image

কক্সবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্প অনলাইনে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

image

কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেছেন তিনি।

আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, মুজিব বর্ষে এটা হলো আমাদের প্রতিশ্রুতি।

তিনি বলেন, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, মুজিব বর্ষে এটা হলো আমাদের প্রতিশ্রুতি। আজ ৬০০ উদ্বাস্তু পরিবারকে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হলো। বাকি যারা আছেন তারাও পর্যায়ক্রমে ফ্ল্যাট পাবেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কক্সবাজার প্রান্তে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কানিজ ফাতেমা আহমদ এমপি, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আযাদ, সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি এথিন রাখাইন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ প্রশাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত পাঁচ তলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। সব ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার। প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।

শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত ভবন : খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি। এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল।

প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্প এলাকায় ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে। এছাড়া থাকবে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, পুকুর-খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। প্রকল্প এলাকায় একটি শুঁটকি মহালও থাকবে এবং এখানে পর্যায়ক্রমে বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তুলবে সরকার।

প্রকল্পের ভবনগুলোর নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রেখেছেন। ভবনগুলো হলো—দোলনচাঁপা, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, ইনানী ও সাম্পান।

২০১৯ সালে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের এই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার কথাও উল্লেখ করেন প্রকল্প পরিচালক।

প্রসঙ্গত, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবার ঘর পেয়েছে। অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্র পাকা ও আধাপাকা দালানের ব্যারাক আকারে তৈরি হলেও বহুতল ভবনের আশ্রয়ণ প্রকল্প এটিই প্রথম।

প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটি অত্যন্ত নয়নাভিরাম একটি জায়গা। এই জায়গাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য মাটিকে অনেক উঁচু করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের নিচের তলায় কোনও ফ্ল্যাট রাখা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হলে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকারও আশঙ্কা নেই।