image

দোহাজারীতে ৬২ বছর বয়সেও কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন বৃদ্ধা ছালমা খাতুন

image

কৃষক বললে এখনো বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন পুরুষের ছবিই অধিকাংশ মানুষের চোখে ভেসে ওঠে। তবে গ্রামে বসবাসরত প্রতিটি নারীই নিজ নিজ পরিবারে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। প্রত্যক্ষভাবে কৃষিজমিতে কাজ করা নারীর সংখ্যা কম হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক নারীকে এই খাতে শ্রম দিতে হয়। হতদরিদ্র, অসহায় ও  ধারদেনা করে চলা পরিবার চালিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন কাজে অংশ নেন। নারীদের এই রোজগার পরিবারের অভাব অনটন ঠেকাতে সহায়তা করে।

তেমনই একজন নারী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া এলাকায় বসবাসরত কৃষি শ্রমিক বৃদ্ধা ছালমা খাতুন। ৬২ বছর বয়সেও তাঁর দুঃখের যেন কোনো শেষ নেই।

চার সদস্যের পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খনদী তীরের চরে সবজি ক্ষেতে হাড়ভাঙা খাটুনির পর যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

প্রখর রৌদ্রতেজ উপেক্ষা করে কাজ করার সময় শঙ্খচরে কথা হয় ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধা নারী ছালমা খাতুনের সাথে।

আলাপকালে জানা যায়, গত ১০ বছর আগে ছালমা খাতুনের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান ইউছুফ আলী মারা যায়। এর দুই বছর পর স্বামী জরিফ আলীও মারা যান। এরপর একমাত্র কন্যা হোসনেআরা  ও মৃত ছেলের দুই সন্তান মোঃ জিহান উদ্দীন এবং মোহাম্মদ হৃদয়কে নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

জীবিকার তাগিদে বেছে নেন কৃষি শ্রমিকের মত হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ। প্রতিদিন খুব ভোরে ক্ষেতে চলে যান। ক্ষেত তৈরি করা, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, চারাগাছ বাড়ার সময় পরিচর্যা করাসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে হয়। একসময় কৃষি কাজে লজ্জা ও কষ্ট হলেও এখন আর তেমন লজ্জা হয় না তবে কষ্ট সয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটায় বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরী ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলেও অর্থাভাবে ভাঙাচোরা ঘরটি দীর্ঘদিন যাবত মেরামত করতে না পারায় বর্ষা মৌসুমে ঘরে থাকতে খুব কষ্ট হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘরে বিবাহযোগ্যা একটি মেয়ে আছে। কৃষি শ্রমিকের কাজ করে যে মজুরি পাই তা দিয়ে চার সদস্যের পরিবারের আহার যোগাবো নাকি ঘর মেরামত করবো।

এ বছর বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থাভাবে মেয়েকে অষ্টম শ্রেণীর বেশি পড়াতে পারিনি। বিবাহযোগ্যা মেয়েকে ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিতে গেলেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পিতৃহীন দুই নাতি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে এখন রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন। যে বয়সে তাদের হাতে থাকার কথা বই, খাতা ও কলম সেই বয়সে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে পরিবারের হাল ধরতে হচ্ছে এতিম দুই শিশুকে। ভাঙাচোড়া ঘরটি মেরামত করতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন অসহায় বৃদ্ধা কৃষি শ্রমিক ছালমা খাতুন।