image

আত্মসমর্পণের পরও ইয়াবা পাচার থামছে না

image

উখিয়া-টেকনাফের মানুষ মনে করেছিল ইয়াবা ও মাদক কারবারি আত্মসমর্পন করলে ইয়াবা ও মাদকের চালান বন্ধ হয়ে যাবে। শাস্তি ফিরে আসবে উখিয়া-টেকনাফের ঘরে ঘরে। কিন্তু অনেক কিছুর পর টেকনাফে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পন করলেও বন্ধ হয়নি ইয়াবা ব্যবসা। মার্চ মাস টেকনাফে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি,পুলিশ,র‌্যাব ও কোস্টগার্ডসহ আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও গত মাসে বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন নিহত হয়েছে এবং ১৩ জন মাদক কারবারিকে আটক করা হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিজিবি। আটক এসব ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ২০০ টাকা। এসব ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ২০টি মামলায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

অরপরদিকে মার্চ মাসে উখিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে ২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে আটক হয়েছে ২জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে ৪০টির মতো মাদক মামলা রুজু করা হয়েছে উখিয়া থানায়। এর থেকে বোঝা যায়, ইয়াবা ও মাদকের চালান কোন ভাবেই কমেনি। বরং আগের তুলনায় চলছে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-১) এএসপি মো. কামরুজ্জামান। ব্রিফিংয়ে জানান, নৌপথে ইয়াবার একটি বড় চালান ঢাকায় আসছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছিল। অভিযানে ৮ লাখ পিস ইয়াবাসহ তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন এএসপি কামরুজ্জামান।

সুত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২২ অথবা ২৩ তারিখ দ্বিতীয় ধাপে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের চুড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে। অপরদিকে আত্মসমর্পণকৃত ১০২ জন ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আবেদন করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণের দিন টেকনাফ মডেল থানায় দায়েরকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিআর ৯৮/২০১৯ এবং জিআর ৯৯/২০১৯ মামলা ২ টি প্রত্যাহারের আবেদন করেছে পুলিশ। আত্মসমর্পণের আগে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো আদালতে স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে। আত্মসমর্পণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিশ্বস্ত সুত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সুত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণে আগ্রহী প্রায় অর্ধশত ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে একটি জায়গায় তারা নিজেরা জড়ো হয়েছে। সুবিধামতো নির্ধারিত তারিখে এরা আত্মসমর্পন করবেন। এতে উখিয়ার কোন ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ী আছে কিনা প্রশাসন জানাতে পারেনি।

উখিয়াবাসির অভিযোগ, গেল বার আত্মসমর্পনে উখিয়ার কোন ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীর নাম না থাকার আমরা হতভাগ হয়েছি। কারণ টেকনাফের পাশাপাশি উখিয়ায় ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীর কমতি নেই। কিন্তু আত্মসমর্পন কেন তারা নেই এই হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। এবার দ্বিতীয় ধাপে আত্মসমর্পন হতে যাচ্ছে এতেও এ পর্যন্ত উখিয়ার কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী না শোনা যায়নি। তাছাড়া হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও উখিয়ার কোন ব্যক্তি নাম আত্মসমর্পনের তালিকা নেই।

সচেতন মহলের অভিমত উখিয়া-টেকনাফে যে সমস্ত ইয়াবা গডফাদার রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা না হলে কখনো আত্মসমর্পনের মধ্যদিয়ে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাবেনা। কারণ টেকনাফে কড়াকড়ি আরোপ হলে রুট পাল্টিয়ে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার চালিয়ে যাচ্ছে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। যার ফলে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।উখিয়ার গডফাদাররা হলেন,ঘিলাতলী গ্রামের ফয়জুর রহমানের ছেলে যে এক সময় মাইক্রোর হেলপার ছিল বর্তমানে কোটি টাকার মালিক মোঃ শফি,তার বড় দুই যোগ ধরে পানের দোকান করে সংসার চালাচ্ছে।সেখানে শফি দুই তিন বছরের ভিতরে নামে বেনামে গাড়ি, বাড়ি,দোকান,ব্যাংক ব্যালেন্জ, সহ কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছে।স্হানীয়রা জানান,আইনশৃংখলা বাহিনী যদি তদন্ত পূর্বক ইয়াবার গডফাদার শফিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।খয়রাতির আরেক গডফাদার মাহমুদুল হক,বর্তমানে উখিয়ার আদালত ভবনের পেছনে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে জায়গা কিনে বাসা ভাড়া দিয়েছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, উখিয়ায় শ্রীঘ্রই ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করা হবে। তবে ইতিমধ্যে ২জন ইয়াবা ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং ২জন গডফাদার গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিয়েছে।