা তিন ভাই বোন। বড় বোনের নাম রুপা আর ভাইয়ের নাম জিসান। তাদের বাড়ি ৬ নাম্বার কুলাল মহল লেন।

এদিকে কুলাল মহল লেনে এই কিশোরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

স্হানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিষ্পাপ কিশোরীকে ঝগড়া হলেও পুলিশ দিয়ে ধরেয়ে দেয়ার ভয় দেখানো তার চাচা ও ফুফুদের উচিৎ হয়নি। যে মেয়ে নিয়মিত নামাজ পড়ে, বোরকা পড়ে স্কুলে যায়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেও বের হয় না, এমন মেয়েকে পুলিশের ভয় দেখানোর কারণে হয়তো মানসিকভাবে ভীত হয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলো। যা দুঃখজনক।