image

চায়নিজরা দেশের ব্যাটারী শিল্পকে ধ্বংস করে দিচ্ছে : পান্না গ্রুপের এমডি লোকমান হোসেন

image

ব্যাটারী আর সিসা, সিসা আর ব্যাটারী। এ দুইটি বিষয় নিয়েই তিনি নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গবেষণা করেন।আর এই গবেষণাই তার জীবনে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এনেছেন জীবনে এক বিরাট সফলতা। তার জীবন জীবিকার সাফল্যের কারনে দেশ-বিদেশে শত শত মানুষ ও পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে উঠেছে পান্না গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত স্টোরেজ ব্যাটারী ফ্যাক্টোরি।

দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারী কারখানাগুলো যখন একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখন পান্না গ্রুপের ব্যাটারী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ৭০টি দেশে রপ্তানি করে চলেছে। চলতি মাসেই শেষ হলো পান্না গ্রুপের আটটি বিভাগীয় ব্যাটারী পরিবেশকদের সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে উঠে আসে ব্যাটারী শিল্পের নানা সমস্যার কথা।

দেশের ব্যাটারী শিল্পের সফল ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানালেন, এই মাসে আমরা ৮টি বিভাগের সম্মেলন শেষ করেছি। ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলোর কথা আমরা শুনেছি। মূলতঃ চায়নিজরাই আমাদের ব্যাটারী শিল্প ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী টুরিস্ট ভিসায় চায়নিজদের এনে তাদের মাধ্যমে নিম্নমানের নকল ব্যাটারী তৈরী করছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে পাশাপাশি এই চায়নিজরা অবৈধভাবে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করছে, যার ফলে আমাদের ব্যাটারী শিল্প ও দেশের অর্থনীতির ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

মাত্র আট বছর বয়স থেকেই সিসা আর ব্যাটারী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন লোকমান হোসেন। পড়াশোনায় উচ্চ শিক্ষা তিনি গ্রহন করতে না পারলেও ছোটবেলা থেকেই সিসা আর ব্যাটারী নিয়েই কাজ করায় তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে রয়েছে সিসা আর ব্যাটারী জগতের রহস্যময় অভিজ্ঞতা। তিনি একজন বিজ্ঞানীর চেয়ে কোন অংশে কম নন। সিসা দেখেই পরীক্ষা না করে বলে দিতে পারেন এর মান কী, এর মধ্যে কী পরিমাণ অন্য ধাতু মিশ্রিত রয়েছে। যার ফলে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে তিনি আজ শুধু দেশেই প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি নন দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ব্যাটারী রপ্তানি কারকও।

লোকমান হোসেন বলেন, আমরা জার্মান প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের একমাত্র পরিবেশ বান্ধব ব্যাটারী উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছি দেশকে। আমরা দেশের জন্য কাজ করছি, শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে আমাদের ফ্যাক্টরিতে।করোনাকালীন সময়েও আমরা ফ্যাক্টরি বন্ধ করিনি। যে শ্রমিকদের ঘামে বিদেশে ব্যাটারী যায়, তাদের পরিবারগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমরা তাদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রেখেছি।

তিনি বলেন, আজ ব্যাটারী শিল্পের নেই কোন নিদিষ্ট শিল্প এলাকা বা ইপিজেড।

তিনি কামরাঙ্গীরচরে থাকা তাদের ফ্যাক্টরীর প্লটগুলো জরুরী ভিত্তিতে শিল্প প্লট হিসেবে ঘোষণা করে আমাদের ব্যবসায়ীক সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানান।

তিনি বলেন, আমরা নিজেদের চেষ্টায় আজ এখানে এসে দাড়িয়েছি। দেশের অনেক বড় বড় ব্যাটারীর ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে।চায়নিজরা নিম্নমানের ব্যাটারী তৈরী করে গ্রামগঞ্জের বাজার সয়লাব করে দিচ্ছে। নিম্নমানের ব্যাটারী ব্যবহার করে দেশের গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে।

লোকমান হোসেন বলেন, আমরা ধীরে ধীরে বিশ্ব বাজারে এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের ব্যাটারীর গুণগত মান ও যোগ্যতায়।

তিনি বলেন, জাপানের বিখ্যাত কাওয়াসাকি গাড়ী কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে ব্যাটারী নিচ্ছে।

এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে আমাদের তৈরী ব্যাটারী যাচ্ছে, যা দেশের জন্য গৌরবের বিষয়। তিনি দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় ব্যাটারী শিল্পের সমস্যা গলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।