image

কর্ণফুলীতে এনজিও সংস্থার কাজ নিয়ে প্রশাসনের কাছেও তথ্য নেই!

image

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী’ উপজেলা স্বীকৃতি পাবার দু’বছর ২৮ দিন পার হতে চলেছে। দীর্ঘ ২ বছরেও উপজেলায় এনজিওদের নিয়ে কোন মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি উপজেলায় কতটি এনজিও (নন গর্ভমেন্টাল অরগানিজেশন) কাজ করছে প্রশাসন ও পরিষদের কাছে তার সঠিক কোন তথ্যও নেই। সবকটি এনজিও কর্ণফুলীতে কি কি বিষয়ে কাজ করছে তারও ব্যাখা পাওয়া যায়নি। 
ফলে পুরা উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এনজিও’র  প্রতিনিধিগণ তাদের সমস্ত কার্যক্রম সবার সামনে উপস্থাপন না করেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন। এত গণমানুষের উপকার হচ্ছে না ক্ষতি হচ্ছে তা ও নিশ্চিত নয়! কেন না বিগত দুবছরে এদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

অপরদিকে এনজিওদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা না হওয়ায় এনজিওদের কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে পরিচালনা হচ্ছে কিনা কিংবা তদারকি ও দিকনির্দেশনার কোন সুযোগ নেই উপজেলা  প্রশাসনের।  এ বিষয়ে উপজেলায় থাকা সকল এনজিও’কে এক ছাতার নিচে আনারও পরার্মশ দেন সচেতন মহল।

যদিও মাঠে অভিযোগ উঠেছে, উপজেলায় কর্মরত নানা  এনজিওদের  বিরুদ্ধে নীতিবহির্ভ‚ত কর্মকাÐের। জেলায় তালিকাভুক্তির সময় বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ করার অঙ্গীকার করলেও পরে অধিকাংশ এনজিও মাঠে নিজেদের স্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত রয়েছে।

এ অবস্থায় বহু এনজিও আর্থসামাজিক উন্নয়নের বদলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণাসহ নিয়মবহির্ভ‚ত কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও  ইন্ধন, সাধারণ মানুষের অর্থ নিয়ে হঠাৎ উধাও হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট মহলের  প্রশ্ন, এনজিও গুলো আর কতকাল তদারকির বাইরে থাকবে। এনজিও খাতকে দেখার কি কেউ নেই?

এ বিষয়ে তদারক ও তত্ত্বাবধানের জন্য কর্ণফুলী উপজেলায় কাজ করা সকল এনজিওকে এক ছাতার নিচে আনা  প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সম্প্রতি, কর্ণফুলীতে সঞ্চয় করা ও ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছে সোস্যাইল অ্যাসেসিয়েশন অব সোসাইটি ‘সাস’ নামে এনজিও সংস্থা।  গ্রাহকেরা এনজিও অফিস ঘেরাও করেও লাভ হয়নি। বদনামের বেশিরভাগই ছড়াচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো। সাধারণ মানুষের উচিত একটু সচেতন হয়ে অর্থ লেনদেন করা। যেসব এনজিওর সঙ্গে অর্থ লেনদেন হচ্ছে, তাদের সঠিক রেজিস্ট্রেশন আছে কি-না তা জেনে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর কার্যক্রমের  প্রতি প্রশাসনের আরও বেশি নজরদারি থাকা প্রয়োজন। সাথে জনপ্রতিনিধিদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার কথা জানান। 

জেলা প্রশাসক হতে উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কর্ণফুলীতে এনজিও’র কাজের কোনো নজরদারি নেই। ফলে অনেক এনজিও কার্যত তদারকহীনভাবেই তাদের স্বেচ্ছাচারী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বদলে জঙ্গি সংগঠনে অর্থের জোগান দিচ্ছে কিছু এনজিও। এনজিওর নামে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা অনুদান এনে তা জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যয় করারও নজির দেশে রয়েছে। 

এনজিও গুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে সরকার এনজিও নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইন তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। আইনে যে সংস্থা থেকে এনজিও গুলো নিবন্ধিত হোক না কেন, দেশের সব এনজিও তদারকি করতে একটি সামাজিক নিরাপত্তা কাউন্সিল (সোশ্যাল সিকিউরিটি কাউন্সিল) গঠন করার বিধান রাখার প্রস্তাব ছিল। এসব কর্মপরিধির মধ্যে ছিল এনজিও গুলোর অর্থের উৎস এবং ব্যয়ের খাত, নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সব শর্ত অনুসরণ করা হচ্ছে কি-না ইত্যাদি। 

কাউন্সিল কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কাছে তৃণম‚ল পর্যায়ে থাকা এনজিও গুলো  প্রতি মাসে তাদের কার্যক্রমের ওপর রিপোর্ট দেবে। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে এনজিওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে প্রশাসন। কোনো এনজিওর কার্যক্রম সন্দেহজনক হলে উপজেলা প্রশাসন যে কোনো সময় ওই এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। 

কিন্তু আইন অমান্য করে এবং সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে উপজেলায় চলছে কয়েক দশক এনজির ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। কর্ণফুলীতে কাজ করা এনজিও’দের মধ্যে রয়েছে রিক, ব্রাক,নিষ্কৃতি, ইমেজ, ঘাসফুল, পদক্ষেপ, আশা, প্রত্যাশার আশা, টিএমএস, উদ্দীপন সহ অনেকে। এছাড়াও প্রশাসনের অজান্তে জরিপ সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে কর্ণফুলীতে  ‘গুগল হরাইজন্স জেন্ডার সার্ভে বাংলাদেশ ও পিডিএস সহ কয়েকটি এনজিও। অনেক এনজিও আবার বিদেশে টাকা পাচার সহ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত। 

এসব এনজিও‘র কার্যক্রম নিয়ে আবার বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সমবায়ের অনুমোদন নিয়ে বিধি লঙ্ঘণ করা, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধন না নেওয়া, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি (এমআরএ) সনদ না নিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা, নিয়মিত জেলা প্রশাসক কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল না করা এবং কার্যালয়ে মাসিক মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকা।

ফলে, অনিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত এনজিও‘গুলো কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জনগণের টাকায় নিজেরা ফুলে-ফেঁপে উঠছেন। ফলে এ সকল এনজিও এবং মাল্টিপারপাসের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এসব সমস্যা নিরসণে উপজেলা প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান কর্ণফুলী চরপাথরঘাটা এলাকার একাধিক সামাজিক সংগঠনে সভাপতি হারুনুর রশিদ পাটোয়ারী ও মুসা সিকদার। 

কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরীর সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

তবে এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, কাজ করা সব এনজিওর বিষয়ে সব তথ্য এখনো জমা হয়নি। তবে দ্রæত সময়ে উপজেলায় কাজ করা সকল এনজিও’দের রির্পোট করতে বলা হচ্ছে। এরপর নিয়মিতভাবে মাসিক সমন্বয় সভা ও মনিটরিং এবং পর্যবেক্ষণ করা হবে।