শঙ্কা, ভয়, আতঙ্ক নিত্যসঙ্গী এখন!। গত পরশু আমার এক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট করলেন, যেন এ ব্যাপারে কিছু লিখি! ভেবে দেখলাম, সত্যিইতো!! আমি শিক্ষক হিসেবে আমারও কিছু দায়বদ্ধতা আছে।
দু'দিন আগে হোক আর দু'দিন পরে হোক করোনার তাণ্ডব হয়তো থেমে যাবে। জীবন তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। পরের হিসেবটা আমাদের এখন থেকেই করতে হবে।
আমার মতে, এই দুঃসময়ে একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় কাজ হবে ঘরের কাজে মা-বাবাকে হেল্প করা। স্বাভাবিকভাবে পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে হয়তো তা হয়ে ওঠেনা। কিন্তু এই অফুরন্ত সময়ে মা-বাবার কিছুটা হলেও কাজে হাত লাগিয়ে আশীর্বাদ অর্জন করা অনেক বড় পূণ্যার্জন হবে আশা করি।
শিক্ষার্থীরাই জাতির ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে তাদেরকেই দেশের হাল ধরতে হবে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বকল্যাণে কাজ করবে তারাই। তাই চলমান দীর্ঘ ছুটিকালীন পড়ালেখাকে ও ছুটি দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে একজন মনীষীর উদাহরণ টানছি আমি ----
জ্ঞান বিজ্ঞানের অসংখ্য শাখায় সুগভীর পাণ্ডিত্য অর্জনকারী বিখ্যাত জ্ঞানতাপস "আল বেরুনি" মৃত্যু শয্যায় শায়িত। এ সময় তাঁর এক বন্ধু তাঁর সাথে দেখা করতে আসলেন। বেরুনি" এ অবস্থায় তাকে প্রশ্ন করে বসলেন গণিত সম্পর্কে। প্রশ্ন শুনে বন্ধুটি বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বললেন, তুমি এ অবস্থায় ও নতুন কিছু জানতে চাচ্ছ?!! বেরুনি" বললেন, প্রশ্নের সমাধান জেনেই মৃত্যু সুধা পান করা উত্তম নয় কি?? বন্ধুটি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই "আল বেরুনি" মৃত্যু বরণ করলেন।।
সুতরাং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পড়ালেখা করে জ্ঞানার্জন করাই জ্ঞানীর কাজ।
আমাদের এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দেখতে হবে সন্তান যেন কোন কিছুতে আসক্ত হয়ে না পড়ে। বর্তমানে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, ট্যাব,মোবাইল ফোন আমাদের পরিবারেরই একটা অংশ বলে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন আসক্তি চলে না আসে এসবের প্রতি।
মনোবিদদের মতে, আসক্তির ফলে ঘুমের সমস্যা হবে, ঘুম পরিপূর্ণ না হলে মস্তিষ্কের অপরিপক্কতা তৈরি হতে পারে। শরীরে দেখা দিতে পারে নানা প্রতিকূলতা। পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার আসতে পারে। মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হতে পারে।
এ প্রতিকূলতা থেকে রেহাই পেতে আমার মতে সুস্থ ধারার গান শোনা, ভালো মানের সুস্থ ধারার মুভি দেখা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা বিষয়ক কন্টেন্ট দেখার ব্যাপারে আমরা ওদের উদ্বুদ্ধ করতে পারি।
করোনাকালীন এ সময়টা আসলে শিক্ষার্থীদের খাঁটি জ্ঞান অর্জনের, মনের আনন্দে পড়ার এক বিশাল সুযোগ করে দিয়েছে বিধাতা। যদি মূল বইটা পড়া হয়ে যায় দেখা যাচ্ছে ওদের এক ধরণের চোখ খুলে যায়। জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত হয়ে যায় তখন। যা পড়েছে, চিন্তা করেছে সেগুলোর ওপর বাংলা ও ইংরেজি যার যেটা ইচ্ছা, কিছু টপিক লিখতে দিলে ওরা মনের আনন্দে লিখে ফেলার চেষ্টা করবে বলে আমি আশাবাদী। তাতে ওদের লেখার ক্ষমতা বাড়বে, সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে, পরীক্ষায় মুখস্তের অভ্যাসও কমে যাবে বলে মনে করি। আর এভাবে দীর্ঘ গৃহবন্দিত্বের সময়ও কেটে যাবে।
ভয়, উৎকন্ঠা ও উদ্বেগকে প্রশ্রয় না দেয়ার পক্ষে ওদের কাউন্সেলিং করতে হবে। মানসিকভাবে সবাইকে স্ট্রং থাকতে হবে। এটাই একমাত্র মেডিসিন বলে আমি মনে করি।
করোনাকে ভয় নয় বরং সচেতনতা এবং আন্তরিকভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা অবলম্বন করার মাধ্যমে আমাদের নতুন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবেই। নিশ্চয়ই দুঃসময় একদিন দূর হয়ে সোনালি রঙিন আলো আসবে। ততদিন সাবধানে থাকি সবাই। নিজে বাঁচি, অন্যকে ও বাঁচাতে এগিয়ে আসি।।
লেখকঃ সুলতানা কাজী (নীলু) , শিক্ষিকা, অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
Developed By Muktodhara Technology Limited