image

লোডশেডিংয়ে বাঁশখালী অন্ধকার, থামছেনা মানুষের হাহাকার

image

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা একটি জনবহুল জনপদ। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছেও বাঁশখালীতে সভ্যতার চাকা খ্যাত বিদ্যুতের লুকোচুরিতে অতিষ্ট এ অঞ্চলের লোকজন। যুগের পর যুগ চলে যায়, পরিবর্তন আসেনি খামখেয়ালি বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের সেবার মানের। এমনিতেই গ্রীষ্মের প্রখরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাঁশখালীতে লোডশেডিং বেড়ে যায় চরমাকারে। এখন সারাবছর জুড়ে পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজি যেন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ইদানিং পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৯৮ হাজার গ্রাহক। এ অঞ্চলের মানুষ নিত্য লোডশেডিং এ ভোগছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন চরমভাবে অতিষ্ট। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় আজও বিদ্যুৎতের চরম হেয়ালীপনা থেকে রেহায় পায়নি বাঁশখালীবাসী। রাত আর দিন বলে নেই কোন তফাৎ, বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা। পুরো বছর জুড়েই বিদ্যুতের লুকোচুরি থাকে অস্বাভাবিকভাবে। বিদ্যুৎতের এহেন লুকোচুরি খেলায় মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে আছেন বাঁশখালীর লোকজন। দিনের অধিকাংশ সময় থাকে না বিদ্যুৎ। একটু বাতাস আর বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা দেখা নেই বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের।

সারাদিন গাছ কাঁটার অভিযোগে আর ঝড়বৃষ্টির সময়ে লাইনের সমস্যার দোহাই দিয়ে টানা ৭-৮ ঘন্টার বেশী সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে অতিষ্ট করে রাখে জনপদের লোকজনদের। এমনকী গভীর রাতেও বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলেই চলে। সামান্য বৃষ্টিপাতে, হালকা বাতাসেও বিদ্যুৎ চলে যায় দীর্ঘ বিরতীতে।কখনো নোটিশ দিয়ে, কখনো নোটিশ ছাড়া গাছ কাঁটার অভিযোগে পুরোদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখে কতৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোস্যাল এক্টিভিটিসদের মতে, বর্তমানে বাঁশখালীর প্রধান সমস্যা বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজি। যার দরুণ বিদ্যুৎ নির্ভর সরকারি, বেসরকারি দপ্তরের সেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও নিস্তার নেই। এই মাত্র বিদ্যুৎ আসে, এই মাত্র চলে যায়। বছর যেতে না যেতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।

পল্লীবিদ্যুৎ অফিসসূত্রে জানা যায়, আবাসিক-অনাবাসিক সহ প্রায় ৯৮ হাজার গ্রাহকদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিটি-১ জোনাল অফিস সহ উপজেলার নাপোড়া, জলদী, বৈলছড়ি, গুনাগরি ৪ টি সাবস্টেশন রয়েছে। লোকবল কম থাকায় অনেক সময় বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগে। তাই বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে একটু দেরী হয়। তাছাড়া দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৬ কি.মি অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। সড়কে গাছপালা থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার ফলে বৃষ্টি-বাদলের সময় সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। সামনে কালবৈশাখীর প্রভাবে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাতে অনাখাংকিত ঘটনার সৃষ্টি না হয় তাই গাছপালা কেটে দেওয়াতে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে।

সরকারী-বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বিরতিহীন সেবা দিতে গিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাংখিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা। ঘনঘন লোডশেডিং যখন নিত্য রুটিনে পরিণত হয়েছে তখন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে অনেকে দু'টাকার ম্যাচ নিয়ে এক কাঠিতে এগিয়ে আছে। ঘরে ঘরে, সোলার সিষ্টেম, আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার লাইট-ফ্যান, মোমবাতি, কেরোসিন নিয়ে প্রস্তুত থাকেন বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছ্বল পরিবার গুলো। সুপেয় পানির জন্য বিদ্যুৎচালিত মোটরের উপর নির্ভর করে হাজার হাজার লোকজন। এতে লোডশেডিং থাকায় ভোগান্তির অন্ত থাকেনা গৃহকর্ত্রী থেকে শুরু করে সবার।

পল্লীবিদ্যুতের স্বেচ্ছাচারিতাকে অনেকেই নিরীহভাবে মেনে নিয়েছেন। তারা সংশ্লীষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও মিলছেনা কোন সমাধান। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পল্লীবিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে আশুপ্রতিকার চান আবার অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে।

বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন আগে ঝড়-বৃষ্টি হলে আমাদের লাইনের সমস্যা হয়েছিল। যার দরুণ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটেছে। অপ্রতুল জনবলের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগায় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে বাঁশখালীতে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তা নিয়ে কোন সংকট নেই। বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনগুলো গাছপালার সাথে থাকাতে ঝড়বৃষ্টির সময় ও বাতাসে ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে সাময়িক অসুবিধার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে বিদ্যুৎ বাঁশখালীতে আসাতে ওখানেও কোন সমস্যা হলে তার প্রভাবও বাঁশখালীতে পড়ে তাই লোডশেডিং হয়ে থাকে।