image

হযবরল উদ্ভট টিকা কার্যক্রমে নাকাল চট্টগ্রামবাসী

image

করোনা টিকা গ্রহণে নিবন্ধন সম্পন্ন করার পরও দীর্ঘ সময় ধরে এসএমএস না আসা, যেদিনের টিকা নেয়ার কথা সেদিন রাতের বেলা এসএমএস পাওয়া, নির্দিষ্ট দিনে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা স্বল্পতায় ফেরত আসা, টিকা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা অনৈতিক সুবিধার মধ্য দিয়ে টিকা প্রদান করা, কাউন্সিলর তথা সরকারি দলের নেতাদের বিশেষ টোকেনে টিকা দেয়াসহ নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার পর রয়েছে টিকা সনদে ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ হওয়ার মতো হযবরল ও উদ্ভট কার্যক্রম। দুই ডোজ সম্পন্ন হওয়ার পরও সাময়িক সনদ ইস্যু হওয়ার মতো জটিলতায় জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের বাসিন্দা আয়শা খাতুন (৭৪) ও তার মেয়ে জান্নাতুল কাউছার (৩৯)করোনা টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন ১১জুলাই। টিকা কেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল নির্বাচন করেছিল তারা। দীর্ঘ ১মাস ১২দিন পর এসএমএস আসলে ২১ আগস্ট তারা প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেন। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার প্রাক্কালে টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ হিসেবে ২১ সেপ্টেম্বর সিল করে দেয় বন্দর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

মা মেয়ে দ্বিতীয় ডোজের নির্দিষ্ট তারিখ এবং এসএমএস এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর, বুধবার রাত ৭.৫২মিনিটে আয়শা খাতুনের মোবাইলে এসএমএস আসে আজ আপনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের দিন। এনআইডি ও টিকা কার্ড সঙ্গে এনে টিকা গ্রহণ করুন। একসপ্তাহ আগে তাও রাত প্রায় ৮টার সময় টিকা গ্রহনের এসএমএস পেয়ে দ্বিধায় পরে যান তিনি। কারণ ৭দিন আগে রাতের বেলায় তিনি টিকা গ্রহণ করতে কোথায় যাবেন, এমন শঙ্কায় তিনি কিছুটা চিন্তিত হলেও টিকা নিতে যাননি। 

এদিকে নির্দিষ্ট ২১ আগস্টের দিনও মেয়ে জান্নাতুল কাউছারের টিকা গ্রহণের এসএমএস না আসায় টেনশনে পরে যান উভয়েই। কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টিকা কার্ডে স্পষ্ট সীল করে দেয়া হয়েছে এসএমএস না আসলে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের জন্য আসা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে মা আয়শা খাতুনকে নিয়ে টিকা দিতে গেলে মেয়ে জান্নাতুল কাউছারও টিকা নিয়ে নেন। কিন্তু আয়শা খাতুনের টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের সীল করা হলেও মেয়ের কার্ডে কোন সীল করা হয়নি।কিন্তু দু’জনেই টিকা দিয়ে বাসায় চলে আসেন।

দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ শেষে আয়শা খাতুনের মোবাইলে এসএমএস আসে আপনার টিকার দুটি ডোজই সম্পন্ন হয়েছে, সুরক্ষা অ্যাপস থেকে আপনার টিকা সনদ গ্রহণ করুন।কিন্তু মেয়ের মোবাইলে এ ধরণের কোন এসএমএস আসেনি। এমতাবস্থায় জান্নাতুল কাউছার সংশয়ে পরে যান তার টিকা সম্পন্ন হয়েছে কি হয়নি এ বিষয়ে। আয়শা খাতুন তার টিকা সনদ নিতে গিয়ে দেখেন তার প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের তারিখ উল্লেখ আছে ২৯জুলাই অথচ তিনি প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২১ আগস্ট। অপরদিকে আয়শা খাতুনের মেয়ে সনদ গ্রহণের এসএমএস না পেলেও দুটি টিকা সম্পন্ন করায় সনদের বিষয়টি চেক করেন। সেখানে তিনি দেখেন তার প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের তারিখ উল্লেখ আছে ২২ সেপ্টেম্বর অথচ তিনি সেদিন নিয়েছিলেন দ্বিতীয় ডোজ। আর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের তারিখ খালি রাখা হয়েছে। কিন্তু সনদের ক্যালকুলেশনে দু’টি ডোজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

এ বিষয়ে জান্নাতুল কাউছার বলেন, আমি ২১ আগস্ট প্রথম ডোজ নিয়েছি এবং ২২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছি। অথচ সনদের বিস্তারিত বিবরণে প্রথম ডোজ দেখানো হচ্ছে ২২ সেপ্টেম্বর আর দ্বিতীয় ডোজ খালি। কিন্তু পরিসংখ্যানে আবার দু’টি ডোজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ আছে। যদি দু’টি ডোজই সম্পন্ন হয়ে থাকে আমার সনদে “সাময়িক সনদ“ লেখা থাকবে কেন? এ বিষয়ে কোথায় গেলে আমার এ সমস্যার সমাধান পাবো আমি জানি না। তাদের ভুলের খেসারত আমাদেরকে দিতে হবে কেন? তিনি এরকম প্রশ্ন রাখেন এ প্রতিবেদকের কাছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের কনসালটেন্স ডা. নারায়ন চন্দ্র দাশ বলেন, এটা আসলে সার্ভার জটিলতার কারণে হচ্ছে। আমরা টিকা সম্পাদনের পর যখন এন্ট্রি দিতে যায়, তখন সার্ভার সমস্যাজনিত কারণে দ্বিতীয় ডোজকে প্রথম ডোজ হিসেবে দেখাচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ২৮দিন পর পুনরায় এন্ট্রি দিয়ে এটা সংশোধন করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সার্ভার জটিলতায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতবড় কর্মযজ্ঞে এ ধরণের ছোটখাট ভুলত্রুটি হতেই পারে। তাছাড়া জনবল সংকটতো রয়েছেই। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বিষয়টিতে দায়িত্বশীলদের যত্নবান হওয়ার তাগিদ দিবো। সিটি কর্পোরেশনের অধীন হওয়ায় তিনি বিষয়টি তাদেরকে অবগত করবেন বলেও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করে না পেয়ে পরে এসএমএস দেয়ার পরও তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে দায়িত্বশীলরা সার্ভার ত্রুটির কথা বললেও জনগণ এটাকে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম হিসেবে দেখছেন। উপরের ঘটনাটি কেবল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ জাতীয় ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে জনগণের দাবি। অনেকে টিকা না নিয়েও সনদ পাওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

জানতে চাইলে ক্যাব চট্টগ্রামের নাজের বলেন, ভাই এগুলো ছোটখাট ভুল বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এটা দায়িত্বহীনতার মধ্যেই পড়ে। এতবড় কর্মযজ্ঞই যদি হবে, সেটি চালাতে গিয়ে কি ধরণের প্রস্তুতি থাকা দরকার তা কি সংশ্লিষ্টরা জানতেন না ? এখন সবকিছুই সার্ভারের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা চলছে। সেই সাথে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাতো আছেই।

আগ্রাবাদের এক বাসিন্দা জানে আলম বলেন, দুই মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে নিবন্ধন করেছি কিন্তু এখনও এসএমএস আসেনি, তাই টিকাও নেয়া হয়নি। নিবন্ধনকারীদের টিকা না দিয়ে গণটিকা কেবল লোক দেখানো ও অব্যবস্থাপনার চরম উদাহরণ বলে তিনি দাবি করেন।